কমিউনিটি নিউজ

শুধু পার্লামেন্টের না, জনগণের এমপি হতে চান রাবিনা খান

লণ্ডন, ২১ ফেব্রুয়ারি : এবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনী আসনে এমপি পদে লিবারেল ডেমোক্র্যাট (লিবডেম) পার্টির প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর রাবিনা খান। এ উপলক্ষে ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার পূর্ব লণ্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে এক সংবাদ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সাবেক কাউন্সিলর রাবিনা খান বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনী আসনে এমপি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।

সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাবিনা খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমি টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় রাজনীতি করছি। আমি আমার নির্বাচনী আসন বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনী এলাকায় দীর্ঘ ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে পরিবারসহ বসবাস করছি। আমি এ এলাকার মানুষের ভালো-মন্দ, আশা-আকাঙ্খা ও সকল সমস্যা সম্পর্কে সম্যক অবগত আছি। সকল জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে আমি ভালোবাসি। তাঁরাও আমাকে ভালোবাসেন। নিজেদের সুখ-দু:খ ও সমস্যার কথা তারা আমাকে খুলে বলেন। আমি আমার সীমিত সামর্থ্য দিয়ে মানুষের সেবা করার চেষ্টা করি। কিন্তু একজন এমপি চাইলে জনগণের যে সেবা করতে পারেন, একজন সাধারণ মানুষ চাইলেও তা করতে পারেন না। একারণে আমি এমপি পদপ্রার্থী হয়েছি। বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনী এলাকায় মানুষ খুব কষ্টে আছেন। জনগণ পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। আমি আপনাদের সমর্থন ও জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনী এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে চাই। বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, উচ্চ ইউটিলিটি বিল, হাউজিং ও লিজহোল্ড সংক্রান্ত সকল সমস্যাসহ আবাসন সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধান করতে চাই। আমি এলাকার সকল সম্প্রদায়ের মানুষের দুয়ারে সকল সরকারি সুবিধা পৌছাতে চাই। আমি এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করে দিতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এজেন্ডা করার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসার জন্য এবং একটি নিরাপদ নির্বাচনী এলাকার জন্য আমি জনগণের পক্ষে লড়াই করতে চাই। আমি শুধু পার্লামেন্টের না, আমি জনগণের এমপি হতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯২ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে তরুণদের জন্য কাজের অভিজ্ঞতার স্থান নির্ধারণ করে আমি আমার পেশাগত যাত্রা শুরু করি। পরবর্তীতে আমি ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং কমব্যাট ১৮ উত্থানের চ্যালেঞ্জিং সময়ে আইলস অফ ডগস সেফটি প্রজেক্টে জাতিগত নির্যাতনের শিকারদের জন্য সমর্থন ও সমন্বিত করেছি। বেথনাল গ্রীন সিটি চ্যালেঞ্জ উদ্যোগের অধীনে আমি বেথনাল গ্রীন এলাকায় মহিলাদের প্রকল্পগুলি পরিচালনার জন্য এবং বারাতে কমিউনিটি প্রকল্পগুলির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি ১২ বছর কাউন্সিলর হিসাবে কাজ করেছি, মানুষের সেবা করেছি। আমি স্টেপনীর স্মিথি স্ট্রিট প্রাইমারি স্কুল এবং শ্যাডওয়েলের মালবেরি গার্লস স্কুলে স্কুল গভর্নর হিসাবে কাজ করেছি। আমি কখনই কোন কাজ ফেলে চলে যাইনি। আমি কখনোই কোথাও কোন কাজে অনুপস্থিত ছিলাম না। আমি সবসময় আমার বারার বাসিন্দাদের পক্ষে কথা বলতে, ওকালতিতে অবিচল ছিলাম। কাউন্সিলর হিসেবে আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দারা সবসময় আমাকে তাদের প্রয়োজনে পাশে পেতেন। আমি সবসময় জনগণের পাশে থেকেছি এবং কাউন্সিলর হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক কেসওয়ার্ক উত্থাপন করেছি। আমি বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া ও লিজ হোল্ডারদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছি, ওকালতি করেছি। নাইফ ক্রাইমের বিরুদ্ধে আমি প্রচারণা চালিয়েছি এবং শিক্ষা পরিষেবাগুলি অ্যাক্সেস করার জন্য তরুণদের এবং তাদের পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেছি। আমি রিজেনারেশন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছি এবং সম্প্রদায়ের উপর জীবনযাত্রার ব্যয়ের প্রভাব নিয়ে লিখেছি। সিটির প্রাচুর্য আর স্থানীয়দের জীবন সংগ্রাম বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনীতে আমি এর সবই দেখেছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চালিত করে। একজন মা হিসাবে, আমি আমাদের শিশু এবং যুবকদের মুখোমুখি হওয়ার  চ্যালেঞ্জগুলি পেয়েছি, বিশেষ করে কোভিডের পরে। সুযোগ পেলে আমি আমাদের তরুণ-তরুণীদের জন্য চাকরি থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রস্তুতি পর্যন্ত আরও ভালো সুযোগ তৈরি করতে চাই।’

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে রাবিনা খান বলেন, ‘আপনারা জানেন ২০০৩ সালে আমার দল লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রয়াত নেতা চার্লস কেনেডি ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে নীতিগত অবস্থান নিয়েছিলেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতেও লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আমি গাজায় যুদ্ধ বিরতির জন্য বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনীর জনগণের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং ৭১% ব্রিটিশ জনগণের অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য বিশ্বমঞ্চে আমাদের কণ্ঠস্বরকে প্রসারিত করতে চাই। আমি ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের দখলদারিত্ব ও সহিংসতার অবসান এবং জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে ওকালতি করতে চাই। আমার দল লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির সকল এমপিরা যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। জাতিগত সমতার জন্য লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ক্যাম্পেইনের একজন সদস্য হিসাবে আমি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য ভোট দেওয়াসহ বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপিদের সাথে কাজ করেছি। লিবডেম এমপিরা একটি দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এবং সমস্ত জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তির জন্য প্রস্তাব করেছেন। লিবডেম পার্টির বিট্রিশ ফিলিস্তিনি এমপি লায়লা মোরান বিভাজন বিরোধী অ্যান্টি-বয়কট বিল বাতিল করার জন্য যথাযথ যুক্তি দিয়েছেন।’

শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এবং প্রচারণা চালিয়েছি। কীভাবে আমাদের স্কুলছাত্রীরা এই জীবন বেছে নিলো তা নিয়ে আমি জনসাধারণের পক্ষে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলাম এবং গুরুতর মামলা পর্যালোচনার জন্যও বলেছিলাম। লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি টিম ফ্যারন নিউজ এজেন্টদের সাথে একটি সাক্ষাত্কারে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে শামীমাকে যদি শ্যারন এবং সাদা বলা হয় তবে তার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়ার মত ঘটনাটি হয়তো টোরি সরকার ঘটাবে না। আমরা সাদা পটভূমির লোকদের সাথে যেভাবে আচরণ করি তা সমান নয় এবং কিছু লোকের নাগরিকত্ব দৃশ্যত অন্যদের মতো নিরাপদ নয়। যাই হোক, বর্ণবাদ ইস্যু ছাড়াও বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনীতে জিপি অ্যাপয়েন্টমেন্টে বিলম্ব, ডেন্টিস্ট ও অ্যাম্বুলেন্স এবং ভেঙে পড়া স্কুলগুলি টোরি সরকারের ফাঁকা বুলি বা অন্তঃসারশূন্য প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনীর বাসিন্দারা আরও ভাল কিছু ডিজার্ভ করে।’

উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাবিনা খান বলেন, ‘আমি আমার চিন্তা চেতনা আর প্রত্যাশাকে পুঁজি করে আমার পরিকল্পনা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আমি কথা দিচ্ছি বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনীর বাসিন্দাদের সকল নাগরিক সেবা প্রাপ্তি সহজীকরণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানসহ তাদের নাগরিক সুবিধা ও সেবার প্রশ্নে আমি কখনো আপস করব না। এই আসনের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ কখনো করব না। তাদের সেবা দিতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সবশেষে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সন্মেলনে হাউস অফ লর্ডসের লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা লর্ড রিচার্ড নিউবি, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ড. হাসনাত হোসাইন এমবিই, প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক আফজাল সিদ্দিকী ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির রেসিয়াল ইক্যুয়ালিটি চেয়ারম্যান রডারিক উপস্থিত ছিলেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close