নিউজ

বাংলাদেশে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ঢাকায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে তার এই উদ্বেগের কথা জানান তিনি। ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে গতকাল বিকেলে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র জেফ রাইডেনাওয়ার। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে রাষ্ট্রদূত বুধবার সকালে তাঁর পূর্বনির্ধারিত বৈঠক সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হয়েছেন।

মার্কিন কূটনীতিক পিটার ডি. হাস কে ৯ জুলাই ২০২১ ইং সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেন। ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে তিনি বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৫ মার্চ, ২০২২ ইং তারিখে, পিটার ডি. হাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করেন। এর আগে পিটার ডি হাস যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিষয়ক ব্যুরোর প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন।

মার্কিন কংগ্রেসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইউনাইটেড স্টেটস ফরেন সার্ভিসে যোগদানের পর পিটার ডি. হাস কে প্রথমে মরক্কোতে মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পিটার ডি. হাস ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিসে এক বছরের জন্য ডেস্ক অফিসার হিসাবে কাজ করেন এবং লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের একজন অর্থনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের মুম্বাইয়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসে অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা হিসাবেও তিনি কাজ করেন। ২০১৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পিটার ডি. হাস ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা-তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশনে চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পিটার ডি. হাস ১৯৮৮ সালে ইলিনয় ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে জার্মান ও ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এ স্নাতক এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে অর্থনীতি ও কম্পারেটিভ গভর্ণমেন্ট এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইংরেজি ছাড়াও জার্মান ও ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের জেমস ক্লেমেন্ট ডান পুরস্কার এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক অর্জন বিষয়ক কর্ডেল হাল পুরস্কার পেয়েছেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস বাংলাদেশে আসার পরই নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথাবার্তা বলছেন। গত ১৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে শুনানিতে হাস বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ থাকলে পুরো অঞ্চল লাভবান হবে।’ পিটার ডি হাস আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আগামী ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকাণ্ডকে তিনি এগিয়ে নিতে চান। এ ছাড়া তিনি মানবাধিকার সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবেন।’

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে তার কথাবার্তায় নিশি রাতের সরকার তীব্র আপত্তি জানিয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছে। এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের ঘটনা নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এই বিবৃতি নিয়েও রাতের ভোটের সরকার বিরক্তি প্রকাশ করেছে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস গতকাল বুধবার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহিনবাগে গিয়েছিলেন। সেখানে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র একজন নিখোঁজ নেতার বাসায় যান তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথে কিছু আওয়ামী দৃর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ফেলে এবং তাকে মারতে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত খুবই বিব্রত হন। ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে তড়িঘড়ি করে তিনি গাড়িতে উঠে যান। এরপর তার গাড়ি ব্লক করে ফেলার চেষ্টা করলে তার ব্যাক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে কোনমত সেখান থেকে সরিয়ে আনেন। পরবর্তীতে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ বিষয়ে এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে তিনি খুবই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বাংলাদেশ ডেস্কের অফিসার লিকা জনসন এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন ।

পিটার ডি হাস শাহিনবাগে যে বাসায় গিয়েছিলেন সেই বাসার সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে এবং তার বোন সানজিদা ইসলামের নেতৃত্বে মায়ের ডাক নামে একটি সংগঠন হয়েছে যেই সংগঠনটির ব্যাপারে শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের উষ্মা রয়েছে।

বিকেলে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকায় বৈঠক শেষ না করেই সাজেদুল ইসলামের বাসা থেকে চলে আসেন পিটার ডি হাস। বিষয়টি তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানিয়েছেন।

কূটনীতিকরা মনে করছেন যে, গুমের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থান রয়েছে। সেই অবস্থানের কারণেই হয়তো তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তাছাড়া কোনো কোনো কূটনৈতিক মনে করছেন যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো পর্যাপ্ত তথ্য পাচ্ছেন না সরকারের পক্ষ থেকে। একারণে তারা নিজেরাই তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close