নিউজ

প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জের পর দুর্নীতির প্রমাণ

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১৯ জানুয়ারী : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি নিয়ে আবারো প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। গত  বুধবার (১১ জানুয়ারী) জাতীয় সংসদে মোকাব্বির খানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা সবাইকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, কোথায় কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। তাহলে তিনি এর জবাব দেবেন। তার এই চ্যালেঞ্জের দুদিনের মধ্যেই ১৩ জানুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ও কুইনস ডিস্ট্রিক্টে ৯টি সম্পত্তির (ফ্ল্যাট/বাড়ি) বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। আলজাজিরা’র বিখ্যাত ডকুমেন্টারি “অল দা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন”, ইসরাইলের প্রধান দৈনিক হারেজ-এ ‘ইসরাইল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের গোয়েন্দা নজরদারির সামগ্রী ক্রয়’ সহ বহু অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য আলোচিত জুলকারনাইন সায়ের (সামি)। ইতিমধ্যে আলজাজিরা থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। সময় ওসিসিআরপি’র জন্য এই অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশের হইচই পড়লেও এখন পর্যন্ত মি. গোলাপের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেননি। 

দুর্নীতিবাজরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল, এই ৫ বছরে আবদুস সোবহান গোলাপ এই সকল সম্পত্তি নগদ অর্থের বিনিময় ক্রয় করেন (কেবল একটি বাড়িতে ৩৭৫,০০০ ডলারের মর্টগেজ নেন) এ সকল সম্পদের মোট কেনা মূল্য ৪.২ মিলিয়ন ডলার। নিউইয়র্কের বর্তমান রিয়েল এস্টেট বাজার বিবেচনায় এ সকল সম্পদের মূল্য আরো বেশী হতে পারে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক শহরের একটি রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু প্রতিবেদনে প্রকাশ করা সকল তথ্য গুজব বা অসত্য বলে দাবি করেছেন এই সংসদ সদস্য। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন এসবের কোন ভিত্তি নেই এবং তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। মি. আবদুস সোবহান গোলাপের এ ধরনের দাবির প্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক স্টেটের পাবলিক রেকর্ড হতে তার সকল সম্পত্তির “ডিড” বা দলিল প্রকাশ করা হয়।
ওসিসিআরপি সাইটেও এসকল সকল দলিল আপলোড করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই দলিলের ডকুমেন্ট নম্বর ব্যবহার করে কমেন্ট সেকশনে দেয়া নিউইয়র্ক স্টেট কর্তৃপক্ষের সাইটে প্রবেশ করে যে কেউই যাচাই করে দেখতে পারেন। এসকল সম্পত্তির কয়েকটিতে যৌথ মালিক হিসেবে আছেন আবদুল সোবহান গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরা মিয়া আর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে পাওয়ার অফ এটর্নি দেয়া আছে তার ছেলে ইভান সোবহান’কে।

অবৈধ সম্পত্তির ফিরিস্তি:মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।
মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সস্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।সিসিআরপির করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন আবদুস সোবহান। সে সময় ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি। নিউইয়র্কে কেনা এসব সম্পত্তির নথিপত্র বলছে, সম্পত্তিগুলো নগদ অর্থে কেনা হয়েছিল। এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন তাঁর স্ত্রী গুলশান আরাও।
ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবদুস সোবহান নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আরও একটি সম্পত্তি (বাড়ি) কিনেছিলেন। ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ১২ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এর সাত মাস আগে বাংলাদেশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
গোলাপ কিভাবে টিভি আর
ব্যাংকের মালিক হলেন?

একুশে টিভির এমডির পদে ছিলেন কয়েক বছর। ব্যাংকের পরিচালকও হলেন। দেশের ভিতরে প্রধানমত্রীর এই সহকারীর বিপুল সম্পদের উৎস খোঁজার ব্যাপারে দুদক কি কখনো কোনো তদন্ত করেছে, কখনো? এটিও এখন একটি বড়ো প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রীর জবাবের অপেক্ষায়:দুর্নীতির দায়ে আগাগোড়া নিমজ্জিত শেখ হাসিনার সরকার। দেশের গণমাধ্যম ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে প্রকাশ করতে না পপারলেও বিশ্বব্যাপী এসব প্রামাণ্য খবর পাবলিক ডোমেইনে ছড়িয়ে আছে। দুর্নীতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের (গুম-খুন-অপহরণ ও ভয়াবহ সন্ত্রাস) শ্বেতপত্র প্রকাশের কাজ চলছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিলেন এবং তার দুদিনের মধ্যে তার একান্ত সহকারীর দুর্নীতির প্রমাণ প্রকাশ হলে, এইব্যাপারে তিনি কি করেন তা দেখার অপেক্ষা চলছে। দেখা যাক তিনি কি করেন? আর কি বলেন?

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close