নিউজ

হৃদরোগে আল্লামা সাঈদী’র মৃত্যু না হত্যা, সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল হইচই

  • চিকিৎসককে হত্যার হুমকি!
  • জানাজায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু।
  • সাঈদী’র জন্য দোয়া চাওয়ায় ইমাম গ্রেপ্তার।
  • সাঈদী’র ছেলেসহ ৫ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা।
  • সাঈদী’কে নিয়ে ভিডিও করায় গণঅধিকারের নেতা মশিউর গ্রেপ্তার।
  • সাঈদী’র জানাজায় বাধা-হামলা, জামায়াতের দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা

।। সুরমা প্রতিবেদন।।

লণ্ডন, ১৬ আগস্ট: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র মৃত্যু হয়েছে নাকি পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। ফেইসবুকে বিতর্ক হচ্ছে, তোলপাড় হচ্ছে।

কেউ বলছেন, ‘এটা সরাসরি হত্যার শামিল, জুডিশিয়াল কিলিং এর পর এটি হলো মেডিকেল কিলিং! জেলখানায় বন্দি মাওলানা সাঈদীর যে শারীরিক পরিস্থিতি হয়েছিল এমন অবস্থায় কর্তৃপক্ষের প্রথম কর্তব্য ছিল তাঁর পরিবার বর্গের কাছে চিকিৎসার দায়িত্ব অর্পন করা! এমতাবস্থায় পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে না দিয়ে সরকার জঘন্যতম কাজটি করেছে। তাছাড়া চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন প্রাক্তন এক ছাত্রলীগ নেতা। পুরো বন্দিকালীন সময়ে, বিশেষভাবে শেষ সময়ে চিকিৎসায় অবহেলাটি স্পষ্ট হয়েছে! এটা সরাসরি হত্যার শামিল। জুডিশিয়াল কিলিং এর পর এটি হলো মেডিকেল কিলিং! জেলখানার এবং চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিত করে রাখুন। এদের বিচার এই বাংলার মাটিতে ইনশাআল্লাহ হবে!’ কেউ আবার লিখছেন ‘ সরকার সাঈদী হুজুরের হার্ট এট্যাক হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার করে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে, সাঈদী হুজুরকে অসুস্থই মনে হয়নি যখন গাড়ি থেকে নামলেন খুব হাস্যজ্জ্বল দেখা গিয়েছিল। হাসপাতালের এক নার্সের গোপন ভিডিওতেও সাঈদী হুজুরকে একদম স্বাভাবিক দেখা গিয়েছিল, বসে বসে সব দেখছিলেন। হুজুর যদি সত্যিকারে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতেন তাহলে হাসপাতালের বিছানায় এভাবে বসে থাকতে পারতেন না। হুজুরের চিকিৎসা চলাকালে একজন নার্স বলেই ফেলেছেন, “স্যার ইনজেকশন দেওয়ার কিছু সময় পরই হুজুর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে”, যা ইতিমধ্যে পুরো হাসপাতালে চাউর হয়ে গেছে। মেরে ফেলা হবে এজন্যই পরিবারের কাউকেই দেখা করতে দেয়া হয়নি।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় গত দু‘দিন ধরে এটাই এখন ট্রেন্ড। যার নাম ‘আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু না হত্যা’। অনেকে আবার আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে। মাওলানা সাঈদীর এই মেডিকেল কিলিংটি সম্ভবত একটা টেস্ট কেইস! সরকার এটিকে হজম করতে পারলে সামনে আরও বড় টার্গেটটি নিয়ে অগ্রসর হতে পারে। সেটা হতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া- এই নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের পর পোস্ট করছেন। তাতেও যেন থামছে না আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার হইচই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র মৃত্যুতে যে শোকবার্তা দিয়েছেন সেই পোষ্টটিতে গত ২৪ ঘন্টায় ১৫০ হাজার লাইক, ২৫ হাজার মন্তব্য এবং ৬.১ হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘মওলানা সাহেবের গতকালের চেহারার সাথে আজকের মৃত্যু সংবাদ মেনে নেওয়া কঠিন! মিলছে না। রহস্য তো কিছু একটা আছেই। আলেমুল গায়েব একমাত্র জানেন কী ঘটেছিল! না কি জুলুমের শাসনের বিদায়ের আগে দিল্লির শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করলো? প্রত্যেককেই চলে যেতে হবে। কিন্তু তারপরও কথা থাকে- কে কিভাবে চলে গেলেন? উনার শারীরিক অবস্থা জেল কতৃপক্ষের অজানা ছিলোনা। কিন্তু দু’দিন ধরে উনাকে যেভাবে এদিকে সেদিকে টানা হ্যাচড়া হচ্ছিল, তাতে অবহেলাজনিত মৃত্যুর সন্দেহ উড়িয়ে দিতে পারছি না। একবার তাজউদ্দীন হাসপাতাল, সেখান থেকে আবার জেলে, আবার পিজি হাসপাতালে নেয়া হলো। উনি হার্টের রোগী ছিলেন, ৫টি রিং বসানো আছে আগে থেকেই। তাই হার্টের হাসপাতালে না নিয়ে অন্য জায়গায় নেয়ার কি কারণ? যে ডাক্তারকে দেখানো হয়েছে, তাকে যারা চিনেন – প্রশ্নবিদ্ধ!’ আরেকজন লিখেছেন,’আল্লামা সাঈদী সাহেবকে হত্যাকারী পিজি হাসপাতালের প্রভোস্ট ডা.এস এম মোস্তফা জামান। সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডার ছিল। এই কুলাঙ্গার শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের অন্যতম নেপথ্য নায়ক  ছিল। হিংস্র প্রকৃতির ডা.এস এম মোস্তফা জামান এখন স্বাচিপের অন্যতম নেতা। সে এখনো আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা.মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের ক্যাডার এবং বর্তমানে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা উপ কমিটির অন্যতম সদস্য। ইনজেকশন পুশ করে সাঈদী সাহেবকে হত্যার খবর জানাজানি হওয়ার পরে ডা. মোস্তফা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সে থানায় জিডি করে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইতে হবে। আর এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে পালাতে দেয়া যাবে না।’ অন্য আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুর আগে বিএসএমএমইউতে (সাবেক পিজি হাসপাতালে) সর্বশেষ চিকিৎসা দিয়েছেন ডা. এস এম মুস্তফা জামান। ডা. মুস্তফা একজন মুজিব-সেনা! বাড়ি গোপালগঞ্জে, জন্ম ১৯৬৯ সালে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেছেন। ব্যাচ কে-৪৪। তিনি ছাত্রজীবনের ছাত্রলীগও করতেন। চাকরিরত অবস্থায় শ্যামল দত্তদের সাথে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নিয়ে থাকেন ডা. মোস্তফা। তবে তার বক্তব্যে মনে হচ্ছে, যা করার ইনজেকশনের মাধ্যমেই করেছেন! তিনি কি কি চিকিৎসা দিয়েছিলেন, কি করেছিলেন, কি করে এমন ঘটনা ঘটালেন – নিবিড় তদন্ত প্রয়োজন। আর হৃদরোগে অসুস্থ হওয়ার পরে কার নির্দেশে কোন্ সিদ্ধান্তে সাঈদী সাহেবকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে না নিয়ে বিএসএমএমইউতে আনা হয়েছিল সেটাও জানা প্রয়োজন। জবাব চাই। জবাব পেতে হবে।’

নেটিজেনরা যেভাবে সামাজিক মাধ্যমকে মঞ্চ করে আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে এক-একরকম খবরের ‘অ্যাঙ্গেল’ বের করছেন, ঠিক তেমনি তাঁদের করা পোস্ট থেকেও বেরিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর সব অ্যাঙ্গেল। একজন বলছেন,’ আজকাল গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির সন্দেহজনক মৃত্যু হচ্ছে। বিএনপি নেতা তরতাজা যুবক নাসিরুদ্দিন পিন্টুকে চিকিৎসা না দিয়ে জেলখানায় হত্যা করা হলেও বলা হয়েছিলো  ‘হার্ট অ্যাটাক’! লেখক মোশতাক আহমেদকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মারা হলেও বলা হয়েছে, ‘হার্ট অ্যাটাক’! মিশরের প্রেসিডেন্ট মুসরিকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেলে পুড়ে অসুস্থতা, এবং অতঃপর জেল থেকে বের করে আদালতে নিতেই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হলো! ভারতে নির্বাসিত শেখ হাসিনা দেশে ফেরার দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করা হলো! ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি দল ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সাথে বৈঠক করে ঘুরে আসার পরপরই আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রহস্যজনক অসুস্থতা এবং হাসপাতালে আনার পরই হার্ট অ্যাটাকে রহস্যজনক মৃত্যু হলো! একটার সাথে আরেকটার কি যোগসূত্র আছে? আমার স্পষ্ট মনে আছে সাঈদী সাহেবের বিচারের সাথে জড়িত এক কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছিলেন, আউয়াল সাহেব তাদের বলেছেন, দিল্লির নির্দেশ, ওনাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে, তাই রাজাকার না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর নামে কাগজপত্র বানাতে হবে।’ আল্লামা সাঈদীকে নিয়ে করা এই সব পোস্টে পড়ছে অগুণিত লাইক। বইছে কমেন্টের বন্যা। সব ‘অ্যাঙ্গেল’-এর চূলচেরা বিশ্লেষণ করলে সরকারের দিকে আঙ্গুল তোলা এবং সরকারের ইনটেনশন নিয়ে জনগণের প্রশ্ন তোলাটাই স্বাভাবিক।

চিকিৎসককে হত্যার হুমকি

জামায়াত নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। হত্যার একাধিক হুমকি পাওয়ায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে নিজে ধানমন্ডি মডেল থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এ চিকিৎসক। মোস্তফা জামান অভিযোগে উল্লেখ করেন, সাঈদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাকে জড়িয়ে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে অপপ্রচারও করা হচ্ছে। ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিতে তিনটি ফেসবুক গ্রুপ, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের লিংক উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান। ধানমন্ডি মডেল থানার ওসি পারভেজ ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামানকে প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে তিনি থানায় হাজির হয়ে একটি জিডি করেছেন। জিডিতে তিনি ফেসবুক গ্রুপ ও ম্যাসেঞ্জারে হুমকির বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। এ ঘটনা তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

গায়েবানা জানাজায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার চকরিয়ায় জামায়াতের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুল ইসলাম (৫০) নামে একজন জামায়াতকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ সেখানে কোনো গুলি চালায়নি বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশ। ওসির বক্তব্যের পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে কীভাবে ফোরকান কাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন? এদিকে গায়েবানা জানাজা ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র হাতে যুবলীগের এক নেতার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার সকাল থেকে ওই যুবলীগ নেতার গুলি করার ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ছবি ও ৩৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল পৌর শহরের মহাসড়ক দিয়ে পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে যাচ্ছে। ওই সময় বেলাল উদ্দিনকে হেলমেট পরা অবস্থায় গুলি করতে দেখা যায়। মিছিলে ৬০ থেকে ৭০ জন ছিলেন। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র ও লাটিসোঁটা হাতে দৌড়াচ্ছেন। প্রথম সারিতে অস্ত্র হাতে চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন, পাশে তাঁর ভাই প্রবাসী মিরাজ উদ্দিন। তাঁদের পেছনে আরও ১০-১২ জন আছেন। তাঁদের মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরীকেও দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে যুবলীগের নেতা বেলাল উদ্দিন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়তে অনুমতি দেয়নি উপজেলা প্রশাসন। এরপর তিনবার জানাজার স্থান বদল করা হয়। সর্বশেষ চকরিয়া পৌরসভার নামারচিরিংগা এলাকার মামা-ভাগিনার মাজার-সংলগ্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা পড়ার সিদ্ধান্ত হয়। জানাজা পড়তে বিকেল চারটার দিকে মানুষ মামা-ভাগিনার মাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। আবার অনেকে ফেরত আসছিলেন। ওই সময় বায়তুশ শরফ সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢোকেন চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত। ওই সড়ক দিয়ে তাঁদের যেতে দেখে জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষ উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দেন এবং ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা করেন। পরে ২০-৩০ জন হেলমেট ও মুখোশ পরা ব্যক্তি ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশ, মুখোশ পরা ব্যক্তি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে জামায়াত কর্মী ফোরকানুর রহমান নিহত হন। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে চকরিয়ার চিরিঙ্গা পুরাতন জামে মসজিদে এলাকা ও পেকুয়ার বারবাকিয়া বাজারে এই সংঘর্ষ হয়। জানাজায় অংশ নেওয়া লোকজনের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওসি, ইউএনও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এসিল্যান্ডসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি। সহিংসতার একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ফোরকানুল ইসলাম নামে একজন নিহত হন। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ২০ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থক।

সাঈদী’র ছেলেসহ ৫ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এলাকা এবং শাহবাগ মোড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে। সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতাসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জব্বার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন জামায়াতের সহকারী মহাসচিব হামিদুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ওরফে মাসুদ, ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম ও সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। এর আগে গতকাল রাতে সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জামায়াতের ১১৬ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পৃথক মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত সোমবার রাতে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই খবরে জামায়াত-শিবিরের হাজারো নেতা–কর্মী রাতেই বিএসএমএমইউ ও শাহবাগ এলাকায় ভিড় করেন। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক স্লোগান দেন। একপর্যায়ে মিছিল করে তাঁরা শাহবাগ থেকে বাংলামোটর ও শাহবাগ মৎস্য ভবনের মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় শাহবাগের বারডেম ও বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আটকা পড়েন। পুলিশ তাঁদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন তাঁরা। সড়ক না ছেড়ে তাঁরা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। গতকাল ভোরের দিকে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে তাঁর নিজ বাড়িতে নেওয়ার সময় জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা ইটের টুকরা, লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান এবং সরকারি কাজে বাধা দেন। তাঁরা বিএসএমএমইউর ভেতরে সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতিসাধন করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেলও ছোড়েন এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল, সাঁজোয়া যানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সাঈদীর মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিং ভ্যান বের করে আনে। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সাঈদীকে নিয়ে ভিডিও করায় গণঅধিকারের নেতা মশিউর গ্রেপ্তার

জামায়াত নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে ভিডিও করার অভিযোগে গণঅধিকার পরিষদের সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। তাকে এখন ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমরা বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। আমাদের তরুণ নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক একটিভ। তাদের ভিডিও সাধারণ মানুষ দেখেন এবং পছন্দ করেন। যেটা সরকারের জন্য ভীতির কারণ বলে মনে হয়। আমাদের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রত্যেককেই ম্যাসেজ পাঠিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। বলা হয়েছে আমাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। সাঈদীকে ইস্যু করে তারই অংশ হিসেবে মশিউরসহ আমাদের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সাবেক সদস্য মশিউরের বিরুদ্ধে একাধিক পুরনো মামলা রয়েছে। সাঈদীকে নিয়ে লাইভ ভিডিও সম্প্রচার করায় তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত নতুন কোনো মামলা নেই। পুরনো মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সাঈদীর জন্য দোয়া চাওয়ায় ইমাম গ্রেপ্তার

নওগাঁয় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে মোনাজাত পরিচালনাকালে সদ্যপ্রয়াত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জন্য দোয়া চান এক ইমাম। এ ঘটনার পরপর ওই ইমামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়ে পুরনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে নওগাঁ সদর থানা-পুলিশ। এসময় ইমামের সঙ্গে একজন ব্যবসায়ীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ইমামসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পার-নওগাঁ বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি জেলার পত্নীতলা উপজেলায়। অপরজন হলেন- তাজের মোড় এলাকার রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান। জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শহরের পার-নওগাঁ তাজের মোড় এলাকার শহীদ মিনার চত্বরে নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের ব্যানারে দোয়া মহফিল ও খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারবর্গ, শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন । মোনাজাতের শেষ মুহূর্তে এসে ইমাম সদ্যপ্রয়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে দোয়া চাওয়া শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা তাঁকে সাঈদীর জন্য দোয়া চাইতে নিষেধ করেন। পরে নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়ে ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান তাঁকে সাঈদীর মৃত্যুতে দোয়া পাঠের জন্য বলেছেন বলে জানান ইমাম। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে মোয়াজ্জেম হোসেন ও হাফিজুর রহমানকে থানায় নিয়ে যায়। এ বিষয়ে নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান জানান, ‘পূর্বের একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় সন্ধ্যায় তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়। মামলার বাদী পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে ওই মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।’ (সূত্র: মানবজমিন)

সাঈদীর জানাজায় বাধা-হামলা, জামায়াতের দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজায় হামলা, হত্যা এবং গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামাজে জানাজা করতে না দেয়া, বিভিন্ন জায়গায় হামলা এবং ১ জনকে হত্যার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলেন আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মুজিবুর রহমান বলেন, আজ দুপুরে আমরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাজায় হামলা, ফুরকান উদ্দীনকে হত্যা করার প্রতিবাদে, ধর্মীয় অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং সংবিধানে বর্ণিত অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা পরিবর্তে বাধাদান গ্রেপ্তার ও পুলিশিরে গুলিতে আহত করার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বাদ জম্মা সারাদেশে দোয়া এবং বুধবার (২৩ আগস্ট) সারাদেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করা হবে। কেন্দ্রীয় প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাহফুজুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা, লুটপাট, ধর্মান্তরিত করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে তিনি আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। সেই থেকে তিনি কাশিমপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর কারাগারে বুকের ব্যথায় হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে সন্ধ্যায় তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় তাঁকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। রাতভর নানা নাটকীয়তার পরে লাঠিচার্জ, গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ছুড়ে বহু লোক আহত করে আল্লামা সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাঁকে সাঈদী ফাউন্ডেশনস্থ কবরস্থানে বড় ছেলে রফিক বীন সাঈদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close