- ভোট দেওয়ার চেয়ে মরিচ তোলা ভালো: যুগান্তর
- উপজেলা নির্বাচনে কম ভোটের রেকর্ড: সমকাল
- শুধু ভোটার নেই, অন্য সব ঠিক আছে: যায় যায় দিন
- দলীয়করণের কারণে ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই: ঢাকা পোস্ট
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১১ মে- ২০১৪ সালে একদলীয় , ২০১৮ সালে নৈশ ও ২০২৪ সালে ডামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনের নামে আবারও প্রায় ‘একতরফা’ আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে দেশের গণতান্ত্রিক জনগণ।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো আগেই এ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও এই ‘একতরফা’ ও উৎসাহ-উদ্দীপনাহীন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সরকারের বশংবদ নির্বাচন কমিশনকে বেশ তৎপর দেখা গিয়েছিল। স্বয়ং নির্বাচন কমিশনাররা বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্যে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’—এ রকম কথাও ছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা ক্ষুণ্ন হবে।’ ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ ও ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’ নিয়ে তাঁরা যা বলেছিলেন এবং যেসব উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন, সেটা থেকেই উপজেলা নির্বাচন কেমন হবে তার একটি ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। ফলে গত ৮ মে থেকে শুরু হওয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখান করেছে। বলা যায় এই সরকার ও তাদের বশংবদ নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে দেশে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ ও ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’ সম্ভব নয় বিরোধী দলের এই দাবি জনগণ সমর্থন করেছে।
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ নিয়ে দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম, ‘ভোট দেওয়ার চেয়ে মরিচ তোলা ভালো’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মধ্য চাড়োল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত তেমন ভোটারের উপস্থিতি ছিল না। অনেকটা উচ্ছ্বাসহীন পরিবেশে সকাল আটটায় শুরু হয় বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বালিয়াডাঙ্গীতে চেয়ারম্যান পদে সংসদ-সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজনের দুই চাচা ও চাচাতো ভাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সরেজমিন সকাল থেকে এ উপজেলার বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের কোনো লাইন চোখে পড়েনি। কথা হয় রত্নাই বগুলাবাড়ি গ্রামের অজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি রত্নাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র্রের ভোটার। তিনি বলেন, দলীয়করণের কারণে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে চায় না। তারা মনে করেন ভোটের মূল্যায়ন হচ্ছে না। কেন্দ্রের বাইরে তোজ্জাম্মেল হক নামে এক ভোটার বলেন, বালিয়াডাঙ্গীতে নিজগৃহের প্রার্থীদের মধ্যে ভোট হচ্ছে। এখানে সাধারণ মানুষের ভোটের দরকার পড়ে না। ভোট দিলেও ওরা না দিলেও ওরা। ভোট দিতে যে সময় নষ্ট হয়, তার চেয়ে মরিচ তোলাই ভালো।
দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম, ‘উপজেলা নির্বাচনে কম ভোটের রেকর্ড’। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাল ভোট, ব্যালট কেড়ে নিয়ে পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারাসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ। অনেক স্থানে এসব অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারাও। প্রভাব বিস্তার নিয়ে কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ও ককটেলবাজির ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে খুব একটা ভোটার উপস্থিতি দেখা না গেলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) দাবি করেছে, ভোট দিয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ।
দৈনিক যায় যায় দিনের প্রধান শিরোনাম, ‘শুধু ভোটার নেই, অন্য সব ঠিক আছে’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু যে ভোটারদের জন্য এত আয়োজন তারা তো ভোট কেন্দ্রে আসছেন না। অবশ্য এই নির্বাচনে বিরোধী কোনো জোট বা দল অংশ নেয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন সে কারণে ভোটারদের আগ্রহ কম। শহরের সিংহজানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রসহ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, দুই একজন ভোট দিতে আসছেন, তাছাড়া কেন্দ্র একবারেই ভোটার শূন্য। নেই ভোটারদের লাইন। পুলিশ ও আনসার সদস্যরা গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন।
দেশের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্ট শিরোনাম করেছে, ‘দলীয়করণের কারণে ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই’। ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। আগের মতো ভোট নিয়ে মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। সকাল ১০টার দিকে তাম্বুলপুর দাখিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অলস সময় কাটাচ্ছেন দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। ফাঁকা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কক্ষে নেই ভোটার। অনেকটাই সুনসান নীরবতায় চলছে ভোটগ্রহণ। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে দেখা গেছে, মাঠে ভোটারদের কোনো লাইন নেই। মাঠে নেই কোনো ভোটার উপস্থিতি। মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুইটি কুকুর ও একটি ছাগল। পাশে বসে বসে অলস সময় পার করছেন পুলিশের সদস্যরা। এরপর কেন্দ্রটির ভেতরে প্রবেশ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, তথ্য যাচাই শেষে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো বুথের ভেতর ঢুকছেন এক নারী ভোটার। ওই নারী ভোটারকে সাদা কাপড়ের ওপর দিয়ে কোন মার্কায় ভোট প্রয়োগ করবেন তা দেখিয়ে দিচ্ছেন আরেক নারী। দলীয়করণের কারণে সাধারণ মানুষ আর ভোট দিতে চায় না। অনেকেই মনে করেন ভোটের মূল্যায়ন হচ্ছে না। এটা ভালো লক্ষণ নয়।
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নুরুল আফসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চান না। তাঁর ভাষায়, ‘কথা বলে কী লাভ? যা হওয়ার তো তা হচ্ছে। নির্বাচন আসছে শুনছি, কিন্তু ভোট দিতে পারি না। নির্বাচন আসে ভোট হয় না।’
অথচ এক সময় ‘উৎসবমুখর’ পরিবেশে জাতীয় সংসদ, উপজেলাসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনগুলো নিয়ে বছর দশেক আগেও গ্রামগঞ্জে, মফস্সলে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। গত এক দশকে নুরুল আফসারের মতো বহু মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। এই নির্বাচনগুলোর মধ্যে তিনটি (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জাতীয় নির্বাচনও ছিল। পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে না পেরে ভোটাররা ভোটদানে আগ্রহ অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছেন এবং শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে সকল নির্বাচন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন, এ সত্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।