১৯ জুলাই বিধিনিষেধ শিথিলে চরম মূল্যের হুঁশিয়ারী বিশেষজ্ঞদের: সামারে ২ মিলিয়ন আক্রান্তের আশঙ্কা

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৯ জুলাই : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৯ জুলাই করোনা প্রতিরোধে জারিকৃত ইংল্যাণ্ডের লকডাউন বিধিনিষেধ প্রায় তুলে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং হেলথ সেক্রেটারি সাজিদ জাভেদ প্রায় সমস্বরে বলেছেন, করোনাকে সঙ্গী করেই বাঁচতে হবে।
হেলথ সেক্রেটারির দায়িত্ব নিয়েই সাজিদ জাভিদ ঘোষণা দিয়েছেন করোনা বিধি-নিষেধ তুলে নেয়ার মেয়াদ আর বাড়াবেন না তিনি। ১৯ জুলাই এর শেষ দিন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও একই কথা বললেন।
বরিস জনসন দেশবাসির উদ্দেশে বলেছেন, করোনা নিয়েই বাঁচতে শিখতে হবে। এই ভাইরাস নির্মূল হবে না। তবে এই ভাইরাস মোকাবেলায় টিকা বেশ ভালই কার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে। লকডাউন কিছুটা শিথিল করার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু মৃত্যুর ঘটনা সেভাবে ঘটছে না। আক্রান্তদের আবার আগের মত হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে না। ফলে করোনা বিধি-নিষেধ তুলে নেয়ার জন্য এটি উপযুক্ত পরিবেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সকল প্রাপ্তবয়স্ককে করোনার টিকা দেয়ার কাজ শেষ করার লক্ষ্যে চেষ্টা চলছে। দুই ডোজ টিকা দেয়ার পর ৫০ বছরের বেশী বয়সীদের তৃতীয় একটি ডোজ দেয়া হবে। এই তৃতীয় ডোজ দেয়ার কাজ আসছে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সরকার।
ঘরে বন্দী করে রেখে নয়, টিকার সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি আর স্থবির করে রাখা ঠিক হবে না। তাই করোনা বিধি-নিষেধ তুলে নিতে হবে। এদিকে, বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলে আসছে গ্রীষ্মে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধিসহ বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাধ্যতামূলক সেলফ-আইসোলেশনে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, সামারে কোভিড সংশ্রবে যাওয়া মানুষের পরিমাণ ২ মিলিয়নে উত্তীর্ণ হওযার আশঙ্কা রয়েছে। যার ফলে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ১০ মিলিয়ন মানুষকে বাধ্যতামূলক সেলফ-আইসোলেশনে যেতে হতে পারে। এতে করে ব্যাপক আকারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
এই পরিসংখ্যানটি এসেছে হেলথ সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদের লকডাউন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ঘোষণার পর। সাজিদ হাউজ অব কমন্সে বলেছেন, ১৯ জুলাই থেকে ইংল্যাণ্ড তার লকডাউন নিয়মের ব্যয়বহুল বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে ‘অরক্ষিত অঞ্চলে’ প্রবেশ করছে। গ্রীষ্মকালে নতুন সংক্রমণ সহজেই একদিনে ১০ লক্ষের উপরে উঠতে পারে এবং মহামারীটির যে কোনও মুহুর্তের চেয়েও বেশী হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হেলথ সেক্রেটারি আরো ঘোষণা করেন যে, ১৬ আগস্টের পর যারা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তারা কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পরও তাদের আলাদা করতে হবে না, ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রেও সমান নিয়ম। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিধি তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কমপক্ষে ১০ দিন পরে তা প্রযোজ্য হবে। এছাড়া বাকী প্রাপ্তবয়স্কদে মধ্যে যারাই কোভিডের সংস্পর্শে যাবেন তাদের তাকে অবশ্যই আইন মেনে আইসোলেশনে যেতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বর্তমানে যুক্তরাজ্য জুড়ে দিনে মাত্র ২৯,০০০ এর নিচে রয়েছে। হেলথ সেক্রেটারিও তাঁর বক্তব্যে সংসদ সদস্যদের মডেরিং পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেছেন যে, ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে এই সংখ্যাটি দিনে ৫০,০০০ এবং পরে গ্রীষ্মে দিনে ১০০,০০০ হাজারে গিয়ে পৌঁছতে পারে। এছাড়া, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করলে চরম মূল্য দিতে হবে জানিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেসব দেশ এখনই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছে কিংবা যাওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে একে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত অ্যাখা দিয়েছেন সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা।
করোনার সংক্রমণ কোনও দেশে কমছে আবার কোথাও বাড়ছে। এরমধ্যে করোনার অতিসংক্রামক ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং ডেল্টা প্লাস ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বের একশ’টির বেশী দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেল্টা।
সংক্রমণের মধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশ বিধিনিষেধে শিথিলতা আনছে। ফলে সেখানে আবারও সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি জাতিংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান বলেন, বিশ্বে নতুন করে সংক্রমণ শুরু হতে পারে।