বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সরকার ও আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দ্য ডিপ্লোম্যাটে নিবন্ধ প্রকাশিত

  • নীরবে দমন করা হচ্ছে গণতন্ত্রকে, বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ বিচারাধীন: নিউ ইয়র্ক টাইমস
  • আওয়ামী লীগকে একতরফা সমর্থনের ভারতীয় নীতি বদলে যেতে পারে: দ্য ডিপ্লোম্যাট

।। সুরমা প্রতিবেদন।।

লণ্ডন, ৩ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশের সরকার ও আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসে রোববার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ‘Quietly Crushing a Democracy: Millions on Trial in Bangladesh’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পর্যায়ক্রমে শ্বাসরুদ্ধ করে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশটির কোর্টগুলোকে লোকারণ্য করে তোলা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থককে সাধারণত অস্পষ্ট ও অসঙ্গতিপূর্ণ বিভিন্ন অভিযোগে বিচারকের সামনে হাজির হতে হচ্ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাসে আগে এটা করা হচ্ছে, যাতে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রভাব রাখতে না পারে।

নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হিসাব অনুযায়ী, তাদের ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) সদস্যের মধ্যে প্রায় অর্ধেককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় জড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে সক্রিয় নেতা ও সংগঠকদের একেকজনের বিরুদ্ধে ডজন, এমনকি শতাধিক মামলা রয়েছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ ও গভীররাতে কর্মসূচী নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয় আইনজীবীদের চেম্বারে, আদালতের কাঠগড়ায়।

সম্প্রতি কোনো এক সকালে , বিএনপির এক নেতা সাইফুল আলম নীরবকে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় ১০ তলা ম্যাজিস্ট্রেট ভবনে হাজির করা হয়। সাইফুল আলম নীরব ৩১৭ থেকে ৩৯৪টির মতো মামলার আসামী। তিনি ও তার আইনজীবীরাও জানেন না মামলা কয়টি।

সাম্প্রতিক বছরগুলো বাংলাদেশ পরিচিত তার অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্পে। শক্তিশালী রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প, যার মাধ্যমে ডলার প্রবাহ অব্যাহত, নারীদের ক্ষমতায়ন ও লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। এক সময় এ দেশটিকে আমেরিকানরা বলতো তলাবিহীন ঝুড়ি, দুর্ভিক্ষ ও রোগশোকের দেশ, দৃশ্যতঃ কয়েক যুগের অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যূত্থান ও হত্যাকাণ্ড থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সমন্বয় সাধনের প্রচারণা, যার লক্ষ্য বিরোধী নেতৃবৃন্দ, বিশ্লেষক ও এ্যাক্টিভিস্টদের মতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রজাতন্ত্রকে একটি একদলীয়রাষ্ট্রে পরিণত করা।

গত ১৪ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির সেনাবাহিনী, পুলিশ- সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল এং অনুগতদের দিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন। তার টার্গেটের মধ্যে আছে শিল্পী, সাংবাদিক ও এ্যাক্টিভিস্ট এবং এমনকি নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস। তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক প্রচারণা চালিয়েছেন।

আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে দেশ আরেকটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখে। বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনকে দেখছে শেষ লড়াই হিসাবে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বলছে, তারা ‘বিএনপিকে জিততে দেবে না’। একজন বলেছেন, তারা ক্ষমতায় আসলে আমাদের হত্যা কববে। সম্প্রতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে এক সাক্ষাতকারে বিচারবিভাগকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে হয়রানির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি একজন সহযোগীকে দিয়ে একটি ছবির এ্যালবাম আনিয়ে দেখালেন; যাতে ছিল ভয়াবহ চিত্র: অগ্নিসংযোগ, বোমাসহ অন্যান্য হামলায় অঙ্গহারা অনেকের ছবি। আদালতের মামলাগুলো সম্পর্কে ‘এটা রাজনৈতিক নয়, এটা রাজনৈতিক নয়’, বিএনপির বর্বরতার চাক্ষুস প্রমাণ দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো তাদের অপরাধের জন্যে।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের ৮০০ জন সদস্য নিহত হয়েছে আরও ৪০০ জনের বেশি নিখোঁজ হয়েছে। শেখ হাসিনা এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তার দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে একই আচরণ করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা ও কারাবাসের শিকার হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারাই এটা শুরু করেছে।’

শেখ হাসিনা বিরোধীদের বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছেন যেহেতু সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে বর্তমানে তিনি রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন। বিশ্বব্যাপি অতিমারী পরিস্থিতিতে চাহিদার হ্রাসের পরবর্তীতে বাংলাদেশের রপ্তাানিমুখী পোশাক শিল্প কেবলমাত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, এমতাবস্থায় ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব আমদানি করতে ডলার সংকটে পড়ে গেছে দেশটি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটা আমাদের অর্থনীতিতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে।’

শেখ হাসিনা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি নাকচ করার পর বিরোধী দল খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুত সংকটকে সুযোগ হিসাবে নিয়ে ব্যবহার করে কারচুপির নির্বাচন আতঙ্কে রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

জুনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে বিএনপি নেতার অবাধ নির্বাচন ও রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দাবি করেছে। পুলিশ পিছু হটে বিরোধী দলকে মিছিল সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে এবং ক্ষমতাসীন দল পাল্টা সমাবেশ করেছে- যেখানে নেতারা স্বীকার করেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করছে। মার্কিন সরকার শেখ হাসিনা সরকারের সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উপর স্যাংশন দিয়েছে এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। বেশ কয়েকটি মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।

বিএনপির সমাবেশের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ পর বিচলিত শেখ হাসিনা শক্তি প্রয়োগের পথে ফিরে আসলেন। যখন বিরোধী দলের সদস্যরা আরেক বড় সমাবেশের অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে তখন পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে এবং ৫০০ জনের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দেয়। এ দমন অভিযান প্রমাণ করেছে যে, এমনি কি পশ্চিমাদের সতর্কবার্তাও এশিয়ার দুই জায়ান্ট চীন ও ভারতের সুসম্পর্ক বজায় রাখা নেত্রীর উপর সামান্যই প্রভাব ফেলেছে।

রোববার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার প্রতিবেদক মুজিব মার্শাল ও চিত্রগ্রাহক অটল লুক দুইবার বাংলাদেশ সফর করেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সরকার ও আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান নিয়ে দেশটির সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে— ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর একতরফা সমর্থনের ভারতীয় নীতি বদলে যেতে পারে। ভারতের অবস্থান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়ে এই নিবন্ধে একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে।

বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে দেশীয় মানদণ্ডগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সে বিষয়টি দেখা গেছে। অতীতে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক মন্ত্রী বাংলাদেশের নতুন পার্লামেন্ট ভবনের একটি ম্যুরালকে ‘অখণ্ড ভারত’ হিসেবে চিহ্ণিত করেছিলেন। পরে বাংলাদেশ সরকার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তার ব্যাখ্যা চেয়েছিল। ওই ম্যুরাল আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। একইভাবে গত ১৫ আগস্ট ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে ‘পারিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি’কে গণতন্ত্রের তিনটি অসুখের একটি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটকে লক্ষ্যবস্তু করেই তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, মোদির এ মন্তব্য বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। অবশ্য এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। শেখ হাসিনা সরকার আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচন নিয়ে একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে এ বছর বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে। গত মার্চে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধিদল আগস্টের শুরুর দিকে ভারত সফর করে। এক দশকেরও বেশি সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের বিরোধী দলের মধ্যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রথম দেখা গেছে।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে ভারত যদি নিয়ম রক্ষার খাতিরেও বৈঠক করে থাকে, তার পরও এটিকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের প্রতি ভারতের আচরণ থেকে একটি পরিবর্তন হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য বলেছে যে, ‘নয়াদিল্লির প্রতি বিএনপির নীতিতে কোনো স্পষ্ট পরিবর্তনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখতে পাচ্ছে না ভারত।’

গত জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন অনুসন্ধান মিশন ভারত–বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একটি সংলাপ শুরু করলেও প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে ভারতকে সংযত থাকতে দেখা গেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই বৈঠকের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিবৃতি দেয়নি।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্যগুলোর অনেক আঞ্চলিক পত্রিকায় জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকের সমালোচনা করে নিবন্ধ প্রকাশ করলেও ভারতের প্রভাবশালী জাতীয় গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ডিপ্লোমেটের নিবন্ধে বলা হয়েছে, এটি অনুমান করা ভুল হবে না যে, ইইউ-জামায়াত মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে মন্তব্য না করে বরং নীরবে সয়ে যাচ্ছে ভারত!

এসব উদাহরণ ইঙ্গিত করছে যে, ভারত অতীতের মতো আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে সমর্থনের বদলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নে অনেক বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে। তবে নানা বিষয় থেকে আওয়ামী লীগ হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মোদির মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন তোলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। শেখ হাসিনা ভারতের বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন। ভারত সফরে গেলে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি দেখাও করেন।

৩ আগস্ট ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সহিংসতামুক্ত এবং যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করতে ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নির্বাচনের বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য তৈরির জন্য যে বৈঠক করেছে তারও প্রতিফলন রয়েছে।

বলা যায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সময় ভারত যে নীতি গ্রহণ করেছিল, এবার তাতে অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে। সে সময় নির্বাচন নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মনোভবে বড় পার্থক্য ছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতাসহ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে মোদির দ্রুত অভিনন্দন জানানো বিষয়টিকে অনেকখানি হালকা করে দিয়েছিল। ফলে আওয়ামী লীগও আন্তর্জাতিক ধাক্কা থেকে বেঁচে গিয়েছিল।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মোদি-হাসিনার বন্ধুত্বের কারণেই ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত প্রতিবেশী দেশে এমন একটি সরকার খুঁজে পেয়েছে, যা সন্ত্রাসবিরোধী, ভারতবিরোধী নয় এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, আবার দুশ্চিন্তারও কারণ হতে পারে। সম্প্রতি ভারতের মণিপুর রাজ্যে চলমান সংঘাতের পটভূমিতে মেইতেই সম্প্রদায় বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ পরিস্থিতিতে বলা যায়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার ভারতকে যেসব সুবিধা দিয়েছে, তা নিরঙ্কুশ নয়।

এ অবস্থায় এসে মনে করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের তুলনায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের আচরণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য চিন্তার কারণ হতেও পারে। তবে এটা সঠিক যে, এটা শুধু ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্যই নয়, এর পরবর্তী নির্বাচনগুলোর জন্যও বটে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close