নিউজ

হাসিনা পরবর্তী ৭২ ঘন্টা –

শেখ হাসিনার পতনের পরবর্তী তিন দিন যা হবে এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারকে যা করতে হবে

-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা দেশ ছেড়ে পালাবে।

-হাসিনার অবৈধ সুবিধাভোগকারী কর্মকর্তাদের অনেকেই গা ঢাকা দিবে।

-দেশে গচ্ছিত টাকা ও সম্পদ প্রতিবেশী দেশে পাচারের চেষ্টা করবে অনেকে।

-বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা মানুষ জাতীয় পতাকা উড়িয়ে রাস্তায় ঘুরবে।

– পরাজিত শক্তি দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করবে।

– নতুন সরকারকে প্রথম ২৪ ঘন্টা পুরো দেশব্যাপি কারফিউ জারি করতে হবে।

-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়গুলোকে সবোর্চ্চ সুরক্ষা দিতে হবে।

-আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দিয়ে সারাদেশে সেনা মোতায়েন করতে হবে।

-পালিয়ে যাওয়া ওসিদের দায়িত্ব সাময়িকভাবে সেনা কর্মকর্তাদের দিতে হবে।

-সচিবালয়সহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে কঠোর নিরাপত্তা জারি করতে হবে।

-গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির সাপ্লাই চালু রাখতে হবে।

-প্রতিবেশি দেশ থেকে কোনো দুস্কৃতিকারী যেনো ঢুকতে না পারে, সীমান্তে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

-রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

-অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সরকারের সকল রুটিন কাজ চালু রাখতে হবে।

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

লণ্ডন,২৩ জুন: কবিরা নাকি ভবিষ্যৎ দেখতে পান। নির্বাসিত কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ আজ  থেকে ৪৪ বছর আগে লিখেছিলেন: লাজিম হ্যায় কি হাম ভি দেখেঙ্গে—সব তাজ উছালে জায়েঙ্গে—সব তখ্ত গিরায়ে জায়েঙ্গে (নিশ্চিত জানি, আমরাও দেখব—সব মুকুট ছুড়ে ফেলা হবে—সব সিংহাসন গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে)। মিশরের তাহরির স্কয়ার ও শ্রীলঙ্কার গণ-অভ্যুত্থান দেখে অনেকের হয়তো ফয়েজের এই কবিতার কথা মনে পড়বে। কারও কারও মনে হবে বাস্তব বিদ্রোহ অনেক সময় বোধ হয় কবিতার সৌন্দর্যকেও ছাড়িয়ে যায়। ন্যূনতম সহিংসতা ছাড়াই সকল ব্যারিকেড ডিঙিয়ে ওই দিন তরুণ-তরুণীরা প্রাসাদে ঢুকে পড়েছিলেন। প্রেসিডেন্টরূপী বাদশাহকে তাঁদের তাড়াতে হয়নি। পরিবার ও দলবলসহ তারা নিজেরাই পালিয়েছেন। বাস্তব মানুষ যে সব শিল্পকলার চেয়েও সুন্দরতম কিছু হয়ে ওঠে,এটা হলো ঠিক তেমন মুহুর্ত। এরকমই একটা মুহুর্তের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ। দেশ থেকে নির্বাসিত লেখক ও গবেষক পিনাকী ভট্রাচার্য ‘হাসিনার পতনের পরবর্তী ৭২ ঘন্টা’ শিরোনামে ইউটিউবে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। দেশের মানুষ তাঁর এই বার্তাটিকে লুফে নিয়েছেন। ২৪ ঘন্টায় তাঁরা পিনাকীর এই ভিডিওিটিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেছেন।

‘হাসিনার পতনের সময় এখন সমাগত। তাঁর পতন আর “যদি” বা “কিন্তুর” ব্যাপার নয়। তাকে যে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছেই, তার ইঙ্গিত আমরা চারপাশে দেখতে পাচ্ছি।’ একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার কেবল ক্লিনিক্যালি ডেড নয়, এটা এখন প্রাক্টিক্যালি ডেড। ইট ইজ লাইক ডেড ম্যান ওয়াকিং, অর্থাৎ যেন মরা একটা লাশ হেঁটে যাচ্ছে। এখন এর ধুপ করে মাটিতে পড়াটাই বাকি।

ভোট ডাকাত হাসিনা এবং তাঁর অবৈধ রেজিম দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশের মানুষকে, সমাজকে, অর্থনীতিকে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে খুবলে খুবলে খেয়েছে। আমাদের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, সমাবেশের অধিকারসহ সকল অধিকার নির্মম হাতে কেঁড়ে নিয়েছে। প্রতিবাদ করার আগেই ক্রসফায়ারে মেরেছে কিংবা গুম করে আয়না ঘরে জোরপূর্বক আটকে রেখেছে। বছরের পর বছর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে রেখেছে। শান্তিকালীন সময়ে সর্বাধিক সংখ্যক সেনা অফিসারকে খুন করা হয়েছে তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহে। শাপলা চত্বর রন্জিত হইছে হেফাজতের নিহত সদস্যদের পবিত্র রক্তে। এই দুষ্ট চক্র উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে, প্রকল্প থেকে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। বিভিন্ন দেশে বেগম পাড়া গড়ে তুলেছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে বিচার বিভাগসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে ক্রমাগতভাবে এরা ধ্বংস করে ফেলেছে। সমাজের কোন অংশই আওয়ামী বাকশালী গুন্ডা সন্ত্রাসীদের ভয়ঙ্কর থাবা থেকে রক্ষা পায়নি। ভারতের কৃপা ও অনুগ্রহ লাভের বাসনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশদ্রোহী চক্র। সমস্ত দেশবাসীর মনে ও মুখে আজ একটাই আওয়াজ এক দফা এত দাবী হাসিনা তুই কবে যাবি? হাসিনার পতনের দিন হবে আমাদের মহা মুক্তির দিন। ১৬ই ডিসেম্বরের মতই এই দিনে আমরা আবার প্রাণভরে মুক্তির নি:শ্বাস নিতে পারবো। কিন্তু এই বিজয়ের ফসল কি আমরা ঘরে তুলতে পারবো? নাকি পরিবর্তনের শত্রুরা আমাদের এই মহান বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে দিবেনা?

দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী বাকশালীদের ভয়াবহ শাসনে বাংলাদেশের মজলুম মানুষের মনে প্রচন্ড ক্ষোভ, ক্রোধ এবং অসন্তুষ্টি দিনে দিনে জমে এখন পাহাড়সম হয়ে উঠেছে। স্বভাবতই জনগণ চাইবেন তাদের উপর যারা এতদিন নির্মম অত্যাচার এবং নিপীড়ন চালিয়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক। কিন্তু মানুষের এই চাওয়াটাকে সতর্কতার সাথে ডিল করতে না পারলে এই চেপে রাখা ক্ষোভ অগ্নিগিরির মত ফুঁসে ওঠতে পারে। যদি সমাজের ক্ষুদ্র একটা অংশ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অত্যচারীদের শাস্তি দিতে প্রবৃত্ত হন তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানী সেনারা আত্মসমর্পণ করে বিজয়ের সেই মুহুর্তে কেউ কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলো। যার বিষময় ফল আমরা গত ৫০ বছর ধরে ভোগ করছি।

বিজয় দিবসের দু’দিন পর ১৯৭১-এর ১৮ ডিসেম্বর কাদের সিদ্দিকী ঢাকায় ৪জনকে দুস্কৃতিকারী বলে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। স্বাধীন বাংলাদেশে এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড সারাবিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। অথচ তার বিচার না করে শেখ মুজিব কাদের সিদ্দিকীকে বলেছিলেন -“তুই ৪জনকে মেরছিস। ৪শ’ জনকে মারলেও আমি তোকে কিছু বলতাম না।”

ফলে, এই ধরণের হত্যাকান্ড পরবর্তীতে চলতেই থেকেছে। আমরা যদি আগের মত এবারও আইন নিজের হাতে তুলে নেই, তাহলে এই দুষ্টক্ষত বা ক্যান্সারটি ভবিষ্যতে আরও বেশি বিস্তার লাভ করবে। যার জন্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। আমরা কিন্তু আবার দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারবো না ধংসস্তুপ থেকে। কারণ সে মহান পরিবর্তনের সুযোগে এই পরিবর্তনের যারা শত্রু সে পরাজিত শক্তি তাদের দেশি বিদেশি দোসরদের সাথে দেশে বড় ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আমাদের প্রতিবেশী একটা দেশ নাক গলানোর সুযোগ খুঁজবে। আমাদের অর্জন বিসর্জনে পরিণত হবে।

আমাদের সবাইকে আগে থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সে কারণেই এই আলাপটা এত আগে থেকেই শুরু করছি। সুতরাং হাসিনার পতনের মুহুর্ত থেকে আমাদের চরমভাবে সতর্ক থাকতে হবে যেনো দেশের শান্তিশৃঙ্খলা কোনভাবেই ব্যাহত না হয়। এবং কেউ যেনো আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়।

তিনি বলেন, বিশেষ করে হাসিনা পরবর্তী ৭২ ঘন্টা হবে সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল। যখন পুরো দেশটা থাকবে আইসিইউ বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা হবে এই সময়টাতে দেশে যেনো কোন গোলযোগ না হয়, তা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটা করতে হলে আমাদের এখন থেকেই ধারণা করতে হবে, হাসিনার পতনের মুহুর্ত থেকে আমাদের জন্য প্রধান প্রধান চ্যালেন্জ কী হতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদেরকে চারটা প্রধান চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে হবে। আমি আজকে থেকেই আপনাদেরকে এই চারটা  চ্যালেন্জের বিষয়ে সতর্ক করে দিতে চাই।

প্রথমত: হাসিনাযুগ অবসান হওয়ার সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা পালাবে। সেইসাথে পালাবে জেলা পর্যায়ের কিছু পুলিশ অফিসার ও দেশের অধিকাংশ থানা ওসিরা। আমাদের বড় অগ্রাধিকার হবে যেনো আইনশৃ্ঙলা পরিস্থিতি কোনভাবেই ভেঙে না পড়ে।

দ্বিতীয়ত: বিগত ১৫ বছর প্রশাসনের শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিরবিচ্ছিন্নভাবে হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের তাবেদারী করেছে, এবং বৈধ ও অবৈধভাবে সকল প্রকার সুযোগ নিয়েছে। এইসব কর্মকর্তাদের অনেকেই গা ঢাকা দিবেন। দেশ ছেড়ে পালাবেন।  ফলে সচিবালয় থেকে শুরু করে জেলা ও থানাসহ স্থানীয় প্রশাসনে সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হবে প্রশাসন যাতে স্বাভাবিকভাবে চলে সেটা নিশ্চিত করা।

তৃতীয়ত: আমাদের অর্থনীতির একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী বাকশালী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। এদের হাত বিস্তৃত হয়ে আছে কলকারখানা ও ব্যাংক থেকে শুরু করে দোকান-পাট, পণ্যের মজুদ, পরিবহন ইত্যাদি সকল সেক্টরের উপর। পরিবর্তনের ফলে এরা নিস্ক্রিয় হয়ে গেলে অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে যেতে পারে। এরকম অবস্থায় আমাদের তৃতীয় অগ্রাধিকার হবে আমাদের অর্থনীতির চাকা চালু রাখা।

চতুর্থত: একটা দেশ অভ্যন্তরীণভাবে যদি সংকটে পতিত হয় তবে বাইরের শক্তি তার ষোল আনা সুযোগ নেবার চেষ্টা করে। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এমনিতেই চ্যালেন্জের মধ্যে আছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর যাতে কোনরকম আঘাত না আসে। আঘাত এলে যেনো আমরা সফলতার সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম হই।

লেখক ও গবেষক পিনাকী ভট্টাচার্যের এই ভাবনার সাথে সহমত পোষণ করে অসংখ্য মানুষ তাকে সাধুবাদ জানিয়ে ভিডিওতে কমেন্ট করেছেন। সচেতন নাগরিকদের একজন কমেন্ট করেছেন, ঔদ্ধত্যের হাতে জিম্মি নাগরিক আত্মমর্যাদা রক্ষায় মানুষ অনন্তকাল রাজনৈতিক নেতৃত্বের অপেক্ষায় না–ও বসে থাকতে পারেন। যেকোন সময়, যেকোন মুহুর্তে মিশরের তাহরির স্কয়ার ও শ্রীলঙ্কার গণ-অভ্যুত্থানের মত গণ-অভ্যুত্থান দে্শে ঘটিয়ে ফেলতে পারেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close