নিউজ

লণ্ডনে সপ্তাহের ব্যবধানে পৃথক ২ বইমেলা: বিভাজন নিয়ে নানা প্রশ্ন

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ২০ সেপ্টেম্বর : লণ্ডনে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ব লণ্ডনের বাঙালি পাড়ার দুটি পৃথক ভেন্যুতে দুদিন করে অনুষ্ঠিত হয় এই দুই বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব। প্রথমটি “১৪তম লণ্ডন বাংলা বইমেলা” এর আয়োজক ছিলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকে এবং এটি অনুষ্ঠিত হয় গত ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর ব্রাডি আর্টস সেন্টারে। দ্বিতীয়টি “১১তম বাংলাদেশ বইমেলা সাহিত্যি-সাংস্কৃতিক উৎসব” এর আয়োজক ছিলো সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য এবং সেটি অনুষ্ঠিত গত ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর মাইলএণ্ডের আর্ট পেভিলিয়নে। দুটোইতে মোটামুটি লেখক, পাঠক ও সাহিত্য-সংস্কৃতিমোদীদের উপস্থিতিতি ছিলো। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বোদ্ধা মহলের আলাপ-আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে। তাদের অনেকের প্রশ্ন— বিলেতে ছোট্ট কমিউনিটিতে সাহিত্য-সংস্কৃতির এই সুকুমারবৃত্তিতেও কেন এই বিভক্তি ও বিভাজন? এবং তাও মাত্র সপ্তাহের ব্যবধানে? অনেকের মতে, এক হয়ে সবাইকে সম্পৃক্ত করে করলে তাতে আরো প্রাণের সঞ্চার ঘটার পাশাপাশি তা বৃহৎ নির্মল উৎসবে পরিণত হতে পারতো।

পৃথক তথা বিভাজিত হয়ে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপনের এই ধারা গত কয়েক বছর থেকে চলে আসছে। অথচ যারা এখন দুটি অনুষ্ঠান করছেন, তারা একসময়ে একই সাথে ছিলেন। কিন্তু কেনইবা বিভক্তি— রাজনৈতিক বিবেধ, নাকি অর্থনৈতিক টানাপড়েন, নাকি স্বচ্ছতা— এ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। একসময় তারা একই প্ল্যাটফর্ম থেকে এ মেলার আয়োজন করতেন। মেলায়ও প্রাণ ছিল। ছিল অনেকটা সার্বজনীনও। এমনকি বাংলা একাডেমি কয়েক বছর প্রবাসী লেখকদের নামে বাংলা একাডেমি পুরস্কারও দিয়েছে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, দুপক্ষই বলছেন বাংলা একাডেমির সমর্থন আছে দুটিতেই। তাছাড়া বইমেলাগুলোকে সহযোগিতা করা বাংলাদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেন-ই বা এই বিভাজন দেখেও না দেখার ভান করে, তাও অনেকের বোধগম্য নয়।
অনেকের মতে, বইমেলা একাধিক হলে কোনো ক্ষতি নেই, কিন্তু বৃটেনের পাঠক কিংবা বই বিক্রির বিষয়ে প্রায় সবাই ওয়াকিবহাল। তারপরও কেন এই বিভাজন? কী আছে এই কাদা ছোড়াছুড়ি ও বিভাজনের আড়ালে-আবডালে? — এসব প্রশ্ন থেকেই যায়। এই বিভাজনের কারণে বৃটেনের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাধারণ মানুষগুলোর মাঝেও এ নিয়ে একটা দ্বিধা কাজ করে। স্বাভাবিকভাবে লণ্ডনের বাইরের শহরগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে বলে অনেকে মনে করেন।
কবি-সাহিত্যিকদের অনেকে বলতে চেয়েছেন— দুই গ্রুপের কে ‘রাইট’ আর কে ‘রং’ সেই বিতর্কে যেতে চাই না। তাই বলে সবকিছুকেই গ্রুপিং আর ডিভিশন করতে গিয়ে বই মেলাতেও একই অবস্থা।
এছাড়া বাংলাদেশ হাইকমিশন মেলা দুটিতেই আজব কাণ্ড ঘটিয়েছে। মেলা দুটির বিশাল স্থান নিয়ে বইয়ের পসরা সাজিয়েছিলো তা ছিলো জাদুঘরের মতো শুধু দেখিয়া নয়ন জুড়ানোর জন্য। তাতে সাইনবোর্ড ঝুলছিলোÑ “কেবল প্রদর্শনীল জন্য”। আর বইয়ের তালিকায় কেবল শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার বাইরে বাংলাদেশের কোনো প্রসিদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত লেখকের বই স্থান পায়নি। হাইকমিশনের এমন কাণ্ড নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা।
এদিকে, মেলা দুটিতে যথারীতি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার প্রধানের উপদেষ্টা, মন্ত্রী-এমপি, বৃটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বাংলাদেশ থেকে আগত কিছু প্রকাশনীও তাদের বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলো।

গত ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম বইমেলার উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এছাড়া অতিথি ছিলেন বর্তমান সরকার প্রধানের উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, বিশিষ্ট শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় এবং বৃটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম।
১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বইমেলার উদ্বোধন করেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী লেখক নুরুন্নবী।
প্রথমটিতে সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। দ্বিতীয়টিতে সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লেখক সম্মাননা প্রদান করা হয় কবি হামিদ মোহাম্মদকে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close