বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সনদ বাতিল করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাটির সনদ নবায়ন করেনি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন আছে ২০১৫ সাল থেকে। গত সপ্তাহে হাইকোর্টে মামলাটির শুনানি হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা। উচ্চ আদালতে বিষয়টি মীমাংসার আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে সনদ বাতিল সংক্রান্ত আদেশ জারি করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
গত কয়েক বছর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার রিপোর্টে অনেক ক্ষেত্রে অধিকারের প্রতিবেদনগুলো রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। সংস্থাটির ওয়েব পোর্টালে গুম-খুন ও নানা প্রকৃতির মানবাধিকার লঙ্ঘনের উল্লেখিত তথ্যসমূহ ভিত্তিহীন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিরোধী, ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মূলক পত্রে। সুতরাং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যারা অধিকারকে রেফার করেছে সরকারের এই সিদ্ধান্ত সরাসরি তাদের মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করার মত।
জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের যে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানেও বেশিরভাগ মানবাধিকার রিপোর্টের ভিত্তিত হিসেবে অধিকারকে রেফার করা হয়েছে। ব্রাসেলসের ওই শুনানিতে বাংলাদেশ সরকার প্রায় দেড়শতাধিক বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে । এ ব্যাপারে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের অফিশিয়াল বিবৃতি প্রকাশ করবে। এই সময়ে অধিকারের সনদ বাতিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । আরেকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে ১৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থা অধিকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে বাংলাদেশকে নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল অথবা পুনরায় নিয়োগ বন্ধের আবেদন জানিয়েছে। সেটি এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য প্রভাবশালী দেশকে সরাসরি একটা বার্তা পৌঁছে দেবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের সুদুরপ্রসারী ফলাফল নিশ্চয়ই মানবাধিকারের বিশ্বরেকর্ডের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে, একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। অধিকারের সনদ বাতিলের আগের ও পরের পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর পরিণতি দেখার জন্য অবশ্যই তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।