নিউজ

হাসিনার সামনে শুধুই অন্ধকার 

। । বিশেষ প্রতিবেদন ।।

** যুক্তরাজ্যে ৪মাসে ৪ অর্থমন্ত্রী-  ঢাকায় লোটাস কামাল কোথায়? ** বরিসের স্বেচ্ছাচারিতার জের টানছে যুক্তরাজ্য- ১৪ বছরে ফোকলা বাংলাদেশ ** রাজনীতি কূটনীতি ও প্রশাসন সর্বত্র লাল কার্ড

লন্ডন, ২০ অক্টোবর। স্বেচ্ছাচারিতা একটা দেশের জন্য কত ভয়াবহ হতে পারে, তার দুই উদাহরণ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য। চলতি শতকের প্রথম দশকে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও অর্থনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে বিশ্ব মন্দা উভয় দেশ মোকাবেলা করেছে সফলভাবে। কিন্তু এবারের মন্দ শুরুর আগেই কুপোকাত উভয় দেশ। উভয় দেশেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতার চরম মূল্য দিতে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য গণতন্ত্রের ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর থাকায় ৪ মাসে ৪ অর্থমন্ত্রী বদলে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা লক্ষণীয়। কিন্তু বাংলাদেশে স্বেচ্ছাচারিতার শাসন হার মানিয়েছে রাজতন্ত্রকে। ১৪ বছরে একজন প্রধানমন্ত্রী, ২ জন অর্থমন্ত্রী। বিশ্ব যখন বিচলিত ঢাকার অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল তখন শীতনিদ্রায়। কারণ তিনি নিশ্চিত তার প্রধানমন্ত্রীর চাকুরীর মতোই তিনিও মোটামুটি চিরস্থায়ী। তাদের কারোই চাকুরী যাবে না কারণ ভোট ছাড়াই তারা আরও কয়েক বছর বা দশক চালিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। জনগণের সমর্থন দরকার না হলে কেনোইবা তারা বিচলিত হবেন?

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক  সংকটের শুরু ব্রেক্সিট থেকে। বরিস যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইউরোপ থেকে বেরিয়েছেন, তার সব প্রতিশ্রুতি  ইতিমধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। লোকবলের অভাবে উৎপাদন কমেছে। এরমধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু সঠিক পরিসংখ্যান , পার্লামেন্ট ও জনগণের প্রতিদিনের মতামত নিয়ে সরকারকে সংকট মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবার সাত দিন না পেরুতেই ৫৫% ভাগ দলীয় এমপি লিজ ট্রাসের উপর যে তাদের আস্থা হারিয়েছে তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে। দলের এমপি আর সদস্যরা না চাইলে লিজকে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়তে হবে এবং সেটা হবার সম্ভাবনা আছে। এটাই ওয়েস্টমিনস্টার ডেমোক্রেসি। অন্যসবকিছু স্বৈরাচার, এমনকি ফ্যাসিবাদ।

লোটাস কামাল কোথায়?

বাংলাদেশে গত এক দশক এক অর্থে স্বেচ্ছাচারিতার দশক। বিপুল বৈদেশিক ঋণ নিয়ে করা মেগা প্রকল্প দেশে কয়েকশো বিলিয়নেয়ার জন্ম দিয়েছে। কয়েকটি প্রকল্প দেখিয়ে মেগা কমিশনকে হালাল করার চেষ্টা হলেও বাজারের আগুন ১০০ভাগ মানুষকে দগ্ধ করছে। মেগা চুরির জন্য মেগা প্রকল্পের এই দুষ্ট চক্র তৈরী করা না হলে রিজার্ভে সংকট হতোনা, বাজারে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতির জের ধরে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হতোনা। সবচেয়ে বড় সর্বনাশ হয়েছে মেগা প্রকল্পগুলো থেকে মেরে দেয়া ৮০-৯০ বিলিয়ন (আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রামাণ্য হিসেবে ৬৭ বিলিয়ন ডলার, হুন্ডির মাধ্যমে অপ্রাতিষ্ঠানিক পাচার সহ এই অংক ৮০ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়)।  বর্তমান জটিল সংকটের পর আগামী কয়েক দশক বাংলাদেশকে মেগা প্রকল্পের প্রায় ১৩০ বিলিয়নের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করে যেতে হবে। বলা যায়, ফোকলা হয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২/৩ বিলিয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফের কাছে ধর্ণা দিতে হচ্ছে। রপ্তানিমুখী আয় আর প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আর একদফা কমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ডিজেল কেনা বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবেনা। ডলারের বাজারে অস্থিরতায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। গত চার দশকে বেসরকারী খাত এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা বিশেষ করে সরকার বেসরকারী খাতের ১০০ ভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি খোলার যন্ত্রনা ও পরিণতি কোনোটার বেপারেই উদ্বিগ্ন নন।  কারণ সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান রহমান, অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল, চেম্বার নেতা, ঢাকার মেয়র সবার অতীতের রেকর্ড নানা কেলেংকারীর ঘটনায় জর্জরিত। কমিশন বাণিজ্যে পারদর্শী ব্যবসায়ীদের হাতে সরকার চলছে। সুতরাং পরিণতি যা হবার তাই হচ্ছে! 

৫০ ব্যাংক: সুস্থ আছে কয়টি?

এই প্রশ্ন রীতিমতো গবেষণার বিষয়। মি. মুহিত অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিজেই স্বীকার করেছিলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এখন প্রায় সব ব্যাঙ্ক দেউলিয়া। ইসলামী ব্যাংকের মতো অত্যন্ত সমৃদ্ধ ব্যাংককে গিলে খাওয়া হয়েছে। ব্যাংক, ইন্সুরেন্স, শেয়ার বাজার,  এমনকি ই-কমার্সের নাম ই-ভ্যালি, আলিশা মার্ট সহ অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারী দলের  লোকজন  লাখ লাখ যুবক ও পেনশনারদের  সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক সহ সবগুলো রেগুলেটরী কতৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারী সরকার ও তার তান্ডবের কাছে অসহায়, আবার অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাও জড়িয়ে পড়েছে এই সর্বগ্রাসী লুটপাটে।    

যুক্তরাজ্যে থেকে যা শেখার আছে?

যুক্তরাজ্যে জুলাই মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন ঋষি সুনাক, ঋষি সুনাকের পদত্যাগের পর নাদিম জাহাবি, নাদিম জাহাবির পর কোয়াসি কোয়ারতেং এবং সর্বশেষ এ মাসে কোয়াসি কোয়ারতেংকে বরখাস্ত করে জেরেমি হান্টকে  অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। অর্থাৎ এ নিয়ে চার মাসে চার জন ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আস্থা হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী লিজ ট্রাস নির্বাচনী প্রচারে কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর ওপর ভর করেই তিনি কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারতেং দুইজন মিলে বড় ধরনের কর ছাড়ের বিষয়সহ একটি মিনি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।এর প্রভাবে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ধস নামে,ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ  পাউন্ডের রেকর্ড দরপতন হয়। মর্গেজের দাম বৃদ্ধি পায়।পুঁজিবাজারেও অস্থিরতা শুরু হয়। কর ছাড় নিয়ে অভিযোগ উঠে, এই কর হ্রাস করা হয়েছে মূলত ধনীদের জন্য। আবার সেই ছাড়ের অর্থ কীভাবে পূরণ হবে, তার রূপরেখা তিনি দেননি। অফিস ফর বাজেট রেসপনসিবিলিটি থেকে বাজেট বিষয়ে কোনো ধরনের পূর্বাভাস ছাড়াই তিনি বাজেট পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন। সেই অভিযোগেই তাকে বরখাস্ত করা হয়। সংক্ষিপ্ত বাজেট বাতিলের গুঞ্জন ও অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার খবরে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। কোয়াসি কোয়ারতেং বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের যৌথ বৈঠকে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। কিন্তু বৈঠকের মাঝপথে সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি লন্ডনে ফিরে আসেন। লন্ডনে এসে তিনি তাঁর বরখাস্ত হওয়ার খবর শোনেন। সমালোচকরা বলছেন, ‘করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংকট, পাউন্ডের দরপতন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইত্যাদি সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে এমপিদের চাপে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এ অবস্থায় নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে সদ্য নিয়োগ পাওয়া অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারতেংকে বরখাস্ত করে জেরেমি হান্টকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন।‘ এদিকে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির ছায়া অর্থমন্ত্রী র‌্যাচেল রিভস টুইটে বলেছেন, ‘ইতিমধ্যে যে ক্ষতি হয়ে গেছে, শুধু অর্থমন্ত্রী পরিবর্তন করলেই তা পূরণ হবে না। শুধু অর্থমন্ত্রী নয়, সরকারের পরিবর্তন দরকার।’ 

পরিসংখ্যানের গুরুত্ব 

গত আগস্টে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। উৎপাদন ও সেবা খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া খুচরা ব্যবসা, কেশ বিন্যাস ও হোটেল ব্যবসাও মার খেয়েছে। এছাড়া করোনা মহামারীজনিত সরকারি ব্যয় হ্রাস পাওয়ার কারণেও উৎপাদন খাত সংকুচিত হয়েছে।বিশেষ করে ওষুধ কোম্পানিগুলো উৎপাদন হ্রাস করার কারণে উৎপাদন খাতও মার খেয়েছে।সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্টের আগের তিন মাসেও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। অন্যান্য উন্নত দেশের মতো যুক্তরাজ্যও রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলছে, চলতি বছরের শেষ প্রান্তে যুক্তরাজ্য মন্দার কবলে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।ফলে কয়েক মাস ধরে যে মন্দার কালো মেঘ আকাশে  ঘনীভূত হচ্ছে, তা আরও গভীর হলো বলেই বিশ্লেষকেরা  মনে করছেন।লিজ ট্রাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দেড় মাসের কম সময়ের মাথায় প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর  শঙ্কায় পড়েছেন নিজের গদি বাঁচানোর জন্য অর্থমন্ত্রী  কোয়াসি কোয়ারতেংকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েও পার পাচ্ছেন না লিজ ট্রাস‌। নিজ দলের ভেতরেই তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বেশিরভাগ এমপি সরব হয়েছেন।কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতি এখন যেমন বেসামাল অবস্থায় আছে, লিজ ট্রাস কোনোভাবেই এর উত্তরণ ঘটাতে পারবেন না।তাই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।এমপিদের কেউ কেউ আগাম নির্বাচন দেওয়ার দাবিও  তুলেছেন।নতুন বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টও চাপের মধ্যে রয়েছেন।তিন সপ্তাহ আগে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত বাজেটের প্রায় পুরোটাই তিনি বাতিল করে দিয়েছেন।নানা চাপের মুখে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ‘ডেইলি সান’ এ একটি নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি বলেছেন, ‘বাজারের ওপর আস্থা না রেখে আমরা কর ছাড়, উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতির পথে এগোতে পারি না।’ তাঁর এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এখন দুটি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য ধরে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমটি, বাজারের আস্থা ধরে রাখা। দ্বিতীয়টি, নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পতন ঠেকানো। এখন সময়ই বলে দেবে দিন শেষে লিজ ট্রাস কোনটি রক্ষা করতে পারেন।

বরিস যে কারণে দায়ী 

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাগরিকরা এই অবস্থার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকেই বেশি দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কারণ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতই খামখেয়ালি ভাবে দেশ শাসন করছিলেন। টাকা পয়সার কোন হিসাব ছিলো না। এই কারণেই এই ধাক্কাটা এখন আর সামলাতে পারছেন না। যাইহোক, যুক্তরাজ্য সরকার তবু চেষ্টা করছে। চার মাসে চারটা অর্থমন্ত্রী চেন্জ হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার মাত্র দুইজন অর্থমন্ত্রী দিয়ে প্রায় ১৪ বছর শাসন করছে। রাজতন্ত্রে চার মাসে চারজন আর গণতন্ত্রে ১৪ বছরে মাত্র দুই জন। এই হলো বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নমুনা! বাংলাদেশে আজকে যে অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে, ব্যাপক লুটপাটে ব্যাংকগুলো প্রায় ফোকলা হয়ে গেছে, সরকার আইএমএফের কাছে হাত পাতছে, বিশ্ব ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে, চায়নার কাছে হাত পাতছে।আগামী বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৬ শতাংশ হতে পারে এবং মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ৯দশমিক ১শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও খুব শক্তিশালী অবস্থায় নেই। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায়ে ৫,৫০০ কোটি টাকা ঘাটতি পড়েছে। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ে ১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায়ে ২ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। আয়কর খাতেও লক্ষ্যের চেয়ে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে। অথচ জুলাই-সেপ্টেম্বর হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে এডিপির ২০ শতাংশের মতো খরচ বেশি হয়েছে। টানা তিন মাস যদি জিডিপি সংকুচিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে, অশনিসংকেত। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি সরব ও সক্রিয় হওয়ার কথা ছিলো অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের। এই সমস্ত বিষয়ে কথা বলার মত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তিনি কোথায়? কোথায় তিনি কী করছেন? তাঁকে বরখাস্ত করলেও তো টাকা পাচ্ছেন।‘যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘সরকারি পদ ছেড়ে দেওয়ায় আমি মর্মাহত। কিন্তু এভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয়। জনগণ ন্যায়সঙ্গতভাবে আশা করে সঠিকভাবে, দক্ষতার সঙ্গে ও গুরুত্ব সহকারে সরকার পরিচালনা করা হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, এসব মানদণ্ডের জন্য লড়াই করা জরুরি। আর এজন্যই আমি পদত্যাগ করেছি।’বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল কি পদত্যাগ করবেন।

 সামনে শুধু অন্ধকার

রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচার একযুগের বেশী চললে তা কত রকমের পার্শ প্রতিক্রিয়া তৈরী করে, বাংলাদেশ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অর্থনীতির সব নেতিবাচক তথ্যের বাইরে হাসিনার সামনে এখন দেশ-বিদেশ সব দিক থেকেই অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। বিদেশে বন্ধুরা সরে গেছে। তিনি নিজে ও তার মন্ত্রীরা সকাল বিকাল বিদেশী কূটনীতিকদের শাব্দিক অর্থেই গালাগাল দিচ্ছেন। হুশিয়ারী উচ্চারণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র-এফবিআই- জাতিসংঘ কেউই ব্যাড পড়ছেনা। প্রবাসী সাংবাদিকদের আত্মীয় স্বজনকে দেশে জিম্মি করার পর এবার ড. ইউনূসকেও জিম্মি করার চেষ্টা করছেন। তার বিদেশে যাবার উপর নিষেধাজ্ঞা দেবার মতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সচিব আর কর্মকর্তাদের লাইন ধরে চাকুরী খেয়ে হুমকি দিয়েও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছেনা।

সারাদেশ  অন্ধকারে গেলো। ২৪ ঘন্টায় এই অবস্থা। দলের অদক্ষ-অপদার্থ লোকদের দিয়ে চালাতে গিয়ে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সবই সংকটে পড়েছে।২৪ ঘন্টার পর ৪৮ কিংবা ৭২ ঘন্টার সিভিক বিপর্যয়ের আশংকা করার মতো পরিস্থিতিও ইতিমধ্যে তৈরী হয়েছে। তখন কি হবে? সবাইকে জিম্মি করে কি সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে? নাকি চারদিকের অন্ধকারে নিমজ্জিত অতীতের আর দশজন স্বৈরশাসকের মতো একই পরিণতি অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য? 

Tags
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close