নিউজ

শেষ হাসিনার শেষ রক্ষা হচ্ছে না: মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা

❚ বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্ত ৩রা মে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
❚ বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হলে দায়ীদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বন্ধ
❚ আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আছি, আমরা অ্যাকশন নিতে প্রস্তুত।
❚ মার্কিন সেক্রেটারী অব স্টেট সিব্ধংকেনের ঘোষণা
❚ ধরপাকড়, মামলা, গ্রেফতার

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ২৬ মে – সুরমার গত সপ্তাহের সংবাদ শিরোনাম ছিলো শেখ হাসিনা-শেষ হাসিনা। যাদের মনে ক্ষীণ সন্দেহ ছিলো যে, শেষ হাসিনা শেষ রক্ষার একটা চেষ্টা চালাবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসবেন। তারা জেনে রাখুন, শেষ হাসিনার শেষ রক্ষা হচ্ছে না। আর শেষ রক্ষা হচ্ছেনা বলেই তিনি গত ৩রা মে থেকে পাগলের প্রলাপ বকছেন। নৈশ ভোট করে আর পার পাওয়া যাবে না। আর পার পাওয়া যাবেনা বলেই শেষ সময় বুঝতে পেরে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে টানা আবোল-তাবোল বকছেন। শেখ হাসিনা যে খবরটা দেশের মানুষের কাছে এতদিন চেপে রেখেছেন সেই খবর বুধবার মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট জানিয়ে দিয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে বাংলাদেশের জন্য স্বতন্ত্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার রাতে নজিরবিহীন ওই ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিংকেন। এক টুইট বার্তায় ব্লিংকেন বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে আজ আমরা (বাংলাদেশের জন্য) একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি। এই নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল বা বাধা প্রদানের জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসার ওপর বিধি নিষেধ আরোপিত হবে। কাছাকাছি সময়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে ব্লিংকেনের এই বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে ব্লিংকেন বলেন, ‘আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা ২১২(এ)(৩)(সি) (“৩সি”) এর অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো বাংলাদেশির ভিসা প্রদান সীমিত করবে। বাংলাদেশে নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে ব্যক্তি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপের ওই ঘোষণাটি আসে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের অধীনে। নতুন ভিসা নীতির আওতায় বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পড়বেন।

বিবৃতিতে ব্লিংকেন আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্ত ৩রা মে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তাও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এর মধ্যে আছে ভোট জালিয়াতি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, জনগণকে স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত হওয়ার অধিকার থেকে বিরত রাখতে বল প্রয়োগ বা সহিংসতা। এছাড়া আছে রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ এবং মিডিয়ার স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরির যে কোনো পদক্ষেপ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, আইনশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, নাগরিক সমাজ এবং মিডিয়া—প্রত্যেকেরই দায়িত্ব রয়েছে। ব্লিংকেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যারা এগিয়ে নিতে চান, তাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।

ভিসা বিধি—নিষেধের বিষয়ে বুধবার রাতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, “আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমাদের বার্তা হচ্ছে যে, আমরা আপনাদের পেছনে আছি। “আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পেছনে আছি এবং আপনাদের দেশে গণতন্ত্রকে সহায়তার জন্য আমরা এই নীতি ঘোষণা করছি।” এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে যদি কেউ জনগণের ক্ষমতার উপর হস্তক্ষেপ করতে চায়, তাদের এই বার্তায় দেওয়া যে ওয়াশিংটন ঘটনার উপর চোখ রাখছে, যা জনগণ ভরসা পায়। “আমরা মনে করি, আইনের এই ধারা প্রয়োগের সামর্থ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের কাছে এমন সংকেত পাঠানোও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আছি, আর আমরা অ্যাকশন নিতে প্রস্তুত।”

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি প্রকাশের পাশাপাশি ভিসা নিষেধাজ্ঞা কী এবং কীভাবে কোনো ব্যক্তিদের উপর তা কার্যকর হয়, তা প্রশ্নোত্তরে তুলে ধরেছে। সুরমা পাঠকদের জন্য নিন্মে তা তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: এসব ভিসা বিধিনিষেধ কার/কাদের জন্য প্রযোজ্য হবে?
উত্তর: এই নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্য অনেকের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারের সমর্থক এবং বিরোধী দলীয় সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের ব্যক্তিদের নিকটতম পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রশ্ন: যাদের ভিসা প্রত্যাহার করা হয়েছে আপনারা কি তাদের অবহিত করবেন?
উত্তর: যাদের ভিসা প্রত্যাহার বা বাতিল করা হয়েছে তাদের অবহিত করা একটি সাধারণ রীতি।
প্রশ্ন: উচ্চ স্তরের আদেশ অনুসরণ করে যারা অপরাধ করে তাদের জন্য ভিসা বিধি-নিষেধ কীভাবে প্রযোজ্য হবে? আদেশ পালনকারীদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদেরকে যুক্ততার বিষয়টি যদি কঠিন হয় তবে কী হবে?
উত্তর: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য।
প্রশ্ন: রাষ্ট্রদূত হাসের নিরাপত্তা হ্রাস করার বাংলাদেশ সরকারের ১৪ মে’র সিদ্ধান্তের প্রতিশোধ হিসেবে কি এই ঘোষণা?
উত্তর: বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত ৩ মে এই নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেছি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কেন এত চিন্তিত?
উত্তর: যুক্তরাষ্ট্র সর্বত্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কে সমর্থন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেছে। এই নীতিটি সেই প্রচেষ্টাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করার জন্য প্রণীত হয়েছে, যাতে তারা তাদের নেতা বেছে নেওয়ার জন্য নির্বাচন করতে পারে।

উল্লেখ্য, র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার দেড় বছর পর ভিসা নিয়ে ওয়াশিংটনের এই নতুন নীতির ঘোষণা এল। নতুন নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close