খালেদা জিয়া: যেভাবে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের মূর্ত প্রতীক
সম্পাদকীয় ।। ইসু্য ২২৩১
অনেকগুলো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চার দশকের রাজনীতি আর প্রায় ছয় দশকের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল বেগম খালেদা জিয়ার জীবন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর, তাঁর দল ও পরিবারের অবদান ইতিহাসে লেখা থাকবে।
আজ সবকিছুকে ছাপিয়ে খালেদা জিয়া যখন মৃত্যু পথযাত্রী তখন আমাদের সম্পাদকীয় বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায় একথা নির্দ্বিধায় উল্লেখ করা প্রয়োজন- পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়ার কিছু হলে সেটা হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির এক টার্নিং পয়েন্ট। যেহেতু গত চার দশকে তাঁর আপোষহীন সংগ্রাম তাকে এমন এক উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে যেখানে তিনি আজকের অবরুদ্ধ বাংলাদেশের মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।
বাংলাদেশে এখন একটি পরিবার আর তার মাফিয়া সহযোগীদের বাদে আর কারো কোন মূল্য নেই। তাই এই প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক; খালেদা জিয়া যত জনপ্রিয় হোক না কেন, দেশের জন্য তাঁর যতো অবদানই থাকুক না কেন; তাতে তাঁকে চিকিৎসা সুবিধা না দিলে অথবা বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা গেলে কিইবা হবে? তাঁর জন্য দোয়া মাহফিল আর সাধারণ প্রতিবাদ সভায় হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষের ঢল নামছে। এই দৃষ্টান্তগুলো ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৫ বছরের একটানা নিপীড়নে বিপর্যস্ত দলটির নেত্রীর জন্য লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটছে। বিক্ষুব্ধ জনতার চেপে রাখা ক্ষোভের ভাষা কেউ যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে সেটা হবে চরম দুঃখজনক। রাজনীতিকদের হিংসা-বিদ্বেষের চিরঅবসানে বিক্ষুব্ধ জনতা যদি ক্ষোভে ফেটে পড়ে তার পরিণতি কী হবে! সেই প্রশ্নে সবার সময় থাকতেই মনে রাখা দরকার। আফগানিস্তানের নজিবুল্লাহ থেকে লিবিয়ার গাদ্দাফি পর্যন্ত এমন অসংখ্য উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে। এই স্মৃতিগুলো খুব বেশি দূরে নয়, সবারই মনে থাকার কথা।
তবে সবকিছুরই একটা শেষ আছে। ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত যেমন নিশ্চিত, তেমনি তীব্র গণঅসন্তোষ এর চরম বহিঃপ্রকাশও শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রকৃতির নিয়ম কোন বিশেষ দেশ ও সমাজের জন্য শুধু প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশ আগেও স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের দুঃখজনক পরিণতি দেখেছে। এসব বিরক্তিকর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কারোরই কাম্য নয়।