সম্পাদকীয়

সংঘাতের পথে বাংলাদেশ

এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২৩০৪
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সংঘাতের দিকে গড়াচ্ছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। বিশেষ করে গত ১৮ জুলাই মঙ্গলবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা সেই সংঘাতের আগুনে ঘি ঢালছে। যা ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূল পর্যায়ে। বিএনপির ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, গুলি, টিয়ারগ্যাস ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন ও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এতে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এই সংকট নিরসনে কোথাও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। সরকারি দলের এমন কঠোর অবস্থান দেশের জন্য ভালো বার্তা দিচ্ছে না। নিজেদের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায় আওয়ামী লীগ। আর আওয়ামী লীগের প্রতি অনাস্থা এনে তাদের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না বিএনপি। এ জন্য সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সমমনা দল ও জোটগুলোকে নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনের জন্য তারা এক দফার ঘোষণা দিয়েছে। আওয়ামী লীগও শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনের এক দফা ঘোষণা দিয়ে নিজেদের শক্তি দেখানোর পাশাপাশি কঠোর অবস্থানও জানান দিয়েছে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশে আগামীতে সুষ্ঠু, অবাধ ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিদেশিরা। মার্কিন ভিসা নীতির বিষয়টিতেও এ বিষয়ে স্পষ্ট ছাপ লক্ষ করা গেছে। আর আগামী দিনে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, এ তথ্যানুসন্ধান করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দল এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদলও ঢাকায় রয়েছে। নির্বাচন সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সংলাপ করার চাপ আছে আন্তর্জাতিক মহলেরও। তারা চায়, আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হোক। যদিও সেই সংলাপ নিয়ে দুই দলের রয়েছে প্রবল অনীহা।

নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে দুই দলের এমন মুখোমুখি অবস্থান আগামীর দিনগুলোতে দেশের জন্য খুবই খারাপ সময় বয়ে আনবে। দুই দল অবস্থান বদল না করলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এবং তাতে করে বহির্বিশ্বের অধিকতর হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে করে কারোরই লাভ হবে না। এমনিতেই দেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সচল রাখতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে রাজনীতির সব পক্ষকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অনিবার্য সংঘাত এড়ানোর পথে হাঁটার জন্য সকল রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সব পক্ষকে মেনে নিতে হবে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close