বাংলাদেশ অন্ধকারে
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন ৬ অক্টোবর : ন্যাশনাল গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে অন্ধকারে বাংলাদেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষ। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর আকস্মিকভাবে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। দেশের শতকরা ৮০ ভাগের বেশি এলাকা এর শিকারে পরিণত হয়। দেশের উত্তর-পশ্চিমের কিছু অংশ বাদে দেশের কোথাও বিদ্যুৎ ছিল না। ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়া ইতিমধ্যেই রপ্তানি মুখী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে দিনে চার থেকে ছয় ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না অফিস সময় কমিয়ে আনা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সাশ্রয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের পরেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় চলমান সংকট সামনে আরো ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দুই সপ্তাহের আমেরিকার সফর শেষে দেশে ফেরার একদিনের মাথায় সারাদেশ অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার ঘটনাকে অনেকেই তাৎপর্যের সঙ্গে মূল্যায়ন করছেন। গোয়েন্দা সংস্থা নির্ভর হয়ে পড়ার কারণে জনগণের পাশাপাশি সরকারি প্রশাসন থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন কিনা এই প্রশ্নই এখন পাবলিক ডোমেইন বেশি আলোচিত হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী কোন রাজনৈতিক সমর্থন কুড়িয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে প্রশাসন জনসমর্থনহীন সরকারের উপর থেকে আস্থা সরিয়ে আনতে শুরু করেছে কিনা সে প্রশ্নও এখন ঘুরে ফিরে আসছে।
মঙ্গলবার সমগ্র বাংলাদেশের ব্ল্যাকআউট নিয়ে বিদেশি মিডিয়ায় এসব কথা বলা হয়েছে। আইসিটি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেছেন, রাত ৮টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপন হওয়ার কথা। অনলাইন আল জাজিরা লিখেছে, গ্রিড বিপর্যয়ের ফলে দেখা দেয় ভয়াবহ ব্ল্যাকআউট। পিডিবি’র মুখপাত্র শামীম হাসান বলেছেন, স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ফলে রাজধানী ঢাকা সহ বড় শহরগুলো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
২০১৪ সালের পর আরেক দফা বড় ধরনের বিপর্যয় হল। মেগা প্রকল্পে আগ্রহী সরকার দক্ষতার উন্নয়নে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি যার ফলে এ ধরনের বিপর্যয় কয়েকজন স্থায়ী হলে তার পরিণতি নিয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অভিজ্ঞ সূত্রগুলো। মেগা প্রকল্পের মত মেঘা ভবন তৈরি হচ্ছে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরগুলোতে কিন্তু সে অনুসারে নাগরিক সুবিধা ক্রমশ যুকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ৭০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হয়েছে এর মধ্যে বিদ্যুতের কারণে জ্বালানি পানি সরবরাহ নগরীর ভবনগুলোতে লিফট হাসপাতালগুলোতে জরুরী অপারেশন সবকিছুই বিঘ্নিত হওয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় দেশব্যাপী একটা অবস্থা তৈরি হয় নাগরিক সংকট সর্বত্র মারাত্মক আকার ধারণ করে বিমানবন্দরে বিদেশগামী মানুষ বুঝতে পারেনি বলে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এছাড়া ঢাকায় বিদ্যুতের মতোই খবর লেখা আউট করার কারণে নাগরিক দুর্ভোগের অনেক চিত্রই সাপ্তাহিক সুরমা লন্ডন থেকে সংগ্রহ করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে আল জাজিরা আরও লিখেছে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে ডিজেলচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে অপারেশন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। তখন থেকেই বিদ্যুতের সংকটে হুমকিতে পড়েছে এক সময়ের চিত্তাকর্ষক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র শতকরা মাত্র ৬ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ফলে তাদের শাটডাউনের ফলে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হতে পারে। এ মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, এখন গার্মেন্ট কারখানায় দিনে ৪ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। এ বছর মোট যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে তার মধ্যে এই খাত থেকে এসেছে শতকরা ৮০ ভাগের বেশি। গত মাসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক রিপোর্টে বলেছে, এর আগে বর্তমান অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭.১ ভাগ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা বলেছে, এই প্রবৃদ্ধি কমে শতকরা ৬.৬ ভাগে দাঁড়াতে পারে। ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই বলেছে, কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে বড় রকমের বিদ্যুতের সংকট দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে দীর্ঘ ব্ল্যাকআউটের ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র হয়েছে। এর আগে অঘোষিতভাবে বড় রকমের ব্ল্যাকআউটের শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ ২০১৪ সালের নভেম্বরে। ওই সময় দেশের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ এলাকায় ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। ভারতের আরেক বার্তা সংস্থা এএনআই লিখেছে, মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে প্রায় পুরো দেশ ব্ল্যাকআউটে পতিত হয়। লাখ লাখ মানুষ অন্ধকারে রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এএমটিওবি বলেছে, গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের অনেকাংশে টেলিযোগাযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। একই রকম রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বেশির ভাগ বিদেশি গণমাধ্যম। এর মধ্যে আছে চীনের সিজিটিভি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি সহ বিভিন্ন মিডিয়া।