নিউজ

সুরমা সম্পাদকের বড় ভাইসহ দু’জন গ্রেফতার

বিদেশে সরকার বিরোধী 'প্রচারণা'

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১৬ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশের বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বিদেশে অবস্থানরত মানুষ ও মিডিয়ার মুখ বন্ধের অপচেষ্টায় মেতে ওঠেছে। দীর্ঘদিন থেকে তাদের অপচেষ্টা অনেকটা গোপন এবং সীমিত পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে। আর বর্তমান আওয়ামী মাফিয়া সরকারের মূল টার্গেটে পরিণত হয়েছে বিলেতের অন্যতম পুরনো ব্যবসা সফল সংবাদপত্র হিসেবে সুপরিচিত সাপ্তাহিক সুরমা। কারণ, বিলেতে বর্তমানে একমাত্র সুরমাই বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের সৃষ্ট অসহনীয় অবস্থার সঠিক চিত্র এবং কঠোর সমালোচনাসহ হাসিনা সরকারের অনৈতিক ও দুঃশাসনের সংবাদ সাহসিকতার সাথে প্রকাশ করে যাচ্ছে। আর এজন্য চরম মাশুল দিতে হচ্ছে সুরমা সম্পাদকসহ ওই মিডিয়ার সাথে জড়িতদের।গত ১৩ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার ডিবি পরিচয়ে নোয়াখালী শহরের মাইজদীর বাড়ি থেকে মহাজোটের শরিক জাসদের (ইনু) জেলা সভাপতি নুর আলম চৌধুরী পারভেজকে (৬২) তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার। প্রথমে আটকের তথ্য অস্বীকার করলেও পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় ডিবি।পরিবারের বরাত দিয়ে জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বকসী জানান, রাজনীতির পাশাপাশি পারভেজ ব্যবসা করেন। এলাকায় তিনি সজ্জন হিসেবে পরিচিত। অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এমনকি জিডি পর্যন্ত নেই। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে হঠাৎ সাদা পোশাকে জেলা ডিবির ১৫-১৬ সদস্য বাড়িতে এসে তাঁকে তুলে নিয়ে যান। এ সময় পরিবারের সদস্যরা কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বলেননি। পরে আটকের কথা স্বীকার করে। পরে মঙ্গলবার রাতভর এবং বুধবার দুপুর পর্যন্ত পারভেজকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাঁকে কারগারে পাঠানোর আদেশ দেন।জেলা ডিবির ওসি নাজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, বিশেষ কারণে পারভেজকে প্রথমে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ এ নিয়ে কাজ করছে। রিমাণ্ডে নেওয়ার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পারভেজকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্য পুলিশ খতিয়ে দেখছে।সূত্র জানায়, পারভেজ জাসদ করলেও তাঁর লণ্ডনপ্রবাসী ছোট ভাই শামছুল আলম লিটন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। লিটন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক দিনকাল পত্রিকার প্রতিনিধি এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের উপ-প্রেস সচিব ছিলেন। তিনি ‘সুরমা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এবং সম্প্রতি পত্রিকাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর একারণে সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের বড় ভাই নূর আলম চৌধুরী পারভেজকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নোয়াখালী জেলা সদরের নিজ বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। কোনো ধরণের গ্রেফতারি পরওয়ানা বা কোনো অভিযোগ ছাড়াই একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রীর সামনে থেকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশের লোকজন ।এদিকে, একইভাবে সম্প্রতি সাপ্তাহিক সুরমার বিশেষ সংবাদদাতা ও লণ্ডন থেকে অনলাইনে সম্প্রচারিত এলবিসি টিভির প্রধান আব্দুর রব ভুট্টোর ভাই আব্দুল মুক্তাদির মনুকে বাংলাদেশে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টো বাংলাদেশ ত্যাগের আগে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাজ করতেন। ওই সময় সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারের রোষানলে পড়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন তিনি।প্রগতিশীল বাম রাজনীতিক, নোয়াখালী জেলা জাসদ (ইনু)-এর সভাপতি নূর আলম চৌধুরী পারভেজ ব্যক্তিগতভাবে এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। তাছাড়া নোয়াখালী জেলা বারের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য মরহুম এডভোকেট বাদশা আলমের সন্তান হিসেবে এলাকায় তাদের দীর্ঘদিনের পারিবারিক ঐতিহ্যও রয়েছে। হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়া তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে তাঁর ছোট ভাই, বিলেতের সুপরিচিত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের বর্তমান মাফিয়া সরকারের গণতন্ত্র হরণ, গুম, খুনের বিরুদ্ধে অটল অবস্থান এবং সরকারের সবধরনের অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকাই নেপথ্যে কারণ হতে পারে। কারণ বিলেতে একমাত্র সুরমাই বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের সৃষ্ট অসহনীয় অবস্থার সঠিক চিত্র এবং কঠোর সমালোচনাসহ হাসিনা সরকারের অনৈতিক শাসনের সংবাদ সাহসিকতার সাথে প্রকাশ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সম্প্রতি (১৯-২৫আগস্ট সংখ্যা) সুরমায় প্রকাশিত “একজন পিনাকী ভট্টাচার্যের বক্তব্য ও লুটের টাকা ফেরত প্রসঙ্গ” শীর্ষক সম্পাদকীয় (যেখানে সরকারের প্রস্তুতকৃত দেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশের জোর দাবী জানানো হয়) এর জের ধরে অজ্ঞাত সূত্র থেকে সুরমা সম্পাদককেহুমকি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া সর্বশেষ, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে ৩০আগষ্ট বাংলাদেশে গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক র‌্যালিতে নেতৃত্ব দানের পর থেকে তাঁর পরিবারকে টার্গেট করা হয় এবং নুর আলম চৌধুরী পারভেজকে গ্রেফতারের মাধ্যমে তাদের পরিবারকে ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানিসহ একটি বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।তবে পারিবারিক কারণে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হলেও, তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রী, ভাই-বোন কিংবা পরিবারের সদস্যদের কোনো অভিযোগের সত্যতা গোয়েন্দা পুলিশ দিতে পারেনি। এনিয়ে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার লোকজনের মধ্যে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন তাঁর ভাইয়ের গ্রেফতার হওয়ার সংবাদে বিস্মিত হলেও তিনি মানসিকভাবে শক্ত রয়েছেন। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, হাস্যকর ও অবিশ্বাস্য পারিবারিক কারণ দেখিয়ে আমার বড় ভাইকে এভাবে তুলে নেওয়ার সংবাদ শুনে আমি যারপর নাই বিস্মিত ও মর্মাহত। আমার ভাই এলাকার একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রগতিশীল বাম রাজনীতির একজন পরীক্ষিত নেতা ও নোয়াখালী জেলা জাসদের সভাপতি। তাঁকে এভাবে কোনো মামলা ছাড়াই তুলে নিয়ে যাওয়া এই সরকারের চরম ফ্যাসিবাদী আচরণের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।সুরমা সম্পাদকের বড় ভাই নূর আলম চৌধুরী পারভেজকে কোনো অভিযোগ, ওয়ারেন্ট ছাড়া বাংলাদেশের ডিবি পুলিশ কর্তৃক ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সুরমার প্রধান সম্পাদক, কবি ও কলামিস্ট ফরীদ আহমদ রেজা। এভাবে যখন তখন কাউকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সরকারের ফ্যাসিবাদী রূপেরই বহিঃপ্রকাশ মন্তব্য করে তিনি অবিলম্বে জনাব পারভেজের নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close