নিউজ

এমন একটা নির্বাচন হয়েছে যেখানে মানুষ ভোট দেয় নাই: ড. মঈন খান

  • ভোট দিয়েছে ডিসি, এসপি, টিএনও এবং ওসি নামক চারটি বাটন।
  • আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের লেবাস পরে গণতন্ত্র হত্যা করেছে।
  • সংসদ, পুলিশ বিভাগ ও বিচার বিভাগ সব তারা দখল করে নিয়েছে।
  • মেগা উন্নয়ন নামে তারা মেগা দুর্নীতি করছে, বাকশাল কায়েম করেছে।
  • প্রশাসন দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা যায়, মানুষের মন জয় করা যায় না।
  • কথা আর কাজের মিল না থাকলে সেই কথার কোন মূল্য থাকে না।

।। সুরমা ডেস্ক।।

লণ্ডন, ২৬ আগস্ট: বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক আলোচিত ও আলোকিত নাম ড. আব্দুল মঈন খান। দেশের বরণ্যে এই শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত আছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মন্ত্রীসভার সদস্য হিসাবে তিনি তথ্য মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য, অত্যন্ত সৎ ও পরিচ্ছন্ন এই রাজনীতিবিদ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এমন একটা নির্বাচন হয়েছে যেখানে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয় নাই’। জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুর কাদের যে বক্তব্য রেখেছেন, তার জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের কথা ও কাজে মিল নেই। কথা ও কাজে যদি মিল না থাকে, সেই কথার কোনো দাম নেই। কথা ও কাজে মিল রাখার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাদের কথা এবং কাজে মিল থাকুক, তারা গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করুক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবলমাত্র একক ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে। সেই প্রক্রিয়ায় তারা ফিরে আসুক, নিশ্চয় এই দেশের মঙ্গল হবে।’

গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেখানে (নির্বাচন) বিএনপির মতো বড় দল আসুক, সেটাই চাই। কারণ, নির্বাচনটা যত প্রতিযোগিতামূলক হবে, তত দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে। আমরা আমাদের সেই ইচ্ছাটা বলেছি যে, আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করতে চাই। যেটা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হবে। এটা আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলেছি।’

ড. আবদুল মঈন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন ২০১৮ সালে আমরা বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানে কী বলা হয়েছিল, সেখানে বলা হয়েছিল যে, আপনারা নির্বাচনে আসুন, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দেব। আমরা সেই কথা বিশ্বাস করেছিলাম, নির্বাচনে এসেছিলাম। পরবর্তিতে আপনারা দেখেছেন, অনরেকর্ড সেই নির্বাচনী প্রচারণা যেদিন শুরু হয়, প্রথম দিন থেকে আমার ওপরে আক্রমণ করা হয়েছে, মহাসচিবেরর মিছিলে আক্রমণ করা হয়েছিল, সারা বাংলাদেশে আমাদের ওপরে আক্রমণ করা হয়েছিল। সেই আক্রমণ নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত চলেছিল।’

মঈন খান বলেন, ‘এটা অনরেকর্ড আমরা ইলেকশন কমিশনের লিখিত বক্তব্য দিয়েছি, সেগুলো আপনারা দেখেছেন। সেখানে দিনের ভোট রাতে হয়েছে, ভোট দিয়েছে চারটি কমিউস্টারের বাটন। আমি ব্যাখ্যা করে দিচ্ছি…একটি বাটন হচ্ছে ডিসি, একটি বাটন হচ্ছে এসপি, একটি বাটন হচ্ছে টিএনও এবং চতুর্থ বাটনটি হচ্ছে ওসি। ঢাকা থেকে…নির্বাচনের ফলাফলের সিট নির্বাচনী তিনশ এলাকায় বের হয়ে এসেছে, সেটাই হয়েছে সেই নির্বাচনে।’

আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের মৌলিক ও ভোটের অধিকার হরণ করেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে।’

সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান ও মুক্তিযোদ্ধারাসহ দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘অন্তরে মম শহীদ জিয়া’ আয়োজিত ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের অনিবার্যতা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় ড. মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে একদিন না একদিন বিদায় নিতে হবে। এই সরকারকে এই দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না। আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা লগি-বৈঠার রাজনীতি করি না। অনেকেই অভিযোগ করে বিএনপি কিছু করতে পারে না। অভিযোগ করুক আর যাই করুক- আমরা হিংসাত্মক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা পরিবর্তনে বিশ্বাসী।

সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা আবোল-তাবোল কথা বলছে। আজ একজন বলে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন, কাল আরেকজন বলে করতে পারবেন না। পরশু একজন বলে রাজনীতি করতে পারবেন, তারপরের দিন আরেকজন বলে করতে পারবেন না।

মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করেছে, দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে ভালোবাসে। হুমকি-ধমকি দিয়ে, মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে ক্ষমতায় থাকা যেতে পারে, কিন্তু দেশের মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তারা ১৪-১৫ বছর ক্ষমতায় আছে, আরো কতদিন ক্ষমতায় থাকবে তা জানি না, কিন্তু একটি কথা আমি বলতে চাই- পৃথিবীর ইতিহাস আপনারা অবলোকন করুন। কোনো স্বৈরাচার সরকার চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ বাতিল করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ দাবি করেছিল। সঙ্গে ছিল জামায়াতে ইসলামী। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯৬ সালে হালাল ছিল, আজ তা কেন হারাম হয়ে গেল?

তিনি বলেন, জনগণের দাবির মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া জনগণের নেত্রী। তিনি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেন নাই। তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন সামনে দরজা দিয়ে। আট বছর রাজপথে রাজনীতি করে এসেছিলেন।

সংবিধানের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য সংবিধান- এমন মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, মানুষ যেভাবে চায় সেভাবে সংবিধান লিখিত হবে। মানুষের প্রয়োজনে স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সংবিধান বারবার লিখিত হয়েছে, পুনঃলিখিত হয়েছে এবং তা হতে থাকবে। মানুষের প্রয়োজনে যেভাবে সংবিধান তৈরি করতে হয়, ঠিক সেভাবে করতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা ঢালি আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাম্মি আক্তার, বিলকিস জাহান শিরিন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close