বাংলাদেশের বাংলা ভাষা: আন্দোলন ও নানান প্রেক্ষাপট
।। আরিফুল হক ।।
(১ম পর্ব)
এসেছে ফেব্রুয়ারী মাস, বাংলাদেশের ভাষা প্রতিষ্ঠার মাস । ১৯৪৮ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল কায়েদে আযম মহম্মদ আলী জিন্না ঘোষণা করলেন যে উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ! না, না, চিৎকার । তারপর ধুন্ধুমার প্রতিরোধ । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আন্দোলনকারীদের মিছিলে সরকারি পুলিশের গুলিতে সালাম বরকত, রফিক, শফিক, মতিউর এই পাঁচজন শহীদানের জীবনদানের মধ্যদিয়ে বাংলা ভাষার বিজয় অর্জন । ফেব্রুয়ারী মাস সম্পর্কে এমনি একটি গল্পই আমরা শুনে থাকি, যেটা বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস নয় ।
বাংলাভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস কেবল পাকিস্তান আমলেই সীমাবদ্ধ নয় । বাংলাভাষার লড়াইয়ের ইতিহাসের শুরু হয়েছে ১২শ শতক থেকে । যখন বহিরাগত ব্রাহ্মন্যবাদী সেন বর্মণ রাজারা এদেশটা দখল করে, বর্ণাশ্রম প্রথা পাকাপোক্ত করতে এদেশের মানুষের নিজস্ব ভাষাকে নিষিদ্ধ করার জন্য দমন-নির্যাতন শুরু করেছিলেন । তারা এদেশের মানুষের ভাষাকে ‘ইতর’ ও ‘পক্ষীভাষা’ বলে ঘৃনা ছড়াতো, বলতো— যারা এই ভাষায় পুরাণ, মহাভারত, বা রামায়ন শ্রবণ করবে, তাদের স্থান হবে কঠিন ‘রৌরব’ নরকে । ব্রাহ্মন্যবাদী নিপীড়নে সেযুগের বাংলাভাষার সাহিত্যিকগণ বাংলাদেশের মাটি থেকে এমনভাবে উৎখাত হয়েছিলেন যে, সেযুগের বাংলাভাষার চিহ্ন পর্যন্ত এদেশের মাটিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি । যার ফলে এই মাত্র সেদিন, ১৯০৭ সালে ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে (১৯২১-২৪ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন ) সুদূর নেপাল থেকে ‘চর্যাপদ’ নামক প্রাচীন বাংলাভাষার ৪ খানি পুঁথি সংগ্রহ করে আনতে হয়ছিল। বাংলাভাষা আন্দোলনের শুরু সেই দিন থেকেই ।
১২শ শতাব্দীতে মুসলমানরা বিজেতা হিসাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ।রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তারা নির্যাতিত বাংলাভাষাকে বুকে টেনে নেয়, এবং তাদেরই অক্লান্ত চেষ্টা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় পতিত বাংলাভাষা রাজআসনে প্রতিষ্ঠিত হয় ।এখানে বলতে দ্বিধা নেই যে উপমহাদেশের দুইটি সমৃদ্ধ ভাষা , বাংলা এবং উর্দুর জন্মদাতা মুসলমানেরাই । শিক্ষাবিদ দীনেশ চন্দ্র সেন লিখেছেন – “মুসলমান বিজয়ের পূর্বে বাংলাভাষার এমন কিছু আবিষ্কৃত হয় নাই যাহা সাহিত্য পদবাচ্য । পাল রাজাদের সময় যেসব মনসাদেবীর গান সারারাত জাগিয়া গ্রাম্য লোকে গাহিত , তাহা সাহিত্য নয় , অশ্লীল সাহিত্য ।… “আমাদের বিশ্বাস মুসলমান কর্তৃক বঙ্গবিজয়ই বঙ্গভাষার এই সৌভাগ্যের কারন হইয়া দাঁড়াইয়াছিল । মুসলমানরা ইরান, তুরান প্রভৃতি যে স্থান হইতেই আসুন না কেন, এ দেশে আসিয়া সম্পূর্ণভাবে বাঙালী হইয়া পড়িলেন”।(দীনেশ সেন: বঙ্গ ভাষা ও সাহিত্য ১ম খন্ড)সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলা ভাষার মুক্তির লড়াই কেবল ১৯৫২ সালেই সীমাবদ্ধ নয় । আর্যব্রাম্ভন কর্তৃক ডোম -চন্ডালের ভাষা বলে কথিত কুখ্যাতি মোচন করে বাংলাভাষাকে রাজদরবারে তুলে আনতে সেদিও বাংলার মুসলমানরা সংগ্রাম করেছিলেন ।
আমাদের মনে রাখতে হবে ভাষার অর্থনৈতিক সামর্থই ভাষাকে টিকে থাকতে শক্তি যোগায় । পলাশীর যুদ্ধে মুসলমানদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পতনের সূত্র ধরে ১৭৫৭ সালের পর বাংলাভাষা আবার আর্যব্রাম্ভন্যবাদী নির্যাতনের শিকারে পরিনত হয় । এইসময় বৃটিশ শোষক এবং তাদের তাবেদার স্ংস্কৃত -পণ্ডিতগণ যোগসাজস করে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলে সংস্কৃতি শব্দবহুল এক পণ্ডিতি ভাষার জন্ম দেয় ।
১৮০০ খৃষ্টাব্দে ইংরেজদের উদ্যোগে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করা হল । সেই কলেজের বাংলা বিভাগের কর্তা হলেন , শ্রীরামপুরের পাদ্রী উইলিয়াম কেরী ! কেরীর অধীনে পণ্ডিত নিযুক্ত হলেন মৃত্যুঞ্জয় তর্কালঙ্কার, রামনাথ বিদ্যাবাচস্পতি ,রামরাম বসু , শ্রীপতি মুখোপাধ্যায় ,আনন্দ চন্দ্র , কাশীনাথ পদ্মলোচন চূড়ামনি প্রমূখ সংস্কৃত পন্ডিতগণ ! তারা জনসাধারণের মুখে প্রচলিত আরবী ফারসি শব্দবহুল বাক্যরীতির মূল ধারাটি উচ্ছেদ করে, সামন্ত পণ্ডিতদের উপযোগী নতুন এক সংস্কৃত বাংলা জনসাধারণের উপর চাপিয়ে দিলেন সেইথেকে সহজ সরল মানুষের ভাষা রূপান্তরিত হল পণ্ডিতি ভাষায়।এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক স্যার জর্জ এব্রাহাম গ্রীয়ারসন বলেছেন , “ শতকরা ৯০টি প্রকৃত বাংলা শব্দের স্থলে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সংস্কৃত শব্দ বসিয়ে বাংলাভাষাকে তথাকথিত সাধু ভাষা বানাতে চেয়েছেন সংস্কৃত পণ্ডিতগণ “। বহুভাষাবিদ ন্যথানিয়াল হ্যালহেড বলেছেন -“বাংলা গদ্যের এই নবরূপায়ন ঐতিহ্য বিরোধী এবং বাংলাভাষার স্বাভাবিক বিকাশ কে ব্যাহত করেছে “। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “ এই প্রয়াস সমসাময়িক মুসলিম বিদ্বেষী রাজনীতি থেকে আলাদা করে দেখার উপায় নেই “।ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘’ যদি পলাশী ক্ষেত্রে বাংলার মুসলমানদের ভাগ্যবিপর্যয় না ঘটিত তাহা হইলে পুঁথির ভাষাই বাংলার হিন্দু মুসলমানের পুস্তকের ভাষা হইত”।এক্ষেত্রেও দেখা যায় যে ১৭৫৭ সালের পর বাংলাভাষার উপর আর একবার ব্রাম্ভন্যবাদী নির্যাতন নেমে আসে । সে সময় এই পূর্ববাংলার মানুষের কথ্যভাষার শতকরা ৬০% টির মত ছিল আরবী পারসি শব্দ । সেই শব্দাবলিকে ‘যাবনিক শব্দ’ ‘ম্লেচ্ছ স্বর’ বলে ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাভাষাকে আর্যসংস্কৃতের কন্যা সাজিয়ে শুচিশুদ্ধ করা হল । মুসলমান আমলের বাংলাকে বলা হল অপাঠ্য, কদর্য্য , এবং ফোর্টউইলিয়ামের পণ্ডিতদের গড়া সংস্কৃত-প্রধান দূর্বোধ্য যে বাংলা সৃষ্টি হল তার নাম দেয়া হল সাধুভাষা !আসুননা , সেই সাধু ভাষার একটু নমুনা, ফোর্টউইলিয়ামের পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় তর্কালঙ্কারের লেখা থেকেই দেখে নেয়া যাক । প্রবোধ চন্দ্রিকায় তাঁর লেখা থেকে— “অকারাদি ক্ষকারান্তাক্ষর মালা যদ্যপি পাঞ্চাশৎ সংখ্যকা কিম্বা এক পঞ্চাশ কিম্বা সপ্তাপঞ্চাশ সংখ্যা পরিমিতা হউক তথাপি এতাবন্মত্র কতিপয় বর্ণাবলি বিন্যাস বিশেষ বশত বৈদিক লৌকিক সংস্কৃত প্রাকৃত পৈশাচাদি অষ্টাদশ ভাষা ও নানা দেশীয় মনুষ্যজাতীয় ভাষা বিশেষ বশত অনেক প্রকার ভাষা বৈচিত্র শাস্ত্রতো লোকতর প্রসিদ্ধ আছে, যেমন কুহ ধ্বনিতুল্য ধ্বনি নিষাদ স্বর গোরবানুকারী ঋষভ স্বর কুঞ্জর “। এই ভাষা যা জনগণের বোধগম্য হলনা, কিন্তু হিন্দু-পণ্ডিতগণ এই সংস্কৃত ভারবনত দূর্বোদ্ধ ভাষারই প্রশংসা করে বললেন— ‘এবার প্রকৃতই বাংলাগদ্যের সূচনা হইল’। বাংলার শিশু জন্মগ্রহণ করে প্রথম যে শব্দ উচ্চারণ করে সেই ‘মা’ শব্দ যে সংস্কৃত ভাষায় নেই, বাংলার ভূমিপুত্র দ্রাবিড়দের ‘আম্মা ‘ডাকটি যে ভাষায় লোপ পেয়েছে, সেই জনবিচ্ছিন্ন সংস্কৃত শব্দবহুল বাংলাকেই বলাহল শুদ্ধবাংলা । বাংলা ভাষার চির বৈরি সংস্কৃতকে বলা হল, সংস্কৃতই অরিজিন্যাল ভাষা, বাংলা হল সংস্কৃত ভাষার মানসকন্যা । যে ভাষা ঘরে বাইরে সর্বত্র সকল মানুষের কাজের এবং প্রয়োজনের মূখ্য ভাষা সেই ভাষার ক্রমাবলুপ্তি অন্য সকলে মেনে নিলেও মুসলমানরা মেনে নিতে পারেনি । তারা বরাবরই বিশ্বাস করে এসেছে লালনের গান, হাসনরাজার গানসহ বাংলাদেশের গ্রামীণ গানে বাঁধা আছে যে ভাষা সেই ভাষাই তাদের নিজস্ব ভাষা । বাংলার কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, জসীমউদ্দীন প্রমূখ যে হারানো পুঁথি সাহিত্যের ভাষা এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের ভাষা সম্পদ নিয়ে আধুনিক সাহিত্যের নবদিগন্ত রচনা করে ছিলেন বাংলাদেশের মানুষ সেই হারানো বাংলাভাষাকেই ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন , যা ৫২এর ভাষা আন্দোলনের গানে-শ্লোগানেও মূর্ত হয়ে উঠেছিল,— “কইতো যাহা আমার দাদায়, কইছে যাহা আমার বাবায়, এখন কওদেখি ভাই মোর মুখে কি অন্য কথা শোভা পায়”! “ওরা আমার মায়ের ভাষা কাইড়া নিতে চায়”! তাই ভাষাবিস্ফোরণ ১৯৫২ সালে ঘটলেও এর প্রকৃত সূচনা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে, এদেশের মুসলমানদের আত্মদর্শনের পর থকেই । ১৯১১ খৃষ্টাব্দে রংপুর প্রাদেশিক শিক্ষা সম্মেলনে জনাব নওয়াব আলী চৌধুরীই সর্বপ্রথম বাংলাকে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ প্রদেশের সরকারি ভাষাকরার দাবী জানিয়ে বলেছিলেন— “বাংলাভাষা বাঙালী মুসলমানদের মাতৃভাষা, এ ভাষা আমাদের জাতীয় ভাষা”। এ ইতিহাস আজ বিলীন ! কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৮ সালে মি. গান্ধীকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন— “The only possible language for inter provincial inter course is Hindi in India”. (রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জী, রভাত মুখপ্যাধ্যায়) । বাঙালী কবি রবীন্দ্রনাথ কতৃক হিন্দিভাষার পক্ষে ওকালতির প্রতিবাদে, ভাষাবিজ্ঞানী ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯১৮ সালেই, বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বলেছিলেন,— “ভাষাতাত্বিক দিক থেকে বাংলাভাষা হিন্দি ভাষা অপেক্ষা উন্নততর , এবং বাংলাকেই ভারতের সাধারণ ভাষায় পরিনত করা যেতে পারে”। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য তাঁর মত থেকে সরে আসেননি । তিনি পরে বিভিন্ন ভাষাকে নদীর সাথে তুলনা করে হিন্দিকে “মহানদী” বলেছিলেন ! তৎকালীন ভারতের ৩৩ কোটি মানুষের মধ্যে, মাত্র ১৪কোটি হিন্দি জানা মানুষের জন্য হিন্দি ভাষাকে রবীন্দ্রনাথের কেন যে “মহানদী” মনে হয়েছিল, সেটি আজ গবেষনার বস্তু হতে পারে ! হয়তো, হিন্দু সংস্কৃত ঘেষা ভাষা বলে, এবং এর দেবনাগরী বর্ণমালা থাকার জন্য রবীন্দ্রনাথ হিন্দিকে “মহানদী” আখ্যায়িত করেছিলেন । হয়তো একই কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষী বাঙালী বাংলাভাষা বিসর্জন দিয়ে, সেই ১৯৪৯ সাল থেকেই হিন্দিকে তাদের জাতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে । কিন্তু মুসলমানরা তাদের জবানী ভাষার ঐতিহ্য বিসর্জন দিতে পারেনি । পূর্ববাংলার মুসলমানরা বাংলাভাষাকে চিরকালই তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতির অংশ মনে করে এসেছে । ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মুসলমান যুবকদের গঠিত কর্মপরিষদ, তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল কায়েদে আযম-মুহাম্মদ আলি জিন্নার কাছে যে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তার ৫ম অধ্যায়ে লেখা ছিল—“বাংলাতে সুলতান হুসেন-শাহ সংস্কৃত ভাষার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও এই ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা প্রর্য্যায়ে উন্নীত করিয়াছিলেন এবং এই ভাষার শব্দ সম্পদের শতকরা ৫০ ভাগ পারসি ও আরবী হইতে গৃহীত”। (বদরুদ্দিন উমর: ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ)।
বাংলাভাষাকে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমান জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য সংস্কৃতি মনেকরেই এদেশের মানুষ উর্দুকে রাজভাষ মেনে নিতে পারেনি। তারপরও এদেশের ভাষাআন্দোলনের গোড়াপত্তনকারী যে সংগঠনটি ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর গড়ে উঠেছিল তার নাম রাখা হয়েছিল, “পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ” সংগঠনটির নামকরণের ক্ষেত্রে সব কয়টি আরবী শব্দের ব্যবহার এদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানের ঐতিহ্য সংস্কৃতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় । সুতরাং এদেশের ভাষা আন্দোলন যে এদেশের সংখ্যাগুরু মানুষের ধর্মবোধ, বিশ্বাস বা সংস্কৃতির বিপরীতার্থক কিছু ছিলনা, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা । কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের বাংলাভাষার অবয়বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব, বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানদের জবানী ভাষার লেশমাত্র ছায়াপাতও তাদের লেখ্য ভাষায় ঘটেনি । আমরা মাঠে ময়দানে এক ভাষায় কথা বলি, বই পুস্তক পড়ার সময় আর এক ভাষায় পড়ি ! যার ফলে বাংলাদেশের সাহিত্য জনসাধারনের সাহিত্য হয়ে উঠতে পারছেনা ! বাংলাদেশের ভাষার স্বাতন্ত্র, নিজস্ব বৈশিষ্ট প্রতিষ্ঠা করা যায়নি বলেই এত দীর্ঘ সংগ্রামের পর অর্জিত ‘বাংলাদেশের বাংলাভাষা’ তার নিজস্ব আভিজাত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি । (চলবে)