নিউজ

ভাষার মাসে ব্রিটিশ-বাঙালিদের গৌরবোজ্জ্বল অর্জন

ভাষার মাস একুশে

হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের নাম বাংলায় লেখার সিদ্ধান্ত
অর্থ বরাদ্দে সম্মত মেয়র জন বিগস, লণ্ডন মেয়রের উপস্থিতিতে মার্চ মাসেই বাংলা সাইনটি বসার সম্ভাবনা

আবেদনকারী শ‍্যাডওয়েল -এর বাসিন্দা সাবেক ব‍্যাংককর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী

|| সুরমা প্রতিবেদন ||
লণ্ডন, ২৩ ফেব্রুয়ারী : ভাষার মাসে বিলেতের বাংলাদেশী কমিউনিটির সাফল্যের তালিকায় যুক্ত হলো এক গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। বিপুল বাংলাদেশী অধ্যুষিত পূর্ব লণ্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনটির নাম ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলায় লেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিউনিটির পক্ষ থেকে দাবী ওঠার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয় ট্রান্সপোর্ট ফর লণ্ডন বা টিএফএল। আর এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে সম্মত হয়েছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস এবং মার্চ মাসেই বাংলা সাইনটি বসানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে যুক্তরাজ্যের প্রথম কোনো স্টেশন, যেখানে বাংলায় স্টেশনের নাম থাকবে। সম্প্রতি হোয়াইটচ্যাপেল আণ্ডারগ্রাউণ্ড স্টেশনটি নতুন করে নির্মাণ করে চালু করা হয়েছে। এখান থেকেই সংযুক্ত হবে ক্রস রেল। হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে প্রতিদিন হাজার হাজার ভিন্ন ভাষাভাষী ও জাতিসত্তার মানুষ চলাচল করে থাকেন। এ স্টেশনের নাম বাংলায় লেখার জন্য নানা পর্যায় থেকে দাবী ওঠলেও শ্যাডওয়েলের বাসিন্দা, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীই যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে অফিসিয়েলি চিঠি লিখে এই দাবী উত্থাপন করেন। গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি একটি চিঠি লিখেন লণ্ডন মেয়র, ট্রান্সপোর্ট মিনিস্টার ও স্থানীয় এমপি, মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের কাছে চিঠি লিখে উত্তরের অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁর এই চিঠির জবাব আসে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী। উত্তরে ট্রান্সপোর্ট ফর লণ্ডনের একজন মুখপাত্র জেরি হোয়াইট একটি চিঠি লিখে জানান, আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর লেখা চিঠিসহ আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে একই দাবী উত্থাপিত হওয়ায় ট্রান্সপোর্ট ফর লণ্ডন ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় স্টেশনের নাম লেখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। তারা সব পর্যায়ের কাজ শেষ করে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় স্টেশনের নাম লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ চিঠি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পত্রলেখক আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সাথে সাথে তাঁর পরিচিতজনদের কাছে সুসংবাদটি জানান। তাঁর পরিচিতজনসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সরাসরি ও সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তাকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে এ বিষয়ে স্থানীয় বাংলা মিডিয়াসহ বাংলাদেশের মিডিয়ায়ও সংবাদ প্রকাশ পায়।

হোয়াইটচ‍্যাপল স্টেশন: নতুন আঙ্গিকে

দাবীটি গৃহীত হওয়ায় সাপ্তাহিক সুরমাকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি জানান, অনেক আগে থেকে ভারতীয় অধ্যুষিত সাউথহল স্টেশনে ইংরেজীর পাশাপাশি হিন্দিতে লেখা সাইন রয়েছে দেখে তিনি ভাবতে থাকেন যে, কেন আমার বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় স্টেশনের নাম বাংলায় থাকবে না। সম্প্রতি হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনটি সংস্কার হয়ে অবমুক্ত হওয়ার সুযোগে তিনি এই বিষয়ে পত্র লিখেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তিনি টিএফএলসহ সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ এবং তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে সম্মত হওয়ায় টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগসকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ভাষার মাসে আমাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ অর্জন। তাঁর মতে, এটিই হবে যুক্তরাজ্যের প্রথম কোনো স্টেশন, যেখানে বাংলায় স্টেশনের নাম থাকবে।

আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী একই চিঠিতে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে বাংলা সাইন বসানোর দাবী পাশপাশি ক্যাবল স্ট্রিটে ১০৬ নম্বর বাসস্টপেজে একটি বসার জায়গা ও ছাউনির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। টিএফএল সেটিও বিবেচনায় নিয়েছে এবং তারা খুব দ্রুত প্রস্তাবিত জায়গায় ছাউনিসহ বসার জায়গা তৈরির কাজ শুরু করবে বলে তাকে জানিয়েছে।

গৌরবোজ্জ্বল এই অর্জনের সংবাদে কমিউনিটির বিভিন্নজন আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তম্মধ্যে বিলেতের প্রাচীনতম সংবাদপত্র সাপ্তাহিক জনমতের সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন রানার টিভিকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী যে কাজ করেছেন এটি কমিউনিটির জন্য বড় অর্জন। এই বাংলা লেখা পূর্ব লণ্ডনে বাংলাদেশী অভিবাসীদের শক্তিশালী অবস্থানের জানান দেয়। জনমতের বর্তমান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, বাংলাদেশী অভিবাসনের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। এই প্রথম একটি স্টেশনের নাম লেখা থাকবে বাংলায়। এই বর্ণ যারা পড়তে পারেন না, তাদের কাছেও এ ভাষার শক্তি ও সামর্থ্যরে কথা পৌঁছে যাবে। নতুন প্রজন্ম আগ্রহ হবে বাংলা ভাষার প্রতি।

এছাড়া বিষয়টিতে খুশী হয়ে ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী এবং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিকদেশ পত্রিকার সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, বিশিষ্ট কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক কেএম আবু তাহের চৌধুরী, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন ও সাবেক সম্পাদক কবি আহমদ ময়েজ, টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়রের উপদেষ্টা সৈয়দ মনসুর উদ্দিন, বাংলা মিরর সম্পদক আব্দুল করিম গণি, কমিউনিটি নেতা আব্দুল আলী রউফ, আলী মদরিছ, মামুন রশীদ এমবিই, সাংবাদিক আকবর হোসেন, সাংবাদিক মুনজের আহমেদ চৌধুরী, লেখক আনোয়ার শাহজাহান ও কবি কাজল রশীদসহ অনেকে।

উল্লেখ্য, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের খরচে এই নাম লেখা হবে এমন শর্ত জুড়ে দিয়েই ট্রান্সপোর্ট ফর লণ্ডন এ অনুমোদন দিয়েছে। মেয়র জন বিগস ইতোমধ্যে এই শর্ত মেনে নিয়েছেন এবং আগামী মার্চ মাসেই বাংলায় লেখা সাইনটি বসানো হবে মেয়রের একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close