আন্তর্জাতিকহোম

ভারতের নির্বাচনে ফলাফল: বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?

রূপম রাজ্জাক, বিশ্লেষক ও তথ্য প্রযুক্তিবিদ

ভারতের জাতীয় নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হলো। শেষ দু’দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ধ্যান করেছেন। মোদির এই ধ্যানের খবর প্রচার হয়েছে সব গদি মিডিয়ায়। নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিভাবে প্রচারে থাকা যায় এটি তার একটি উদাহরণ। নরেন্দ্র মোদির এধরণের কৌশল অবশ্য নতুন নয়। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারও একটি পুরনো কৌশল।

স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা এই ধ্যানের সমালোচনা করেছে। তাদের বক্তব্য, শত শত পুলিশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বাইরে ধ্যান না করে বাড়িতে ধ্যান করলেই আসল ধার্মিক পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রী।

শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করছে প্রধান চারটি রাজ্যসহ উত্তর ভারত ও হিন্দি হার্টল্যান্ডের ভোটারদের উপর যারা গত দুটি নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদকে প্রাধান্য দিয়েছিল। বিরোধীরা আশাবাদী হচ্ছে তাদের মেনিফেস্টো’র প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ দেখে। তারা মহারাষ্ট্র ও বিহারে বিজেপির জোটসঙ্গীদের আসনে ভাগ বসানোর পাশাপাশি হিন্দি হার্টল্যান্ডে বিজেপির আসন কমানোর ব্যাপারে আশাবাদী।

বিজেপি আশাবাদী তাদের হিন্দুত্ববাদের পুরনো পারফরম্যান্স ও প্রধানমন্ত্রী মোদির নের্তৃত্বের বিশেষ প্রভাবের কারণে।

সপ্তম ও শেষ ধাপের নির্বাচনে ৮টি রাজ্যের ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এতে নরেন্দ্র মোদির নিজ আসন উত্তর প্রদেশের বেনারসও আছে। আছে উত্তর প্রদেশের অন্য ১২টি, পশ্চিমবঙ্গের ৯টি, পাঞ্জাবের সব কটি (১৩টি), হিমাচলের সব কটি (৪টি), বিহারের ৮টি ও ঝাড়খণ্ড-ওডিশা-চন্ডিগড়ের ১০টি আসন।

লোকসভার নির্বাচন সাধারণত এত ধাপে হয় না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি এই নির্বাচনে তার দলের জয় নিশ্চিত করতে প্রতিটি আসনে/অঞ্চলে প্রচারণার সময় পেতে এরকমটি করেছেন বলে সমালোচনা আছে। বিশেষ করে যে রাজ্যগুলোতে তার দলের জয়লাভ করা বা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং সেখানে অনেক ধাপে নির্বাচনকে বিস্তৃত করা হয়েছে। সে কারণে উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে ভোটগ্রহণ হয়েছে ৭টি ধাপেই। এছাড়া মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, ছত্তিসগড়, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড ও জম্মু-কাশ্মিরে ভোট হয়েছে বেশ কয়েক ধাপে। অথচ গুজরাটের ২৬টি আসনে ভোট হয়েছে এক ধাপেই। কারণ সেখানে বিজেপির একচ্ছত্র জয় নিয়ে তেমন ভয় নেই। একইভাবে কেরালার ২০টি আসনেও ভোটগ্রহণ হয়েছে এক ধাপেই। কারণ সেখানে বিজেপির শতভাগ পরাজয় নিয়ে তেমন দ্বিধা নেই।

এবারের নির্বাচন শুরুর আগে বিজেপির সহজ পুনর্নির্বাচন ধরেই নিয়েছিল বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সেফোলজিষ্টরা। কিন্তু প্রথম ধাপের নির্বাচনেই ধাক্কা খায় বিজেপি। কারণ এবারে বিজেপির ধর্মভিত্তিক এজেন্ডা খুব একটা কাজে দেয়নি। বিশেষ করে রামমন্দির নিয়ে যেধরনের মেরুকরণের প্রত্যাশা তারা করেছিল তার প্রতিফলন মাঠে দেখা যায়নি। বরং কংগ্রেসের মেনিফেস্টো নিয়ে আলোচনা বেশি হয়েছে। জনগণ তাদের দেয়া চাকরির প্রতিশ্রুতি, ঘরে ঘরে ভাতা, জাতগননা, কৃষিখাতে নিশ্চয়তা, অগ্নিবীর ইত্যাদি বিষয়গুলোকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। ফলে যত ধাপ এগিয়েছে ততই পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে বিজেপির। তাই বিরোধীরা আশা দেখছে বিজেপি জোটকে তারা ২৭২ এর নীচে নামাতে পারবে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র ও বিহারে বিজেপির জোটসঙ্গীদের সিট কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইংগিত পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন জরিপে। শেষ দিকে আশাবাদী হয়েছে উত্তর প্রদেশের ক্ষেত্রেও। হরিয়ানা ও দিল্লিতেও ৮-১০টি সিট আশা করছে তারা। তার আগে কর্ণাটক ও রাজস্থানের মাঠ পর্যায়ের জনমতেও তারা এই দুই রাজ্যে ২৫টি সিট পাবার ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছে।

তবু বিজেপিকে হারানোকে অত সহজ ভাবছে না অনেকেই। কারণ বিজেপি একটা দুর্দান্ত সংগঠন যার ধর্মভিত্তিক এজেন্ডার পাশাপাশি আছে দুর্দান্ত সংগঠন, আইটি সেল, বুথলেভেলে শক্তিশালী টিম, সমস্ত সরকারি বাহিনী, মদদপুষ্ট মিডিয়া ও এমনকি নির্বাচন কমিশন। আগেরবারের নির্বাচনে তারা ৫০% এর বেশি ভোট পেয়েছিল অনেক আসনে৷ এই পরিমাণ ভোট পেলে সেখানে ব্যবধান কমানো সহজ কাজ না। ফলে বিজেপিকে হারানো হবে এক পাহাড়সম যুদ্ধ। খুব অল্প ব্যবধানে হারানো সম্ভব হলেও ঝুঁকি আছে বিরোধী পক্ষের নির্বাচিতদের হর্স ট্রেডিং করারও।

নির্বাচনের ফলাফলের ধারণা পাওয়া যাবে আজই এক্সিট পোল প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে। বিরোধীরা সম্মিলিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবে তা হবে আলোচনার মূল বিষয়। মমতা ব্যানার্জির দল ভালোসংখ্যক আসন পেলে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে প্রধানমন্ত্রী পদ পাওয়ার। মমতা ব্যানার্জি তার এই আকাঙ্ক্ষার কথা অনেকবার প্রকাশও করেছেন। যদিও এধরণের ছোট শরিকদের নের্তৃত্বের সরকার আগে কখনো স্থায়িত্ব পায়নি।

ফলাফল যাই হোক বাংলাদেশের আশাবাদী হবার কিছু নেই। বিরোধীরা আসলেও এত দলের কোয়ালিশন সরকার শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। বরং আগে যা ছিল তা বজায় রেখে চলবে ধরে নেয়া যায়। তবে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনীতিকদের উচিত হবে ভারতের উদার রাজনৈতিক দল ও নেতাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ ইয়াদাব, তেজস্বী ইয়াদাব, শচীন পাইলট, এমকে স্টালিনের মতো উদারপন্থী নেতাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা গেলে তা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও দু’দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ভারত নিয়ে নিজেদের অভিযোগ ও দাবি ঠিক রেখেই এ সম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে। এতে অন্তত সেদেশের রাজনীতির সর্বোচ্চ ফোরামে গুরুত্ব পাওয়া যাবে বা আলোচনায় থাকা যাবে।

Tags
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close