কারি লাইফ অ্যাওয়ার্ডস ২০২১
প্রাণজ উৎসবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১৫ অক্টোবর : করালগ্রাসী করোনা পুরো বিশ্বকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। স্তব্ধপ্রায় পৃথিবীতে আবার মানুষ কোনো উৎসবে মেতে উঠবে তা কল্পনাও কঠিন ছিলো। করোনার থাবা এখনো থামেনি। কিন্তু এরই মধ্যে পৃথিবী মানুষ ঘুরে দাঁড়াবার সব চেষ্টা করে যাচ্ছে। মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেসব সেক্টর, তার মধ্যে অন্যতম কারি ইণ্ডাস্ট্রি তথা পুরো হসপিটালি খাত। ধাপে ধাপে লকডাউনসহ করোনার কঠিন বিধিনিষেধ উঠে যাবার পর কারি ইণ্ডাস্ট্রিতেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। মধ্যখাতে ইট আউট হেলপ আউট স্কিমের সময় ছাড়া গত প্রায় দুই বছর বৃটেনের রেস্টুরেন্টগুলোর দরজা প্রায় বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর জন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এই সেক্টরের সংশ্লিষ্টদের। ছিলো না কোনো উৎসব, অনুষ্ঠান। এখন আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়া শুরু করেছে। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে কারি ইণ্ডাস্ট্রিসহ হসপিটালিটি খাতও। কারি ইণ্ডাষ্ট্রির প্রথম এই উৎসবে তাই ছিলো ব্যাপক প্রাণচ্ছ্বোসের প্রকাশ। বক্তারাও ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অনুষ্ঠানের উপস্থাপকদের মুখে তাই স্বমস্বরে উচ্চাতি হয় ‘উই আর ব্যাক’।
দীর্ঘ বিরতির পর প্রথমবারের মতো গত ১০ অক্টোবর, রোববার তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রাণজ উৎসবে মেতে ওঠেছিলো কারি ইণ্ডাস্ট্রি। করোনাকালীন দীর্ঘ বিরতির পর কারি লাইফের উদ্যোগে বর্ণিল অ্যাওয়ার্ড সিরোমনি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সিটি ওয়েস্ট অফ মিনিস্টারের অভিজাত ল্যাঙ্কারশায়ার হোটেল বলরুমে। প্রায় ৬ শতাধিক অতিথির সরব উপস্থিততে কারি ইণ্ডাস্ট্রির প্রাণ শেফ এবং উন্নত সার্ভিস প্রদান করে নির্বাচিত অেনকগুেলা রেস্টুরেন্টেকে মর্যাদাপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে তাদের সেবার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
করোনার চরম ক্রান্তিকালেও আক্রান্ত ও দুস্থ মানুষসহ বিভিন্ন হাসপাতালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেস্টুরেন্টগুলোর পক্ষ থেকে রান্নাকরা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং চ্যারিটির মাধ্যমে অর্থ সাহায্যের বিষয়টিও প্রশংসিত হয়।
বিবিসির প্রবীণ নিউজকাস্টার এঞ্জেলা রিপন ও ব্রেকফাষ্ট অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাইক বুশেলের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি লর্ড বিলিমোরিয়া ও জাষ্ট ইট এর ইউকে একাউন্ট ডিরেক্টর মার্ক ফিঞ্চ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিগত দেড় বছরে করোনা মহামারিতে কারি ই-াষ্ট্রির যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি একটি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘শোনো একটি মুজিবরের কন্ঠ থেকে’ গানটি গেয়ে শোনান বিলেতের বাঙালি কমিউনিটিতে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পি হিমাংশু গোস্বামী। এসময় পেছনে বিশাল স্ক্রীনে তখন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ দেখানো হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন কারি লাইফ এর সম্পাদক সৈয়দ বেলাল আহমদ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কারি লাইফ এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা।
মোট ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৪৬টি এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে, কারি লাইফ এডিটর চয়েস এওয়ার্ড, কারি লাইফ বেষ্ট রেষ্টুরেন্ট, বেষ্ট শেফ, বেষ্ট কাস্টমার চয়েস, বেষ্ট টেকওয়ে ও সাপ্লায়ার অব দ্যা ইয়ার এওয়ার্ড।
হেডলাইন স্পন্সর জাস্ট ইট এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে আরো সহায়তা কওে কোবরা বিয়ার, ইউনিসফট, ওয়ার্ক পারমিট ক্লাউড ও ট্রেভেল লিংক। এতে লেবার ও কনজারভেটিভ এর ৫ জন এমপি উপস্থিত ছিলেন এবং তারা বিজয়িদের হাতে এওয়ার্ড তুলে দেন।
লর্ড করন বিলিমোরিয়া সরকারের “ব্যাক বেটার” কর্মসূচীর সমালোচনা করে বলেন, আমি বিশ্বাস করি এটা হবে বিল্ট ফরওয়ার্ড বেটার।
অনুষ্ঠানের শেষে শিল্পী হিমাংশু গোস্বামী আরও বেশ কয়েকটি সঙ্গীত পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্ধ রাখেন।
অনুষ্ঠান থেকে দুস্থ মানবতার সেবায় দাতব্য সংস্থা এশিয়ান ট্রাস্টের জন্য ২ হাজার পাউণ্ডেরও বেশী অর্থ সংগৃহীত হয়।
এছাড়া কারি লাইফ অ্যাওয়ার্ডস এ- ওয়ার্ল্ড কারি এক্সপো‘র শিরোনামে ৪ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ন্যাশনাল কারি সপ্তাহ উদযাপন করা হয়। এতে বেশকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা তাদের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার সুযোগ পায়।
উল্লেখ্য যে, বিগত দুই বছরের মধ্যে কারি লাইফ ম্যাগাজিন আয়োজিত কারি লাইফ এওয়ার্ড অনুষ্ঠানই ছিল কারি ই-াষ্ট্রির সবচেয়ে বৃহৎ অনুষ্ঠান।