নিউজহোম

বাংলাদেশ ব্যাংকে আবারো বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ডাকাতি 

বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবী “ভিত্তিহীন”

।। সুরমা ডেস্ক।।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সতর্ক বার্তার পর এখন সেই আশন্কা খবর আকারে প্রকাশিত হয়েছে। দেবপ্রিয় বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে এমন কিছু হচ্ছে, তা প্রকাশিত হলে তোলপাড় হয়ে যাবে। 

চন্দন নন্দী, সম্পাদক- নর্থইস্ট নিউজ

গত কয়েকদিনের কানাঘুষার পর মঙ্গলবার (১৪ম,২০২৪) ভারতের অনলাইন পোর্টাল “নর্থইস্ট নিউজ” এই খবরটি বিস্তারিত তথ্যসহ প্রকাশ করে। আলোচিত সাংবাদিক চন্দন নন্দী সম্পাদিত নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত খবরটির অনুবাদ এখানে তুলে ধরা হলো:

এই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা চুরির পেছনে ভারতীয় হ্যাকাররা জড়িত? উভয় দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই ব্যাপক ডিজিটাল চুরি (ডাকাতি) তদন্ত করছে, এমনকি বাংলাদেশের সম্ভাব্য ব্যাপক অর্থনৈতিক দুর্দশা মোকাবেলায় তারা কাজ করছে।

অজ্ঞাতপরিচয় সন্দেহভাজন ভারতীয় হ্যাকাররা ডিজিটাল উপায়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বলে অভিযোগ, ভারতীয় নিউজ পোর্টাল নর্থইস্ট নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা।

সূত্রগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে পাচারকৃত অর্থের তথ্য প্রকাশ করার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক। কিন্তু সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে ভারতীয় ও বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি “চাঞ্চল্যকর” চুরির বিষয়ে অবগত ছিল এবং “গোপনে” অপরাধের তদন্ত করছে।

“ডিজিটাল ডাকাতি”, কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকিং এর পরিণতি, এমন একটি সময়ে ঘটেছে যখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তা সন্দেহ করছেন যে সংখ্যাটি “একক সংখ্যা” হতে পারে। এটি আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে “চরম অসুবিধা” সহ বেশ জটিল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আনুষ্ঠানিকভাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩মে দাবি করেছে যে দেশের নেট রিজার্ভ ১৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। গত দুই সপ্তাহ ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল সদর দফতরে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ব্যাংকের প্রাঙ্গনে বিরাজমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অসন্তোষ প্রকাশ করে অর্থনীতিবিদ ড.  দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে ৭ মে বলতে বাধ্য হন “বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের কিছু ভুল হচ্ছে”। তিনি অবশ্য  কী ভুল তা বলেননি।

যদিও ভারতীয় ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ভারতে হ্যাকারদের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার চেষ্টা করছিল, তারা তৃতীয় দেশ থেকে পরিচালিত হতে পারে এমন একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনাকে অস্বীকার করেনি। এবারের বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়, বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ছে। খুব কম ঊর্ধ্বতন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এটি সম্পর্কে সরাসরি অবহিত আছেন।

এটি এমন এক সময় ঘটেছে যখন বাংলাদেশের অর্থনীতির অবনতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা অত্যন্ত নিরূপায় অবস্থায় আছেন।

আট বছরে এই দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে হ্যাকাররা ঢুকে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি করেছে। ফেব্রুয়ারী ২০১৬ সালে, ফিলিপাইন থেকে অপারেট করা অজ্ঞাত হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করেছিলো, তদন্ত সত্ত্বেও এখনো আসল দোষী ব্যক্তিদের সনাক্ত করা যায়নি।

ওই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্ক ও সুইফট সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে নেয় হ্যাকাররা। তারা ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে তহবিল স্থানান্তরের ৩৫টি ভুয়া অনুরোধ পাঠায়। 

সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা (তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানসহ) এবং সরকারি কর্মকর্তারা রহস্যজনকভাবে চুরির ঘটনা গোপন রেখেছিলেন।

আতিউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকাতির বিষয়ে অবহিত করতেও ব্যর্থ হন। তিনি এটাকে প্রযুক্তিগত ত্রুটির পরিণতি বলে ধারণা করেন ও বিশ্বাস করেন।

তার কোনো জ্ঞান বা ধারণা ছিল না যে অর্থ বের করার অনেক আগে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে ম্যালওয়্যার চালু করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের মন্তব্যের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে বারবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে নর্থইস্ট নিউজ খবর প্রচার প্রকাশ করেছিল, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৪২ টি একাউন্টের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনেক ডাটা তিন মাস সময়ের মধ্যে মুছে ফেলা হয়েছিল। যে অ্যাকাউন্টগুলোতে একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের মোটা অংকের ঋণ হিসেবে তথ্য উল্লেখিত ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যখন একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছিল, তখন প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর বলা হয়েছিল যে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ২,০০০ কোটি টাকার আমানত সম্পর্কিত এন্ট্রি প্রাথমিকভাবে ডাটাবেস থেকে মুছে ফেলা হয়।

গত বছরের ওই তদন্তের সবচেয়ে জরুরি বিষয় ছিল ৬৭,৭২১ কোটি টাকার ঋণের “রাইট অফ” করার বিষয়গুলো ওই ঘটনার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়। কয়েকটি প্রভাবশালী বাণিজ্যিক রূপ যারা ক্ষমতাসীন ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, তারাই তথ্য মুছে ফেলার মত ওই ঘটনার সঙ্গে জন্য বেনিফিশিয়ারি বলে তদন্তে উঠে আসে। 

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একটি “আড়িপাতা ও যোগাযোগ মনিটরিং কেন্দ্র” স্থাপনের জন্য সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই- কে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল ভবনের ৩০ তলায় ৬ ০০ স্কয়ার ফিট জায়গা বরাদ্দ করেছিল।

যদিও এই পদক্ষেপটি তখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে যথেষ্ট অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

ডিজিএফআই-এর জন্য অতিরিক্ত স্থান, তাও আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাদে! যোগাযোগ ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে  “বিশেষ অপারেশন” পরিচালনাই লক্ষ্য কিনা, এই প্রশ্ন তখনই উত্থাপিত হয়েছিল।  

নথি থেকে জানা গেছে যে বরাদ্দটি “সেনা গোয়েন্দাদের প্রধান শাখা, ডিজিএফআই-এর টেলিযোগাযোগ, আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিল্ডিং-প্রকল্প (টিআইএইচডিটিসিবি) এবং সেনাবাহিনীর ঢাকা সদর দপ্তরের” অনুকূলে করা হয়েছিল।

নথির “মন্তব্য” কলামটি প্রকাশ করেছে যে স্থানটি ডিজিএফআই-এর “ওয়াকি-টকি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ” এবং “রেডিও সরঞ্জাম” ব্যবহারের জন্য “প্রতিষ্ঠা” করার জন্য ব্যবহার করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবী:

বাংলাদেশ ব্যাংক এখবর সম্পর্কে গণমাধ্যমকে বলেছে, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এখন তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তাই এই ঘটনা “ভিত্তিহীন”।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতর থেকে খবর সংগ্রহে সাংবাদিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে ১৫মে যে প্রেসবিজ্ঞপ্তি ইস্যু করা হয়েছিল, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। কিন্তু রিজার্ভ থেকে বিলিয়ন ডলার চুরির এবং দুই দেশের গোয়েন্দাদের এই সম্পর্কে অনুসন্ধানের খবর নিয়ে কোন প্রেসবিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়নি; অথবা কোন গণমাধ্যমকে পাঠানো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করা শর্তে সাপ্তাহিক সুরমাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

Tags
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close