নিউজ

১৭ বৈশ্বিক মিডিয়ার যৌথ অনুসন্ধান: ফোনে আড়িপাতা – বাংলাদেশসহ কাঠগড়ায় ৪৫ দেশ

যেভাবে কাজ করে ইসরাইলী স্পাইওয়্যার পেগাসাস
ভারতে এই বিতর্ক তুঙ্গে: তালিকায় রাহুল গান্ধীসহ বিপুলসংখ্যক বিরোধী রাজনৈতিক ও সাংবাদিকের ফোন
ফোন নজরদারির টার্গেটে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রোসহ বিশ্ব নেতারা
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে টার্গেট করে ভারত

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ২৩ জুলাই : বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক ফোনে আড়িপাতার ঘটনা ফাঁসে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪৫টি দেশের ৫০ হাজারের বেশী স্মার্টফোনে আড়িপাতার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। এসব দেশের রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতা, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা এর শিকার হয়েছেন। ইসরাইলের এনএসও গ্রুপের তৈরী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্পাইয়িং সফটওয়্যার ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করে ফোনে আড়িপাতা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় দ্য গার্ডিয়ানসহ ১৬টি সংবাদমাধ্যমের যৌথ অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ১৮ জুলাই, রোববার বিষয়টি প্রথম গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

প্রকাশিত তালিকায় ‘স্পায়িং সফটওয়্যার’ পেগাসাসে একবার কোনো স্মার্টফোন যুক্ত হলে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার দেয়াল ভেঙে যায়। বেডরুম থেকে যাপিত জীবন নিয়ে ফোনে যে ধরনেরই যোগযোগ হোক না কেন, তা চলে যায় তৃতীয় পক্ষের হাতে। আর এসব তথ্য ব্যবহার করে নজরদারিকারী সরকার বা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির সব কিছু জেনে যায়।

আন্তর্জাতিক প্রথমসারির ওইসব গণমাধ্যমে অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা গেছে যে, বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক ইসরাইলী স্পাইয়িং সফটওয়্যার পেগাসাসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অপব্যবহার করা হয়েছে। কারণ শুধুমাত্র সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের সনাক্ত করার উদ্দেশ্যেই তা তৈরী করেছে নির্মাতা কোম্পানি। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, তা ব্যবহার করা হচ্ছে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মীসহ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিদের বিরুদ্ধে।
প্রকাশিত তালিকায় উন্নয়নশীল ও তৃতীয় বিশ্বের দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যা-, ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশের নামও আছে। কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো এর ব্যবহার করে ভিন্নমত দমনের চেষ্টা করছে। ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এই স্পাইয়িং সফটওয়্যারটির সবচেয়ে বেশী অপব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে ভারতে। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিসহ প্রায় ২শ‘ সাংবাদিকদের ফোন নাম্বার পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। ভারতের ‘স্বৈরাচারী’ নেতা নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধিদের নামও আবিষ্কার করা হয়। তম্মধ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনে আড়িপাতার তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, দেশটির অন্তত ৪০ সাংবাদিকসহ তিন শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোনে নজরদারি চালানো হয়েছে। এছাড়া ফ্রান্সের প্রেসিডন্ট ম্যাঁক্রো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ বিশ্বের প্রায় ১৩ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ফোন নাম্বার পেগাসাস প্রজেক্টে পাওয়া গিয়েছে বলে ইতোমধ্যে ফাঁস তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তম্মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত এবং ফরাসী প্রেসিডেন্ট মরক্কোর টার্গেট হিসেবে তালিকাভূক্ত ছিলেন বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকা প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং এর অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে না। ফলে পেগাসাস ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নাম থাকার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, এবছরের শুরুর দিকে প্রচারিত আল জাজিরার এক দীর্ঘ অনুসন্ধানী ডক্যুমেন্টারিতে বলা হয় পিকসিক্স নামের একটি ইসরাইলী প্রতিষ্ঠানের তৈরী ইমসি ক্যাচার নামের যন্ত্র দিয়ে ওয়াই-ফাই সেলুলার এবং ভিডিও নজরদারী করা হয়। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইসলাইলী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি হয় এবং ২০১৯ সালে পূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরীতে দু‘জন ইসরাইলী গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর চারজন বাংলাদেশী গোয়েন্দাকে প্রশিক্ষণ দেয়। আল জাজিরা তাদের প্রমাণ হিসেবে নথিপত্র, ছবি ও ফুটেজ তখন প্রচার করে।

ভারতে এই বিতর্ক তুঙ্গে: তালিকায় রাহুল গান্ধীসহ বিপুলসংখ্যক বিরোধী রাজনৈতিক ও সাংবাদিকের ফোন
ফোনে আড়িপাতার ঘটনায় ভারতের বিধানসভায় বিতর্ক তুঙ্গে। অভিযোগ, ফোন নজরদারিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের নামও রয়েছে। এ জন্য সংসদে বিরোধীরা সরকারকে সমালোচনা করেছেন। ভারতের নির্বাচন কমিশনের সাবেক সদস্য অশোক লাভাসা, যিনি ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমসন্ত্রী অমিত শাহর নির্বাচনী ভাষণ আপত্তিজনক বলে মনে করেছিলেন, তাঁর নামও এ তালিকায় রয়েছে।

বিস্ময়করভাবে ফোন নজরদারির তালিকায় রয়েছে বিজেপির দুই মন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল ও অশ্বিনী বৈষ্ণর নামও। বৈষ্ণ স¤প্রতি তথ্যপ্রযক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। লোকসভায় তিনি বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রের বদনাম করাই ‘পেগাসাস প্রোজেক্টের’ লক্ষ্য।
পেগাসাস নজরদারি নিয়ে সংসদে বিরোধীরা একযোগে সরকারকে চেপে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ বলেছেন, ওই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য খামোখা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা। সেটাও সংসদের অধিবেশনের ঠিক আগে, যা নিছকই কাকতালীয় নয়। তিনি বলেন, ভারতীয় গণতন্ত্র ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বদনাম করাই ‘পেগাসাস প্রোজেক্টের’লক্ষ্য। দেশজোড়া কৌতূহল ও বিরোধীদের প্রতিবাদের মধ্যে এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারতে কোনোরকম অবৈধ নজরদারী চালানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে দেশে ফোনে আড়ি পাতা বা নজরদারির ঘটনা যে হচ্ছে না, মন্ত্রী তা বলেননি। তিনি বলেছেন, বেআইনিভাবে কোনো নজরদারী বা আড়িপাতা চালানো এ দেশে সম্ভব নয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ার–-এ প্রকাশিত এই খবরকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন। শুরু হয় ভারতীয় সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। শুরু থেকেই পেগাসাসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধীরা সরকারকে কোণঠাসা করতে থাকেন। লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই কক্ষেই বিরোধীদের বাধায় স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। লোকসভার সদস্যদের সঙ্গে প্রথাগতভাবে নতুন মন্ত্রীদের পরিচয় করানোর সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাধা দেন। বিরোধী সদস্যরা হাতে প্লেকার্ড নিয়ে সভার ‘ওয়েলে’ নেমে আসেন। কৃষি আইন প্রত্যাহার, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, মাত্রাছাড়া মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের নজরদারির বিরোধিতাও করতে থাকেন তাঁরা। আগামী দিনে সংসদে সরকারকে এই চাপের মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দিন কয়েকের মধ্যে আরও নামের তালিকা প্রকাশ হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

পেগাসাসের তালিকায় ভারতের অন্তত ৩০০ রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, বিজ্ঞানীর নাম থাকার কথা জানিয়েছে দেশটির নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়্যার। তবে ভারত সরকার এই নজরদারির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে টার্গেট করে ভারত:
ইসরাইলি সাইবার গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসও) তৈরী স্পাইওয়্যার পেগাসাসের নজরদারির তালিকায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ফোনও ছিল বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। ইমরানের নাম্বারও হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে করেছে জানিয়েছে ডন। তবে সেই চেষ্টা সফল হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। এছাড়া পাকিস্তানের কমপক্ষে ১০০টি ফোন নম্বর পেগাসাসের টার্গেট তালিকায় ছিল বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আর যে ১৬টি শীর্ষ সংবাদমাধ্যমের যৌথ উদ্যোগে এব্যাপারে অনুসন্ধান হয়েছে তাদের অন্যতম গার্ডিয়ান তাদের একটি প্রতিবেদনে ইমরান খানকে ভারত কর্তৃক টার্গেট করা হয় বলে উল্লেখ করেছে।

যেভাবে ফোন হ্যাক করে কাজ করে ইসরাইলী স্পাইওয়্যার পেগাসাস:
কোনো বেসরকারী কোম্পানির তৈরী করা সবচেয়ে শক্তিশালী স্পাইওয়্যারের নাম খুব সম্ভবত পেগাসাস। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিকদেও ফোনে নজরদারী চালানোর ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ইসরায়েলি কোম্পানী এনএসও গ্রুপের তৈরী করা এই সফটওয়্যার নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। এই নজরদারির সফটওয়্যার কী করে কাজ করে সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানসহ ১৬টি সংবাদপত্রের অনুসন্ধানের মধ্য দিয়েই পেগাসাস কেলেঙ্কারী প্রকাশ্যে এসেছে। বলা হচ্ছে, এনএসও গ্রুপ থেকে এই স্পাইওয়্যার কিনে নিজের দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর নজরদারী চালিয়ে আসছে ‘কর্তৃত্ববাদী’ সরকারগুলো।
গার্ডিয়ান লিখেছে, পেগাসাস যদি একবার কারো ফোনে ঢোকার পথ করে নিতে পারে, তাহলে সে অগোচরে ওই ব্যক্তির ফোনকে পরিণত করবে ২৪ ঘণ্টার এক নজরদারির যন্ত্রে।
ফোনে যতো মেসেজ আসুক বা পাঠানো হোক, পেগাসাস তা কপি করে পাঠিয়ে দিতে নির্দিষ্ট জায়গায়। ফোনে থাকা ছবির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।
এই সফটওয়্যার ফোন কল রেকর্ড করতে পারে, এমনকি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে আপনার ভিডিও ধারণ করতে পারে।

আপনি হয়ত হাতের কাছে ফোন রেখে কারও সাথে কথা বলছেন। পেগাসাস আপনার ফোনের মাইক্রোফোনকে জাগিয়ে তুলে আপনার অজান্তেই সেই আলাপ রেকর্ড করে ফেলতে পারে।
আপনি কোথায় আছেন, কিংবা কোথায় গিয়েছিলেন, কার সাথে দেখা করেছিলেন — সেসব বিষয়ও পেগাসাস চিহ্নিত করার ক্ষমতা রাখে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলী কোম্পানি এনএসও গ্রুপ বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে পেগাসাস নামের এই ‘হ্যাকিং সফটওয়্যার’ বা ‘স্পাইওয়্যারটি’ বিক্রি করেছে। আইওএস বা অ্যাণ্ডরয়েডে চলে এমন শত কোটি ফোনে নজরদারী চালানোর ক্ষমতা এই পেগাসাস সিস্টেমের রয়েছে।
পেগাসাসের প্রথম দিককার একটি সংস্করণের কথা গবেষকরা জানতে পারেন ২০১৬ সালে। সে সময় নির্দিষ্ট ব্যক্তির ফোনে টেক্সট মেসেজ বা ইমেইলে পাঠানো হত, যাতে থাকত কোনো লিংক। সেই লিংকে ক্লিক করলেই ফোনের দখল নিতো পেগাসাস ।
গার্ডিয়ানের তথ্য মতে, সেই সময়ের তুলনায় এনএসও তাদের এই নজরদারির যন্ত্রের অনেক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এখন ক্লিক না করলেও ওই ফোনের দখল নিতে পাওে পেগাসাস। আবার সফটওয়্যারের ত্রুটি বা বাগ ব্যবহার করেও এ স্পাইওয়্যার ঢুকে পড়তে পাওে ফোনে, যে ত্রুটির কথা হয়ত ফোন উৎপাদকরা জানেই না।
২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, ওই ধরনের ত্রুটির সুযোগ নিয়ে এনএসওর সফটওয়্যার ১৪০০ ফোনে ম্যালওয়ার পাঠিয়েছিল। সেজন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তির ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে শুধু একটি কল করা হত। আর ওই কলের মধ্য দিয়েই পেগাসাসের কোড ফোনে ইনস্টল হয়ে যেতো।
সা¤প্রতিক সময়ে অ্যাপলের আইমেসেজ সফটওয়্যারের ত্রুটি ব্যবহার করে স্পাইওয়্যার পাঠানো শুরু করে এনএসও। অ্যাপল বলছে, এ ধরনের হ্যাকিং ঠেকাতে তারা সবসময় তাদের সফটওয়্যার আপডেট করে যাচ্ছে।

কারিগরিভাবে পেগাসাস কীভাবে করে কাজ করে, কোনো ফোনে আক্রমণ করার পর সেখানে কী ধরনের চিহ্ন থেকে যায়, তা বোঝার জন্য কাজ করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্লিনভিত্তিক সিকিউরিটি ল্যাবের গবেষক ক্লডিও গুয়ারনিয়েরি।
তিনি বলেন, যার ফোন আক্রান্ত হল, তার পক্ষে সেটা বোঝা খুবই কঠিন। সাধারণত ফোন কেনার সময় থাকে এরকম কোনো সফটওয়্যার, যেমন আইমেসেজ, অথবা খুব জনপ্রিয় কোনো সফটওয়্যার যেমন হোয়াটসঅ্যাপ — এসব সফটওয়্যারের কোডিংয়ের ত্রুটি খুঁজে বের করে এনএসওর মতো কোম্পানিগুলো। কারণ তাতে একসঙ্গে বহু ফোনে স্পাইওয়্যার ছড়ানোর সুযোগ মিলে যায়। এ ধরনের ক্ষেত্রে ফোনের মালিক স্পাইওয়্যারবাহী মেসেজে ক্লিক না করলেও তার ফোন ‘হ্যাকড’ হয়ে যায়। অ্যামনেস্টির ল্যাবে গবেষকরা দেখেছেন, অ্যাপলের আইওএসের সর্বশেষ সংস্করণ ব্যবহার করছেন, এমন আইফোন গ্রাহকদেও ফোনেও পেগাসাস সফলভাবে হানা দিতে পেরেছে। এমনকি চলতি জুলাই মাসেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
ভিকটিমদেও ফোনের ফরনসিক অ্যানালাইসিস করে দেখা গেছে, সাধারণ কৌশলে কাজ না হলে টার্গেটের আশপাশ থেকে কোনো ওয়্যারলেস ট্রান্সরিসিভার ব্যবহার করেও নির্দিষ্ট ফোনে পেগাসাস ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। আর একবার ফোনে ঢুকে পড়তে পারলে এই স্পাইওয়্যার প্রায় সব ধরনের তথ্য বা ফাইলই কব্জা করার সুযোগ পায়। এসএমএস, অ্যাড্রেস বুক, কল হিস্ট্রি, ক্যালে-ার, ইমেইল এবং ইন্টারনেটের ব্রাউজিং হিস্ট্রি সবই সে দেখাতে পারে।

পেগাসাস যখন কোনো আইফোনে সফল আক্রমণ হানতে পারে, তখন সে ওই ফোনের বা ডিভাইসের অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ ক্ষমতা পেয়ে যায়। ফোনের মালিক যা করতে পারেন, পেগাসাস তখন তার চেয়েও বেশী কিছু করতে পারে। গার্ডিয়ান লিখেছে, এনএসওর আইনজীবী অ্যামনেস্টি ল্যাবের অনুসন্ধানে পাওয়া প্রমাণগুলোকে ‘ভিত্তিহীন অনুমান’ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, যদিও তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো বিষয়কেই অস্বীকার করার চেষ্টা করেননি।
কোনো ফোনে এই স্পাইওয়্যারের অস্তিত্ব যাতে ধরা না যায়, সেজন্য অনেক খাটাখাটনি করেছে এনএসও। গবেষকদের ধারণা, পেগাসাসের নতুন সংস্করণ ফোনের হার্ড ড্রাইভের বদলে বাসা বাঁধছে শুধু টেমপোরারি মেমোরিতে। ফলে ফোনের পাওয়ার বন্ধ করে দিলে দৃশ্যত ওই স্পাইওয়্যারের আর কোনো অস্তিত্ব থাকছে না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, ফোনের নিরাপত্তা নিয়ে যিনি সবচেয়ে বেশী সচেতন, তিনিও এই স্পাইওয়্যারের আক্রমণ থেকে নিরাপদ নন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close