সম্পাদকীয়

তরুণ ভোটারদের হাতেই সমাধান

এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২৩০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত সোমবার তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এই আইনের আওতায় এখন আমাদের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশে ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করা হয়। তখন থেকে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে আসছে। পরে স্মার্ট এনআইডিও ইসির ব্যবস্থাপনায় হয়। এখন নানা ধরনের সেবা পেতে নাগরিকদের এনআইডি প্রয়োজন হয়। এখন এই এনআইডি যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনে যাবে তখন একজন মানুষকে হয়রানি করা স্বৈরাচারী সরকারের জন্য খুবই সহজ হবে। আশংকা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিভিন্ন মামলার অজুহাতে দেশের মানুষের মৌলিক, মানবিক ও সংবিধানিক অধিকার হরণ করবে। এর মাধ্যমে বিরোধী দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা তাদের ভোটের অধিকার হারাবে।

কার্যত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসেই হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতীয় পরিচয় পত্রের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়ে নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ভোটার তালিকাও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। পাসপোর্টের মতো করে তারা এখন জনগণের এনআইডি কার্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা/ আটকে রাখা ইত্যাদি অপকৌশলের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি করবে। হাসিনা স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার অনেক আগেই কেড়ে নিয়েছে। এখন স্বাধীনভাবে ভোটার হওয়ার অধিকারও আর থাকবে না।

দেশের তরুণদের মধ্যে আমরা সবসময় একটা সম্ভাবনা দেখতে পাই। আমাদের তরুণরাই দেশের সকল পরিবর্তনের রূপকার। তরুণদের স্বপ্নগুলো সম্ভাবনা সৃষ্টি করে আর সেখান থেকে আমরা আশাবাদী হবার মতো আগামীর বাংলাদেশকে দেখতে পাই। মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর ভোটারদের অধিকার নিয়ে দেশে-বিদেশে সচেতনতা ও জোয়ার তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দেশের তরুণ ভোটাররা জেগে উঠেছে। সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কয়েক মিলিয়ন প্রবাসী তুর্কি বিপুল উৎসাহে তাদের তাদের দূতাবাসগুলোতে গিয়ে ভোট দিয়েছে ।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর বিলেতের বাংলাদেশি কমিউনিটি ভিত্তিক অন্যতম বৃহত্তম মানবাধিকার সংগঠন “নিরাপদ বাংলাদেশ চাই” দেশের জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলাতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তারুণ্যে নির্ভর ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোর সমাবেশে হাজার হাজার তরুণ দলবেঁধে রাস্তায় নামছে।

তরুণদের হাতে আছে সর্বাত্মক চাপ প্রয়োগের অসাধারণ ক্ষমতা। ভোটের অধিকার নিয়ে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে তরুণরাই পারে রাজনীতিকদের বাধ্য করতে। কারণ তারুণ্যের শক্তির বাইরে কোন রাষ্ট্র শক্তি চলমান থাকতে পারে না। এভাবে দেশে বিদেশে তরুণরা জেগে উঠলে দেশে বিপ্লব হবে। ইতিহাস তরুণদের গড়ে না, বরং তরুণরাই ইতিহাস গড়ে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close