সম্পাদকীয়

এ কেমন বন্ধুত্ব? এইরকম বন্ধু থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন কোথায়?

এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। সুরমা ইসু‍্য ২১৮৪

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্ক গত ৪৯ বছরে “সর্বোচ্চ উচ্চতায়” উপনীত হয়েছে বলে আমরা জানতে ও বুঝতে পারছি(সূত্র: বাংলাদেশ সরকার)। কিন্তু সর্বশেষ করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে ইন্ডিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে এই সম্পর্ক আবারো প্রশ্নের মুখোমুখি হলো ।  যদিও এই প্রশ্ন শুধু এই ইস্যুতেই নয়, দুই দেশের সকল অমীমাংসিত ইস্যুতেই একই প্রশ্ন বিরাজমান।
ইন্ডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের রক্ত ঝরানো ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর নিয়মিত সন্ত্রাসী অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দুনিয়ার সব আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সীমান্ত সন্ত্রাসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা এযুগে নজিরবিহীন। ইন্ডিয়া কিন্তু চীন অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে তার দীর্ঘ সীমান্তে এই জঘন্য ও আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক অভ্যাস কখনো চর্চা করার সাহস পায়নি, জারি রাখা তো দূরে থাকে।  পেঁয়াজসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য বাংলাদেশ প্রতিবেশী ইন্ডিয়ার উপর নির্ভর করে। ইন্ডিয়া পেঁয়াজ নিয়ে গত দুই বছরে যা করেছে, তা সভ্যতার মানদন্ডে মাপা কঠিন হবে । অবশ্য এনিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মোটেই বিস্মিত হয়নি, কারণ ফারাক্কা আর তিস্তা নিয়ে ইন্ডিয়া ৪৯ বছরে যা করেছে, পেঁয়াজ নিয়ে তাই করেছে। 
সর্বশেষ করোনা মহামারী নিয়ে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও বিপর্যস্ত। চাতক পাখির মতো অপেক্ষমান  ভ্যাকসিনের জন্য। এই সময়ে ইন্ডিয়ার ভ্যাকসিনের উপর বাংলাদেশ পুরোপুরি নির্ভর করে এখন ফলাফল শূন্য।  গত সেপ্টেম্বরে চীনের ভ্যাকসিন থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখতে তড়িঘড়ি বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করিয়ে নেয় । চুক্তি অনুসারে ৬০০ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে নেয় এবং তারপরপরই যথারীতি ভ্যাকসিন রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বসে । বাংলাদেশকে আরেকটি গভীর সংকটে ফেলে দেয় ।  তিস্তাচুক্তি, মাতামুহুরি পানিবন্টন চুক্তিসহ  ইন্ডিয়া -বাংলাদেশের যৌথ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ইস্যূতেই ইন্ডিয়া কোনোদিন ছাড় দেয়নি। বরং বাংলাদেশ থেকে ফ্রি ট্রানজিট, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ভারতীয় রাডার বসানো, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ থেকে চায়নাকে হটানো, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছে দেশটি। এমনকি রোহিংগা ইস্যুতেও ইন্ডিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধী মায়ানমারের পক্ষে। কি নির্লজ্জ। জাতিসংঘে একবারও বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দেয়নি। 
তিস্তার পানিবন্টন চুক্তিতে দীর্ঘ ব্যর্থতা এবং নতুন নাগরিকত্ব আইন করা এই দুটি বিষয় বাংলাদেশের জনমনে নয়া দিল্লি বিরোধী একটি মনোভাব গড়ে তুলেছে, যদিও দু’দেশের সরকারের মধ্যে বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান বলে দাবি করা হয়। তবে এই সম্পর্ক যত না দু’দেশের মধ্যে তার চেয়ে বেশি একটি দেশ ও একটি দলের মধ্যে । যার সরল স্বীকারোক্তি ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দৌড়াস্বামি  কয়েকদিন আগে ঢাকায় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বাইরে ভারতের কোন বন্ধু নেই।’ একটা দেশের রাষ্ট্রদূত কতটুকু নির্লজ্জ  ও দুর্বিনীত হলে হোস্ট কান্ট্রির জনগণ সম্পর্কে এই রকম মন্তব্য করতে পারেন!
ইন্ডিয়ার প্রভুত্ব সুলভ আচরণ ও বাণিজ্যিক অগ্রাধিকার  বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশীর ধারণাকে কলুষিত করেছে। তাই, ৪৯ বছরের বন্ধুত্বের ফলাফল হিসেবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য-এইরকম বন্ধু থাকলে তার আর শত্রুর প্রয়োজন কোথায়? 

Sheikhsbay

Related Articles

Check Also
Close
Back to top button
Close
Close