নিউজ

ফ্রান্সে করোনা এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের জীবন যাত্রায় এর প্রভাব

।। শামসুল ইসলাম ।।
লণ্ডন, ১৯ জুলাই : কভিড মহামারীতে নাকাল গোটা বিশ্ব। মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে সমাজ,রাষ্ট্র সর্বোপরি মন জগতে আঘাত হেনেছে এই অদৃশ্য ভাইরাস। গেল দুই বছর ধরে মানুষের দীর্ঘ দিন ধরে চলা স্বাভাবিক জীবনে মারাত্মক ছন্দ পতন ঘটেছে এই অতিমারির কারনে। কতজন হারিয়েছেন তার আপনজকে, অনেকে ফিরে এসেছন মৃত্যুর একেবারে কাছে থেকে! আক্রান্ত অনেকে এখনো ভূগছেন কভিড পরবর্তী নানা শারিরীক, মানসিক, অর্থনৈতিক জটিলতায়।

বিশ্বের আর সব দেশের মত ফ্রান্সেও এই মহামারি তার রুদ্র মূর্তি দেখিয়েছে। আক্রান্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিলের পরই আছে ফ্রান্স। মৃত্যু বিবেচনায় শীর্ষ দশটি দেশের একটি এটি। ফ্রান্সে বসবাস করছেন লক্ষাধিক বাংলাদেশী। সংগত কারনেই তাদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন ভয়াবহ এই ভাইরাসে। অনেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হিম শীতল পরশ অনুভব করেছেন। সর্বশেষ কভিড আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন ফ্রান্সের বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র জসীম উদ্দিন ফারুক। দেশটিতে এ পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশি কভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দূতাবাসের কাছে নেই। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে এ সংখ্যা বিশের উপরে।

কভিড মহামারী মোকাবিলায় বিশেষত বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে জোরেশোরে চলছে টিকা দান কর্মসূচী। শুরুর জটিলতা কাটিয়ে ফ্রান্সেও চলছে জোর ভেকক্সিন কার্যক্রম।
এমাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় তিন কোটির উপরে মানুষ টিকা নিয়েছেন ল যা ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এছাড়া প্রায় দেড় কোটি মানুষ নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজ। ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে শুরুতে টিকা নিয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ থাকলেও পরবর্তীতে তা কেটে যায়, ভেক্সিন নিচ্ছেন অধিকাংশ প্রবাসী। পঞ্চাশোর্ধ ফজল মাহমুদ জানান, প্রথমে আষ্ট্রাজেনিকার টিকা নিয়ে অনেক শংকা ছিল, এখন ধীরে ধীরে সবাই টিকা নিচ্ছে তাই তিনিও পরিবার নিয়ে টিকা নেয়ার তারিখ নিয়েছেন অনলাইনে।

ইতিমধ্যে ফ্রান্সে তৃতীয় দফার লক ডাউন তুলে নেয়া হয়েছে, ফরাসিরা বেড়াতে যাচ্ছে, সিনেমা হলে যেতে পারছে, জিমনেসিয়াম খোলে দেয়া হয়েছে। খুলা হয়েছে রেস্টুরেন্টে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে জীবন যাত্রা। এমনকি মাস্ক ব্যবহারেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্বের সব দেশে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। ফ্রান্সও এর ব্যতিক্রম নয়। এ দেশে বাংলাদেশীদের নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে সেবাখাতে যে সব বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসব খাতে অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক বেশী। বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোতে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশী এবং দক্ষিন এশিয়ার গ্রাহকরাই বেশী আসেন।
করোনার সময়ে লকডাউনের কারনে বেশীরভাগ রেস্টেুরেন্ট বন্ধ রাখা হলেও অনেক রেস্টুরেন্টে খবার ডেলিভারী দেয়ার সুযোগ থাকায় তারা বেশী একটা ক্ষতির সম্মুখীন হননি। রেস্টুরেন্টগুলো খোলা না থাকায় অনেকের কাজের সুযোগ কমে গেছে। বেকারত্বের হার পুর্বের যে কোন সমরেয়র চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে জানা যায়।
মুদি দোকান গুলো খোলা রাখা গেলেও পর্যাপ্ত ক্রেতা না থাকায় তাদের ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর বাইরে ফ্রান্সে বাংলাদেশী নিয়ন্ত্রিত সাইবার ক্যাফেগুলোও বন্ধ রাখার জন্য সেখানে কর্মরত অনেকের চাকুরী চলে গেছে। তাদের একটা বড় অংশ পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।

ফ্রান্সে সামাজিক প্রনোদনা ও অন্যান্য আর্থিক সহায়তা দেয়ার হার ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বেশী হলেও যাদের বৈধভাবে কাজ করার অধিকার নেই তারা কোন রকমের সরকারী আর্থিক প্রনোদনা পাননি। যাদের বৈধভাবে কাজের অনুমতি রয়েছে তারা প্রতিমাসে বেকার ভাতা পেয়েছেন। এর ফলে তাদের জীবন যাত্রায় খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
উবার ও ডেলিভারো’র মতো খাবার ডেলিভারীর কাজ যারা করতেন এ সময় তাদের কাজের সুযোগ অরেক বেড়েছিলো বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।
খাবার ডেলিভারি প্রতুষ্টান ডেলিভেরোতে কাজ করেন, শাহীন মোহাম্মদ, তার মতে করোনাকালে অন্যসময়ের চেয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন একাজে নিয়োজিত কর্মজীবীরা।

ফ্রান্সে যারা নিজের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়েছিলেন তারা এ সময় আর্থিক প্রনোদনা পেয়েছেন। তবে এ হার খুব একটা উল্লেখযোগ্য নয় বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ফ্রান্সে লকডাউন ও করোনার জন্য আরোপিত বেশ কিছূ বিধি নিষেধ তুলে দেয়ায় আবারও এ দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে নতুন করে।
করোনার প্রভাবে ফ্রান্সে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের জীবনে অনেক পরিবর্তন আনলেও আগামীতে সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করে তাদের জীবনের মোড় ঘুরাতে পারবে বলে আশাবাদী ফ্রান্সে একটি অনলাইন গ্রোসারি সপ ইজিবাজারের প্রতিষ্টাতা আবু তাহের।

নতুন নতুন কর্মসংস্থান এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে অভিযোজনের যে অভিজ্ঞতা ফ্রান্সের বাংলাদেশীরা অর্জন করলেন এর প্রভাবে আগামীতে তারা দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close