নিউজ

অর্থপাচার মামলায় প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই গ্রেফতার

** ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলা
** প্রধানমন্ত্রীর দুবাই সফরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা
** পুতুলের স্বামীকে ঘিরে রহস্যজনক নীরবতা

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৯ মার্চ : দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামী প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই (পুতুলের চাচা স্বশুর) খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থপাচার (মানি লন্ডারিং) মামলায় ১০ জন চার্জশীটভুক্ত আসামীর মধ্যে বাবর অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নবিদ্ধ দুবাই সফরের প্রথম দিনেই বেয়াই বাবরের গ্রেফতার নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের স্বামী খন্দকার মাসরুর হোসাইন মিতুর সঙ্গে পুতুলের সম্পর্ক, দুবাইয়ে একাধিক হাই প্রোফাইল অর্থপাচার (মানি লন্ডারিং) মামলা এবং প্রধানমন্ত্রী পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য ঢাকা ও দুবাইয়ের মামলাগুলোতে জড়িয়ে পড়ার সঙ্গে বাবরের গ্রেফতার নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে।

দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলার চার্জশীট দেয়া হয় গত বছরের মার্চে। কিন্তু  চার্জশিটভুক্ত আসামী হওয়ার পরেও গত এক বছরে বাবরকে গ্রেফতার করা হয়নি। মিতুর বাবা খন্দকার মোশাররফ হোসেনও এই সময়ে গৃহবন্দী অথবা নিরাপত্তা বাহিনীর আওতায় আছেন বলে পাবলিক ডোমেইনে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। মিতুর সঙ্গে পুতুলের সম্পর্ক ঝুলে আছে নানারকম প্রশ্নের বেড়াজালে।
গত ২ বছরে পুতুল ও মিতুকে একসঙ্গে দেখা যায়নি এমনকি মিতু যে শারজাহতে মানি লন্ডারিং মামলায় আটক আছেন, এই প্রচারণা জোরদার থাকলেও এইসব প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী পরিবার অথবা সরকারীভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। যার ফলে এইসব ধোঁয়াশা জনমনে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, প্রধানমন্ত্রী পরিবার এই বিষয়গুলো সম্পর্কে কোনো জবাব দিতে চান না।

দুবাইতে প্রধানমন্ত্রী তার কন্যা পুতুলসহ ৫০ এর বেশী সদস্য নিয়ে সফর করছেন, অথচ সেখানে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কর্মসূচি না থাকায় তার এই সফরের সঙ্গে মামলা, বেয়াইয়ের গ্রেফতার, বাণিজ্য সফরের আড়ালে পারিবারিক ও মামলার জঞ্জাল থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে বহুল আলোচিত কলেজ ছাত্রী মুনিয়া খুন- ধর্ষণ ও ভ্রুণহত্যা মামলার প্রধান আসামী বসুন্ধরা গ্রূপের এমডি আনভীরকে সফরসঙ্গী করা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। হাইকোর্ট আনভীরকে আগাম জামিন দিতে অস্বীকার করলেও আনভীরকে কোনো বড়ো ধরণের কাজে লাগাতেই সব আইনকানুন পাশ কাটিয়ে তাকে এই সফরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও পর্যবেক্ষক মহল ধারণা করছেন।   

গণমাধ্যমে বাবরের গ্রেফতার নিয়ে নানা আঙ্গিকে খবর প্রকাশ হলেও আসল সত্য থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে। বাংলাদেশে মিডিয়া এইসব বিশ্লেষণের পরিবেশ ও সুযোগ না থাকায় এইসব প্রশ্ন ছাড়াই সাধারণভাবে খবরগুলো ছাপা  হচ্ছে।কোনো কোনো খবরে বলা হয়েছে, আইনের হাত কতটা লম্বা, তা ভালভাবেই টের পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। তিনি প্রাক্তন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই। বিদেশে ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সোমবার গভীর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রাত তিনটে নাগাদ ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জামাল পাশা। গত বছরের ৩ মার্চ দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় প্রাক্তন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই মোহতেশাম হোসেন বাবরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ফরিদপুরের দুই ভাই তথা শাসকদলের নেতা সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে বিদেশে দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলার জেরে দুজনেই বর্তমানে কারাগারে। বহুল আলোচিত ওই মামলায় নাম জড়ায় শেখ হাসিনার বেয়াই তথা প্রাক্তন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের। গত বছরের ৩ মার্চ বাবরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস।

গত বছরের জুনেই অবশ্য ঢাকার কাফরুল থানায় দায়ের হওয়া মামলার প্রেক্ষিতে বাবরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরেও প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই হওয়ার বদৌলতে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বাবর। শেষ পর্যন্ত আচমকাই তাঁকে গ্রেফতার করা হলো। ফরিদপুর জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সবুজসঙ্কেত পাওয়ার পরেই সোমবার গভীর রাতে বাবরকে ঢাকার অভিজাত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

https://issuu.com/home/published/sur001_6c6a5c8057ea20
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close