নিউজ

প্রসঙ্গ বাংলাদেশ: কমপক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি বন্ধ করুন

সুরমার সম্পদকীয় ।। ইস‍্যু ২১৫৪
বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীদের বাগাড়ম্বরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাক্যবাগীশ মন্ত্রীদের ‘করোনা প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুতি পৃথিবীর সেরা’, ‘করোনা ভাইরাস সর্দি-কাশির মতই একটা সামান্য ভাইরাস’, ‘করোনার চেয়ে আমরা বেশি শক্তিশালী’, ‘আমরা শীঘ্রই চায়নার মতো হাসপাতাল বানাবো’ প্রভৃতি মন্তব্য আমাদের মনে আছে।
দেশে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ হাজার ৮৬৫ জন, মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ১২ জন। যাদের পরীক্ষা করা হয়নি তাদের মধ্যে আরো লক্ষ লক্ষ করোনা আক্রান্ত মানুষ রয়েছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এ বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। ৩ মাস আগে চীনে করোনা ধরা পড়ে। প্রস্তুতির জন্যে ৩ মাস সময় অপর্যাপ্ত ছিল না। আসলে কোভিন-১৯ মোকাবেলা কি ভাবে করতে হবে সে ব্যাপারে সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো প্রস্তুতি দূরের কথা তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। দেশের হাসপাতাল ও বেড সংখ্যা কতো, প্রথম-দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে কতোজন আক্রান্ত হতে পারে, কোভিড-১৯ চিকিৎসার ধরন কি হবে, পরীক্ষার জন্য কয়টা ল্যাব লাগবে – এ সকল প্রশ্ন নিয়ে কেউ ভাবেনি।

অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে স্থবির করে রেখেছে। ৩ মাস সময়ের মধ্যে ৬৪ জেলায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন সম্ভব ছিল। সরকার চাইলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষিত পরীক্ষার মেশিন ব্যবহার করতে পারতো। ডাক্তার ও নার্সদের জন্যে পর্যাপ্ত পিপিই’র জন্যও কোটি কোটি ডলারের প্রয়োজন পড়ে না।
স্বাস্থ্যখাতে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা দেশের কারো অজানা থাকার কথা নয়। ১৮ লক্ষ টাকার ফ্রিজ কিনে ২ কোটি টাকার বিল করা, একজন সামান্য কেরানীর দু হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, মাস্ক ও আরটিপিসিআর মেশিন কেনা নিয়ে দুর্নীতি, অযোগ্য লোককে নিছক নিজের লোক হওয়ার কারণে দায়িত্বে নিয়োগ ইত্যাদি ঘটনা দেশের সবাই কমবেশি জানেন। স্বাস্থ্য বিভাগের ২২টি পরিচালক পদের ১৫-১৬ জনেরই ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই বলে জানা গেছে। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অনভিজ্ঞ লোককে কাজ দেয়া ছাগল দিয়ে জমি চাষ করার নামান্তর।
অনেকের মতে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে টালবাহানার পেছনেও দুর্নীতির সংযোগ ছিল। স্বাস্থ্যসেবার কাজে নিয়োজিত লোকেরা সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রায় ৩ হাজার কর্মী এবং ১ হাজার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বহু অভিজ্ঞ ডাক্তারকে নিছক বিভাগীয় অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে জীবন দিতে হয়েছে। দিন শেষে এ সকল অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির দায় রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীকেই বহন করতে হবে।

২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারী দৈনিক যুগান্তরের হেডলাইন ছিল, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে – প্রধানমন্ত্রী।’ বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তিনি যদি কমপক্ষে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে এগিয়ে আসেন তা হলে আমরা বুঝবো প্রধানমন্ত্রী এখনো তাঁর সে ঘোষণায় অটল রয়েছেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close