নিউজ

ব্রিটিশ হজ্জযাত্রীরা ট্রাভেল এজেন্সি নয়, বুকিং করতে হবে সরাসরি

হঠাৎ নিয়ম পরিবর্তন: এজেন্টের পরিবর্তে স্ব-উদ্যোগে অনলাইন বুকিং
অনিশ্চিতায় বিপুলসংখ্যক ব্রিটিশ মুসলমানদের হজ্জযাত্রা
অনলাইন সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১২ জুন : হঠাৎ করে নিয়ম পরিবর্তন করায় মারাত্মক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এবছরের ব্রিটিশ মুসলমানদের হজযাত্রা। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট এবং হজ্জ গ্রুপের মাধ্যমে বৃটেন থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক ব্রিটিশ মুসলমান পবিত্র হজ পালন করে থাকেন। কিন্তু সৌদি সরকারের হজ মন্ত্রণালয়ের নতুন ঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী বৃটেন, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে এখন আর কেউ কোনো ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ্জ গ্রুপের হয়ে হজে যেতে পারবেন না। তাদেরকে হজ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে নিজ নিজ হজের বুকিং সম্পন্ন করতে হবে। একই সাথে এই সমস্ত দেশের জন্য হজযাত্রীদের নির্দিষ্ট কৌটা বেঁধে দেয়া হয়েছে। হজের মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকী থাকতে সৌদির হজ মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণা বিপাকে পড়েছেন বিপুলসংখ্যক হজযাত্রী এবং হজ সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল এজেন্ট ও হজযাত্রীদের বিভিন্ন গ্রুপ। সৌদি সরকারের আকস্মিক এমন ঘোষণার ফলে যেমন হজ্জ এজেন্টরা বৎসরের অন্যতম লাভজনক ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হবেন তেমনি কৌটা বেঁধে দেওয়া এবং অনলাইন সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা ও জটিলতার কারনে অনেকেই হজে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সাথে ইচ্ছুক হজযাত্রী এবং হজ্জ এজেন্টদের উদ্বিগ্ন করেছে।
সম্প্রতি সৌদি সরকার বৃটেন, ইউরোপ, আমেরিকা তথা পশ্চিমা হজযাত্রীদের জন্য নতুন নিয়ম করে চালু করে জানিয়েছে যে, ওইসমস্ত দেশের হজযাত্রীরা আর ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে হজ বুক করতে পারবেন না। তাদেরকে হজের জন্য একটি লটারিতে অংশে নিতে অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং সৌদি সরকারের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের ফ্লাইট ও বাসস্থান বুক করতে হবে। এবছরের হজ অনুষ্ঠানের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে সৌদি আরব কতৃর্ক নতুন এই নিয়ম চালু করার অর্থ হলো — পশ্চিমা দেশগুলির সম্ভাব্য ভ্রমণকারীদের এখন ট্রাভেল এজেন্সিগুলির মাধ্যমে না হয়ে একটি সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মক্কায় তাদের সফর বুক করতে হবে। একই সাথে যারা ইতোমধ্যে হজের জন্য তাদের এজেন্টদের কাছে অর্থ জমা দিয়ে দিয়েছেন তাদের অর্থ ফেরত চাওয়ার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

গত বছর মহামারির কারণে হজ, ওমরাহ বন্ধ থাকায় এবছর স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সৌদি সরকার কতৃর্ক হজ চালুর ঘোষণায় অনেকে হজ করার আশা করেছিলেন। অনেকে কোভিটের সময়ও তাদের পছন্দের এজেন্টের কাছে অর্থ জমা দিয়ে রেখেছিলেন যে, যখনই হজ চালু হয় তখন তারা যেন সহজে হজে যেতে পারেন। কিন্তু সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তারা মারাত্মকভাবে আশাহত হয়েছেন। তাছাড়া অনেক এজেন্ট তাদের মূল লাভের জন্য হজ্জের উপর নির্ভর করে। এখন তারা বেঁচে থাকার জন্য সম্ভবত ওমরাহর উপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু ওমরাহ‘র বাজারটি বিভিন্ন সংস্থা এবং ওমরাহ যাত্রীরা এখন নিজেরাই সবকিছু বুক করতে সক্ষম হওয়ায় এটি তাদের ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে।
দীর্ঘ মহামারির জন্য বন্ধ থাকার পর গত এপ্রিল মাসে সৌদি আরব ঘোষণা করে যে এবছর হজ পুনরায় চালু করবে। তবে ৬৫ বছরের কম বয়সী এবং শুধুমাত্র ট্রিপল-টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কেবল এক মিলিয়ন হজযাত্রী অংশগ্রহণের অনুমতি পাবেন। এই ঘোষণার ফলে ট্রাভেল এজেন্সিগুলিকে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার পাউণ্ড পর্যন্ত প্যাকেজ ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে দেখা যায়।

মে মাসে, বৃটেনে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন বান্দর আল সৌদ, হজ এবং ওমরাহ সংক্রান্ত সর্বদল পার্লামেন্টারি গ্রুপের এমপিদের বলেছিন যে, সম্ভাব্য হজযাত্রীদের এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে এবং তাদের অর্থ ফেরত দাবি করতে।
প্রিন্স খালিদ এমপিদের বলেছেন, ব্রিটিশ ট্রাভেল এজেন্টরা যদি ইতিমধ্যে হোটেল বা পরিবহনের জন্য তাদের স্থানীয় সৌদি অংশীদারদের কাছে অর্থ জমা দিয়ে থাকেন তারা যেন তাদের অর্থ ফেরত দাবী করেন।
এদিকে, হজ ও ওমরাহ গ্রুপ পরিচালনাকরী কয়েকজন সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, বৃটেন থেকে প্রতিবছর প্রায় ২৫/৩০ হাজার পবিত্র হজ পালন করে থাকেন। তারা বলছেন যে, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয় এবং এমনটি আরো আগে করা উচিৎ ছিলো। সৌদি সরকারের আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে অনেকেই বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কেউ কেউ অনলাইন বুকিংয়ের সিদ্ধান্ত ভালো মনে করছেন।

আল ক্বিবলাহ হজ ও ওমরাহ সার্ভিসের নেতৃত্বদানকারী শায়খ আবু সাঈদ আনসারী সুরমাকে বলেছেন, সৌদি সরকারের এমনটি আরো আগে করা উচিৎ ছিলো। তিনি আরো বলেন, অনলাইনকে অনেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি বলেন, অনলাইন সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না, এব্যাপারে এজেন্টদের এখনো অফিসিয়াললি কোনকিছু বলা হয়নি। তাছাড়া দেখা যাচ্ছে যে, এই অনলাইনও সরাসরি হজ মন্ত্রণালয়েরও নয়, একটি প্রাইভেট কোম্পানীর সাথে পার্টনারশীপ রয়েছে। তাই মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে বিভ্রান্তি কাজ করছে।
মিডল্যাণ্ড ট্রাভেল এজেন্ট এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি চৌধুরী হাফিজ অবশ্য সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ভালো চোখে দেখছেন এবং স্বাগত জানিয়েছেন। অনলাইনে মানুষ তাদের পছন্দ অনুযায়ী বুকিং দিতে পারবে। তাঁর মতে, এর ফলে হজ নিয়ে ট্রাভেল এজেন্ট ও হজ ব্যবসায়ীদের সরদারী কমবে।

উল্লেখ্য, হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের অন্যতম। এছাড়া হজ বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশগুলির মধ্যে একটি। সুস্থ ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের উপর জীবনে একবার হজ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় অনেকটা অন্ধকারে রেখেই নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। হজযাত্রী প্রেরণে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানের সংখ্যা না জানানোর কয়েক মাস পর নতুন ব্যবস্থাটি এসেছে। রিয়াদ আন্তর্জাতিক হজযাত্রীদের জন্য তার প্যাকেজের মূল্য এখনো প্রকাশ করেনি, তবে বলেছে যে এতে ফ্লাইট এবং বাসস্থানের মূল্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

হজের মওসুম শুরু হওয়ার এত কাছাকাছি সময়ে হজ্জ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে রিয়াদকে কী এমন প্ররোচিত করেছিল তা এখনও অস্পষ্ট, তবে এর অর্থ হতে পারে যে হজযাত্রীরা করোনভাইরাস মহামারী থেকে অপেক্ষা করেছেন, শেষ পর্যন্ত তারা হজ সম্পন্ন করার সুযোগ হারাবেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close