নিউজ

বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আহমদ চৌধুরী স্মরণে দোয়া মাহফিল

‘আল-কুরআনের আলোকে জীবিত ও পরলোকগত পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব’ বিষয়ের ওপর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন মরহুমের পরিবারের সদস্যরা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আহমদ চৌধুরী স্মরণে দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও মেজবান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে মরহুমের পরিবারের সদস্য, স্বজনসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার, সাফীর গ্রুপ লন্ডন-নিউইয়র্ক এর চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদসহ ঘনিষ্টজনরা।

দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন মরহুমের ছেলে কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী ও সন্তানগন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আহমদ চৌধুরী ১৮ জুলাই নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।

তার কর্মজীবন শুরু ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)। দু’বছর প্রশিক্ষণ শেষ করে ইপিআর ছেড়ে ডাক বিভাগে যোগ দেন তিনি। বিহারী নিয়ন্ত্রিত পোস্টাল কর্মচারী ইউনিয়নে তিনি প্রতিবাদী বাঙ্গালী ছিলেন। এজন্য নানাভাবে তিনি শোষণ, জুলুম ও নিগ্রহের শিকার হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিভাগের সেক্রেটারি ছিলেন। সেই সময় তিনি ঢাকায় যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে কোলকাতা অস্থায়ী ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগ করে নীতি নির্ধারণে ভুমিকা রেখেছেন।

এছাড়াও ভেসপা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন তিনি। জিপিওতে কর্মরতদের মাধ্যমে দূরদূরান্তের খবর সংগ্রহ করতেন। ঢাকার আশপাশে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক হিসেবেও বড় ভুমিকা রাখেন। সেই সময় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ গুপ্তচরবৃত্তিও করেছেন নসুর আহমদ!

কৌশলগত কারণে জিপিও ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা দেশের ডাক কর্মীদের পাঠানো খবরাখবর কোলকাতায় ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছানোর দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। নয় মাসের যুদ্ধে অন্তত ছয় বার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে ফিরে আসেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সাক্ষাৎ করে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে ডাক বিভাগের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবী আদায় করেন।

বর্ণ্যঢ্য চাকরিজীবনের শেষ দশক তিনি ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে থেকে অবসর গ্রহণ করেও পাঁচ বছর সভাপতি পদে বহাল থাকেন। সরকারী কর্মচারীদের দুই ঈদের বোনাস, উৎসব ভাতা, মহার্ঘভাতা, পোস্টম্যানদের বিভিন্ন ভাতা ও পোস্টালের নিজস্ব গাড়িতে বিভিন্ন জেলায় ডাক প্রেরণের পদ্ধতি চালুতে তিনি সক্রিয় ভুমিকা ভুমিকা রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ডাক বিভাগের মহাপরিচালক মো. হারুনূর রশীদ সগর্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে ডাক বিভাগের অবদান ও বীর শহীদদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলায় ডাক বিভাগের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী শহীদ হন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তারা জীবন ত্যাগ করেন, মা-বোনরা সম্ভ্রম দিয়েছেন বলেই আজ আমরা স্বাধীন। আমরা এখন বড় বড় পদে চাকরি করছি, নেতৃত্ব দিচ্ছি, সুবিধা ভোগ করছি।

সেই সময় মনসুর আহমদ চৌধুরী ডাক বিভাগের মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠিত করেন।তিনি শ্রদ্ধার সাথে তাদের স্মরণ করেন। মরহুমের সন্তানদের পক্ষ থেকে কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী তার পিতার স্মরণসভার আয়োজনে অংশগ্রহণ ও দোয়া করার জন্য উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close