নিউজ

আসামে বাঙালিদের সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন করার চেষ্টা চলছে

  • তড়িঘড়ি ডিলিমিটেশনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ।
  • তালিকা বাস্তবায়িত হলে আসাম থেকে বিচ্ছিন্ন হবে বরাক।

।। সুরমা ডেস্ক।।

লণ্ডন, ১৪ আগস্ট: সম্প্রতি নির্বাচন আয়োগ আসামে ডিলিমিটেশনের যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছেন তাঁতে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে রাজ্যের এক কোটি বিশ লক্ষ বাঙালির কোমর ভেঙে দেবার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়েছে।

গতকাল ১৩ আগস্ট বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কর্মকর্তারা। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, ডিলিমিটেশনের এই চূড়ান্ত তালিকার মাধ্যমে রাজ্যের বাঙালিদের সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা এইসব চক্রান্ত করছে তারা বাঙালির ইতিহাস জানেনা। দেশের স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরিয়েছে এই জাতি। বরাক উপত্যকায় ভাষার দাবিতে আত্মহুতি দিয়েছেন একাদশ শহিদ। তাই বাঙালিদের আত্মসম্মানকে খাটো করে দেখলে সরকার চূড়ান্ত ভুল করবে।

প্রদীপ বাবু বলেন, বরাকের ক্ষেত্রে এই তালিকা প্রস্তুত করেছেন দুই অবাঙালি বিধায়ক। একজন রাজ্যিক স্তরের এবং একজন স্থানীয় যিনি ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটের নায়ক হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন। এদের বরাকের ইতিহাস,ভুগোল সম্বন্ধে না আছে কোন ধারনা নেই,না আছে এই ভুখন্ডের প্রতি কোন আবেগ। তাঁদের সহায়তা করেছেন এক প্রাক্তন পৌরসভার অফিসার, প্রাক্তন বিডিও তথা ডিআরডিএ ডিরেক্টর যিনি দুর্নীতির অভিযোগে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। এই মীরজাফরকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে সামাজিক ভাবে বয়কট করা অবশ্যকর্তব্য।

বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক বলেন, এই ডিলিমিটেশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। সম্মিলিত বিরোধী দলের আইনজীবির আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চতম ন্যায়ালয়ের প্রধান বিচারপতি নির্বাচন আয়োগের কাছে স্পষ্টীকরণ চেয়ে তা তিন সপ্তাহের মধ্যে লিখিত ভাবে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নির্বাচন আয়োগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে কোন স্থগিতাদেশ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া চলাকালীন এভাবে তাড়াহুড়ো করে খসড়া চূড়ান্ত করা কেন হল তা রহস্যজনক। তিনি বলেন এর মাধ্যমে মাননীয় উচ্চতম ন্যায়ালয়কে সম্পুর্ন অবমাননা করেছে নির্বাচন আয়োগ। প্রদীপ বাবু বলেন যে মাননীয় সুপ্রীম কোর্ট দেশের আপামর জনসাধারণের বিশ্বাস ও ভরসার জায়গা। তাঁদেরও সুপ্রীম কোর্টের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। কিন্তু দেশের একমাত্র রক্ষক এই প্রতিষ্ঠানকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে যেভাবে এই তালিকা প্রকাশ করা হল তা নিঃসন্দেহে দূর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন তাঁরা নিশ্চিত যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারের পক্ষ এই তালিকা চূড়ান্ত করার চাপ ছিল যাতে নতি স্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশন।

প্রদীপ দত্তরায় বলেন, এই আসাম রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি বিরোধীতা চলছে । ১৯৮০ সালে বিদেশি বিতাড়নের নামে ‘বঙাল খেদা’ আন্দোলনের মাধ্যমে শতশত বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। রাজ্যের সব ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে বলে খোদ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা স্বত্তেও গোয়ালপাড়ায় এশিয়ার বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। এনার্সি করে ১৯ লক্ষ বাঙালির নাগরিকত্ব ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এবং এদের আধার কার্ড আজ অব্দি অকেজো করে রাখা হয়েছে। যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের গাজর ঝুলিয়ে রাজ্যের অধিকাংশ বাঙালি হিন্দুদের ভোট হাসিল করল বিজেপি, সেই বিল উভয় সংসদে পাশ হবার পরও গত তিনবছর ধরে বাস্তবায়িত করেনি এই সরকার।

প্রদীপ বাবু এদিন বরাকের সাংসদ, বিধায়কদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে তাঁরা সবাই যেন একযোগে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন তাহলে এই ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া যে আটকে যাবে তা নিশ্চিত। তিনি বলেন যে তাঁরা যেন ভাষা শহিদদের প্রতি তাঁদের ঋন বিস্মৃত না হন এবং মাতৃসম নিজেদের এই ভুখন্ডকে বিক্রি না করেন।

প্রদীপ বাবু আরও বলেন, তাঁরা এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের আগে কোন আন্দোলন কর্মসূচি নেবেন না। তবে সেখানেও যদি বরাকের গনদাবির স্বীকৃতি না মেলে এবং যদি নির্বাচন আয়োগ তথা সরকার বরাকে এই তালিকা বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নেয় তবে তীব্রতম প্রতিবাদ ও আন্দোলন হবে। এবং তেমন হলে কোন অবস্থায় আসামের সাথে থাকবেনা এই উপত্যকা।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় সুরমাকে এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close