নিউজ

লণ্ডনে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব

ব্যতিক্রম ছিলো শুধু মৌসুমী ভৌমিকের সঙ্গীত পর্ব

রাজনৈতিক বক্তৃতার আধিক্য, বার্মিংহামে আওয়ামী আক্রমণে ব্যাপক সমালোচনা

শিল্পী মৌসুমী ভৌমিক । ছবি: জি আর সোহেল

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ২৩ অক্টোবর : মেলা বা উৎসবপ্রিয় বাঙালিরা যে কেউ ডাক দিলেই তাতে সায় দেন বা অংশগ্রহণ করে উৎসবে মেতে ওঠতে চান। বিশেষ করে বইমেলা বা সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোতে নির্বিবাদ ও দল নিরপেক্ষ আনন্দের আমেজ পেতে চান তারা। তাই স্বভাবতই এসব আয়োজনে সাড়াও পড়ে যথেষ্ট। কিন্তু আয়োজক ও অতিথিদের আচরণে হুঁচট খেতে হয় অনেকক্ষেত্রে। ইদানিং বাংলাদেশের মতো বিলেতের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোও আর দলনিরপেক্ষ না থাকায় তা প্রাণ হারাচ্ছে। সম্প্রতি এবিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আলাদা আলাদাভাবে দুটি বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে সমালোচনা হতে দেখা গেছে। তথাপি দুটি উৎসব ছিলো অনেকটা সস্তা সরকার দলীয় রাজনীতির শোডাউন। কিন্তু সর্বশেষ ১৫, ১৬ ও ১৭ অক্টোবরের লণ্ডন বাংলা বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবে ঘটা কার্যক্রম সেই সমালোচনার মাত্রাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর সম্মিলিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকের আয়োজনে ‘বাংলাদেশ বইমেলা ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উৎসব’ নামে মাইলএণ্ডের আর্টস প্যাভিলিয়নেও অনুরূপ একটি বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব বসেছিলো। সেখানেও পুরোটা উৎসবই একটি দলীয় পরিচিতিতে ফুটে ওঠার বিষয়টি আলোচনায় আসে। লণ্ডনের বইমেলার মঞ্চজুড়ে রাজনৈতিক নেতাদের একচ্ছত্র আধিপত্যসহ সরকারের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর যাচ্ছেতাই বক্তব্য উপস্থিত শ্রেতা-দর্শকদের অস্বস্থিতে ফেলে দেয়। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উৎসবে সাহিত্যিকদের ব্যতি রেখে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অতিথির আসনে সমাসীন এবং সাহিত্যের আলোচনা না করে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বাগাড়ম্বরতায় অনেকেই চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম বক্তা ছিলেন লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি কয়েক বছর আগের একটি বইমেলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী কতৃর্ক বাংলাদেশের বাইরে লণ্ডনসহ তিনটি দেশে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের সরকারের দেয়া প্রতিশ্রম্নতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তা আজও বাস্তবায়িত না হওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আর বার্মিংহামের বইমেলা ও উৎসবতো ছিলো আরো বেশী সমালোচিত। সেখানকার মেলা মঞ্চে একজন আওয়ামী নেতার তাণ্ডব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। অতিথিদের সামনেই ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে মঞ্চে উঠে চেঁচামেচি এবং আওয়ামী লীগের মন্ত্রী যেখানে অতিথি সেখানে তাকে আমন্ত্রণ না জানানোর দুঃখের তাণ্ডব সৃষ্টি করতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্রে দেখা যায়।
তবে লণ্ডনের বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের সঙ্গীত পরিবেশন পর্বটি ছিলো ব্যতিক্রম। উদ্বোধনী দিনের সন্ধ্যায় তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেন। একে একে পরিবেশিত তাঁর কয়েকটি গান উৎসবস্থলের দর্শকশ্রোতাদের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। তিনি তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত ও বহুল প্রচারিত গানের পাশাপাশি সিলেটের দু‘জন মরমী সাধক যথাক্রমে পীর মজির ও রনীল রায় চৌধুরীর গান পরিবেশন করে নতুনত্ব উপহার দেন। গানের এই পর্বটি উপস্থিত শ্রোতারা পিনপতন নিরবতায় তন্ময় হয়ে উপভোগ করেন।

এছাড়া ছিলো কবিতা আবৃত্তি ও স্বরচিত লেখা পাঠ। তাতে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক স্থানীয় কবি, ছড়াকার ও আবৃত্তিকারবৃন্দ।
লণ্ডনের বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের এবারের আয়োজক ছিলো লণ্ডন বাংলা বইমেলা উদযাপন পর্ষদ। দুইদিন ব্যাপী আয়োজনের প্রথম দিন ১৫ অক্টোবর, শনিবার দুপুর থেকে পূর্ব লণ্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে শুরু হওয়া উৎসবে বইমেলা ছাড়াও ছিলো বেলা দুটো থেকে শিশু-কিশোর উৎসব। বিকেলে ব্রাডি আর্ট সেন্টারে লণ্ডন বাংলা মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শত জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক মুখ্য সচিব কবি কামাল চৌধুরী এবং জাতীয় যাদুঘরের পরিচালক কবি শিহাব শাহরিয়ার। এরপর আলোচনা পর্বে প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কবি-ছড়াকার দিলু নাসেরের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন লণ্ডন বাংলা বইমেলার সমন্বয় কমিটির সদস্য কবি মাশুক ইবনে আনিস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ এমপি। অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বৃটেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম। লণ্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের কালচারাল লীড মেম্বার কাউন্সিলার ইকবাল হোসেইন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী। এনটিভি ইউরোপের সিইও সাবরিনা হোসেন। বইমেলা পর্ষদের উপদেষ্টা বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী। ঢাকা থেকে আগত বাতিঘর প্রকাশনীর কর্ণধার দীপংকর দাশ, বইমেলা পর্ষদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কবি মুজিবুল হক মনি। সমন্বয় কমিটির সদস্য ফয়জুর রহমান ফয়েজ। নির্বাহী সদস্য জামাল আহমদ খান।

বইমেলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসবের ২য় দিনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতি মন্ত্রী কে এম খালিদ এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম ও জার্মানি থেকে আগত একুশে পদক প্রাপ্ত কবি নাজমুননেসা পিয়ারী, ভার্চুয়াল আলোচনায় যুক্ত হন বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা।
দিলু নাসেরের উপস্থাপনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন চ্যানেল এস টেলিভিশনের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আহমদুস সামাদ চৌধুরী জেপি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ প্রমুখ্য।
দুপুর বারোটা থেকে শুরু হওয়া বইমেলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসব রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলে। বইমেলা চলাকালীন সময়ে মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সংগঠনের পরিবেশনায় সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ ছাড়াও সাহিত্য সংগঠন গ্রন্থীর পরিবেশনায় কবি সংগঠক টি এম কায়সারের উপস্থাপনায় বহুজাতিক কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে অংশ নেন টি এম আহমেদ কায়সার, কবি ডেভিড লী মরগান,কবি জন ফ্রানডন, কবি মারসিয়া মার,পপি শাহনাজ, কবি শামীম শাহান।
বিশিষ্ট আবৃত্তিকার উদয় শংকর দাশের নেতৃত্বে আবৃত্তি সংগঠন বর্ণন আবৃত্তি পরিবেশন করে।
নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ছাড়াও উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এবং স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে, গত ১৬ অক্টোবর, রবিবার পূর্ব লণ্ডনের কবি নজরুল প্রাইমারী স্কুলে অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল ‘আমাদের প্রতিদিন.ডটকম’-এর ব্যবস্থাপনায় বসে ‘লণ্ডন বাংলা সাহিত্য উৎসব ২০২২’ ও বইমেলা। ব্রাডি আর্টস সেন্টারে মেলা ও উৎসব চলা অবস্থায় একই ধাঁচের আরেকটি মেলা ও উৎসবের বিষয়টি অনেকের মনে প্রশ্নের জন্ম দেয়। তবে সেখানে তেমন রাজনৈতিক মহড়া দেখা যায়নি। স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকের উপস্থিতিতে চার পবের্র সাহিত্য উৎসব ও বইমেলার প্রথম পর্বে ছিল সাহিত্যালোচনা ও ৫টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাজ্য-এর সভাপতি কবি ময়নূর রহমান বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সালেহা চৌধুরী, বিশেষ অতিথি কবি হামিদ মোহাম্মদ ও কবি আতাউর রহমান মিলাদ। অনুষ্ঠানে কবিতার ওপর আলোচনা করেন কবি মিলটন রহমান, ছড়ার ওপর ছড়াকার সৈয়দ হিলাল সাইফ ও সাহিত্যের ওপর কথাশিল্পী সাগুফতা শারমিন তানিয়া। অনুষ্ঠানে কবি আসমা মতিন, কবি আহমদ হোসেন হেলাল, কবি আলী রেজা খান ও লেখক মোহাম্মদ নূরুল হকের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কবি এ কে এম আবদুল্লাহ।

দ্বিতীয়পর্বে ছিল কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি ও পুঁথিপাঠ। স্বরচিত কবিতা ও ছড়া পাঠ করেন— কবি ময়নূর রহমান বাবুল, আবু মকসুদ, এ কে এম আবদুল্লাহ, হেনা গেম, লোনা রাহনুমা, জুয়েল রাজ, মিলটন রহমান, মোহাম্মদ ইকবাল, মুস্তফা জামান চৌধুরী নিপুন, আসমা মতিন, ফাহমিদা ইয়াসমিন, নূরহাজান রহমান, সাহারা খাতুন, সৈয়দ হিলাল সাইফ, আলী রেজা খান, আহমদ হোসেন হেলাল, মোহাম্মদ নূরুল হক, আবদুল কাইয়ুম, সারওয়ার-ই আলম, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, ইকবাল বাহার সোহেল প্রমুখ। স্বরচিত পুঁথি পাঠ করেন হাজেরা কোরেশি অপি, সিলেটি চিঠি পাঠ করেন শাহারা খান। আবৃত্তি করেন — সোমা দাস, আরফুমান চৌধুরী, ফয়সল নূর ও শতরূপা চৌধুরী।
তৃতীয়পর্বে ছিল লেখক সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান সম্পাদিত ‘আমাদের প্রতিদিন’-এর ১২শ বর্ষপূর্তি উৎসব উপলক্ষে আলোচনানুষ্ঠান। কবি ময়নূর রহমান বাবুলের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক এনাম চৌধুরী পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার, বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল তাইসির মাহমুদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও একাত্তর টেলিভিশনের সিলেট প্রতিনিধি ইকবাল মাহমদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিলাতের বাংলা অনলাইন মিডিয়ার উপর মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন লেখক-গবেষক ফারুক আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন করেন— ৫২বাংলা টিভির সম্পাদক কবি ও সাংবাদিক আনোয়ারুল ইসলাম অভি।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক আকবর হোসেন, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি রহমত আলী, কবি আবু সুফিয়ান চৌধুরী, অধ্যক্ষ আবদুল মুতলিব।
চতুর্থপর্বে ছিল সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন— শিল্পী সুমা দাস, শতরূপা চৌধুরী এবং নৃত্য পরিবেশন খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী মোহাম্মদ দ্বীপ। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন— নূরুল ইসলাম ও মিন্টু গোস্বামী।
বইমেলায় অংশগ্রহণ করে— দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, সাহিত্য প্রকাশ, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ ও প্রবাস প্রকাশনী।
বইমেলা ও উৎসব উৎসর্গ করা হয় বিলেতবাসী প্রয়াত তিন বিশিষ্টজন যথাক্রমে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক ও রাজনীতিক ইসহাক কাজল, সাংবাদিক ও কমিউনিটি নেতা শাহাবুদ্দিন আহমদ বেলালকে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close