কমিউনিটি নিউজ

চ্যারিটি ওয়ার্কে অনন্য ভূমিকার জন্য এশিয়ান কারী এওয়ার্ড পেলেন চ্যানেল এস ফাউণ্ডার মাহী ফেরদৌস

লণ্ডন, ২৩ নভেম্বর : চ্যারিটি ওয়ার্কে অনন্য ভূমিকার জন্য বিশেষ এওয়ার্ড পেয়েছেন চ্যানেল এস এর ফাউণ্ডার মাহী ফেরদৌস জলিল। ২১ নভেম্বর ১১তম এশিয়ান কারী এওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে মিডিয়ার মাধ্যমে ও ব্যক্তিগতভাবে মানবসেবায় নেতৃত্ব অবদানের জন্য তাকে ‘স্পেশাল রিকোগনিশন’ ক্যাটাগরিতে এ এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। লণ্ডন মিনিস্টার পল স্ক্যালি এমপি এবং এশিয়ান ক্যাটারিং ফেডারেশন (এসিএফ) এর চেয়ারপার্সন ইয়ার খান এ এওয়ার্ড তুলে দেন। এর আগে বিবিসির জনপ্রিয় নিউজ প্রেজেন্টার কেইট সিলভারস্টন মাহী ফেরদৌসের নাম ঘোষণা করেন এবং কমিউনিটিতে চ্যারিটির ক্ষেত্রে তার অসাধারণ সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন।

সেন্ট্রাল লণ্ডনের পার্কলেন গ্রাভনার হাউস গ্রেটরুমের জমকালো অনুষ্ঠানে মাহী ফেরদৌসের ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রর্দশন করা হয়। উল্লেখ্য, মাহী ফেরদৌস জলিল বৃটিশ বাংলাদেশী টেলিভিশন মিডিয়ায় এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেন। তিনি ২০০৪ সালে নিজস্ব স্থাপনায় কমিউনিটিতে প্রথমবারের মতো ফ্রি-ভিউ চ্যানেলের সূচনা করেন। তার পর থেকে কোনো খরচ ছাড়াই অন্যান্য চ্যানেল দেখার সুযোগ পান দর্শকরা। এর আগে মাসিক সাবস্ক্রিপশন তো ছিলোই, মাঝে মধ্যে কোনো কোনো চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেলেও সে অর্থ ফেরত পাননি দর্শকরা। মাহী জলিল আরেকটি বিপ্লব করেছেন টিভিতে লাইভ চ্যারিটি আপীলের সফল সূচনার মাধ্যমে। যার ফলে কমিউনিটির ঘরে ঘরে বিশ্বমানবতার জন্য দানশীলতার একটি মনোভাবও তৈরি হয়েছে।

সাধারণ মানুষের ভাষায় টিভিতে সাবলীলভাবে কথা বলে গণমানুষের কাছে পৌঁছার ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করেছেন মাহী। চ্যানেল এস-এ তার উপস্থাপনায় সাপ্তাহিক লাইভ শো-‘রিয়েলিটি উইথ মাহী’ অনুষ্ঠানে সবসময়ই স্থান পেয়েছে কমিউনিটির হট টপিক, বিশ্ব মানবতা এবং সমাজের চরম বাস্তবতা। লাইভ রিয়েলিটি অনুষ্ঠানে খোলামেলা আলোচনা সমালোচনার কারণেই মাহী জলিল থাকেন আলোচনার চূড়ান্তে। করোনার কঠিন সময়ে ‘কোভিড নাইনটিন’ শিরোনামে লাইভ প্রোগ্রাম ছিলো সাধারণ মানুষের জন্য পরম পাওয়া।

মাহী জলিলের পরামর্শে চ্যানেল এস এর সাথে যুক্ত ইউকে ও আন্তর্জাতিক চ্যারিটিগুলো গত ১৬ বছরে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন পাউণ্ড সংগ্রহ করেছে। সে অর্থে উপকৃত হয়েছেন যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপদগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষ। বাংলাদেশসহ নানা দেশের শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নানা প্রজেক্ট সফলতা পেয়েছে চ্যানেল এসের সহযোগিতায়। মাহী জলিল কোভিড নাইনটিন মহামারীতে ‘লাভ ফর এনইচএস’ এবং ‘ফিড টুয়েনটি থাউজেণ্ড’ নামে চ্যানেল এসের দুটি চ্যারিটি প্রজেক্টে সরাসরি নেতৃত্ব দেন। এনএইচএসকে প্রথমবারের মতো প্রায় ১১৫ হাজার পাউণ্ড ডোনেশন দেয়া হয় কমিউনিটির পক্ষ থেকে। এছাড়া ফিড প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ১০টি জেলায় প্রায় ১৫ হাজারের বেশি পরিবার তথা লাখখানিক মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়া হয়। বাজেট ছিলো প্রায় দেড় কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ‘সেইভ তাফিদা’ নামের একটি মানবিক প্রজেক্টের নেতৃত্বেও ছিলেন মাহী। তিনি নিজে উপস্থাপনায়ও অংশ নেন। এনইচএস এদেশে শিশু তাফিদার চিকিৎসায় অপারগতা দেখালে তার জন্য ১৬০ হাজার পাউণ্ড ফাণ্ডরেইজ করেন মাহী জলিল তথা চ্যানেল এস।

মাহী জলিল মিডিয়া ছাড়াও একসিডেন্ট ম্যানেজম্যান্ট, কন্সট্রাকশন ও প্রপার্টিসহ বেশ কিছু ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন। তার সন্তানরা পড়াশোনায় সফলতার প্রমাণ রাখছে। বড় মেয়ে নাজনিন ফেরদৌসী বিখ্যাত কিংস কলেজে ম্যাডিসিনে ৩য় বর্ষ শেষ করেছেন। একই সাথে সে লণ্ডনের আরেকটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনির্ভাসিটি কলেজ (ইউসিএল) থেকে পলিটিক্স, ফিলোসোফি এণ্ড ইকোনমিক্স (পিপিআই) বিষয়ে ডিসটিংশনসহ গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। ওয়েসমিনস্টারে বসবাসকারী তার প্রবীণ মা ও বাবা ষাটের দশকে লণ্ডন এসেছেন। তাদের গ্রামের বাড় মৌলভীবাজার জেলায়।

এদিকে এশিয়ান কারী এওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে ৬টি স্পেশাল ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশী ছাড়াও ভারত, চায়নিজ, মালয়েশিয়ান, পাকিস্তানিসহ এশিয়ার নানা দেশের সফল রেস্টুরেন্টগুলো এওয়ার্ড লাভ করে। লণ্ডন মিনিস্টার ছাড়াও, কনফেডারেশন অব বৃটিশ ইণ্ড্রাস্ট্রির (সিবিআই) এর প্রেসিডেন্ট লর্ড বিলোমেরিয়া, কয়েকজন এমপি, মেয়র, ইংলিশ ফুটবলের সাবেক ম্যানেজারসহ অন্যান্য বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।

মাহী জলিল বলেন, ‘কখোনোই এওয়ার্ড নিয়ে ভাবিনি। সাধারণভাবে নিজের মন থেকে সমাজ ও কমিউনিটির জন্য কাজ করার চেষ্টা করি। চ্যানেল এস এর যাত্রাও শুরু হয়েছিলো কমিউনিটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে। এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের কোনো আশাও ছিলো না। আর চ্যানেল এসে লাইভ চ্যারিটি আপীলের মাধ্যমে আমরা যে মানুষের জন্য কিছু ভূমিকা রাখছি তা খুবই সুখের বিষয়। কারণ এ দুনিয়ায় আমরা যতোই প্রভাবশালী হই না কেনো,কেউই চিরদিন থাকবো না। শুধু আমাদের কল্যাণকর কাজই টিকে থাকবে লিগেসী হিসেবে। ভবিষ্যত প্রজন্মও উৎসাহিত হবে এসব ভালো কাজের কারণে।‘

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close