নিউজ

বাংলাদেশে ধর্ষণ মহামারি: জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশ

* গতবছর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১,৪২৩ নারী
* রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় ও বিচারহীনতাকে দায়ি করছেন সচেতন মহল
* ব্যর্থতা ঢাকতে সরকারের মন্ত্রীদের বেফাঁস কথাবার্তা

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৮ অক্টোরব – বাংলাদেশজুড়ে মহামারি রূপ নিয়েছে ধর্ষণ। গত কয়েক দিনের একের পর এক ধর্ষণ ঘটনা জনমনে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিদেশী গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মহামারি করোনার চেয়েও বেশী আলোচিত হচ্ছে ইদানিংকার চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ঘটনাগুলি। তাছাড়া বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে প্রতিবছর সহ¯্রাধিক নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১ হাজার , ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশে স¤প্রতি একের পর এক ধর্ষণ ও নারীর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিসংতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও। ৭ অক্টোবর, বুধবার ঢাকার জাতিসংঘ মিশন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, যা বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, সা¤প্রতিক ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ বাংলাদেশে নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এগুলো গুরুতর অপরাধ এবং মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন।
হঠাৎ করে ধর্ষণসহ সামাজিক অধঃপতন বৃদ্ধির মূলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দীর্ঘ বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষকসহ সচেতন মহল। নারী থেকে শুরু করে তরুণী, কিশোরী এমনকি নাবালক শিশু পর্যন্ত ধর্ষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাই ধর্ষণ রোধে অনেকে ক্রসফায়ার ও লিঙ্গ কর্তনের মতো বিচারবহির্ভূত শাস্তিরও দাবী তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সামাজিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু সব শ্রেণীপেশার মানুষের এসব বিষয়ে মন্তব্য ও বিশ্লেষণ চোখে পড়ছে।
অপরদিকে নিজ দলীয় ক্যাডারদের এসব অনৈতিক ও পাশবিক আচরণ তথা সামাজিক অবক্ষয় রোধে সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা নানা বেফাঁস কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। সবাই যখন এসব অপরাধের সঠিক বিচারের দাবীতে সোচ্চার ঠিক তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘সারা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখেন? কোন জায়গায় ধর্ষণ নেই? এমন কোনো দেশ নেই ধর্ষণ হয় না?’ আর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নারী নির্যাতনের ঘটনাকে রাজনীতিকরণের অপচেষ্টা করছে। বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রলায়ের সভাকক্ষে কিছু সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মহামারি আকার ধারণ করা এসব ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও অপরাধীদের বিচার চেয়ে প্রতিবাদ হতে দেখা গেছে। আর এসব কলঙ্কজনক ঘটনা শুধু বাংলাদেশের জনগণকেই নয়, বাংলাদেশের বাইরে বসবাসকারী অভিবাসী বাংলাদেশীদেরও ভাবিয়ে তুলছে, তারা এসবের প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার চরম অধঃপতন তথা ব্যাপক হারে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুন, রাহাজানির পাশাপাশি এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে প্রতিদিন কোনো না কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজ হোস্টেলে বর্তমান সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডারদের কর্তৃক স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে এই একই এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল কলেজ ছাত্রী খাদিজাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছিলেন। এছাড়া এমসি কলেজের সাম্প্রতিক এই পাশবিক ঘটনার পরপরই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে দেলোয়ার বাহিনী কর্তৃক একজন গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও প্রচারসহ বেশকটি ধর্ষণ সংক্রান্ত ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে আন্দোলিত করে তুলেছে। একই সময়ে খাগড়াছড়িতে দুর্বৃত্তরা পাহাড়ী এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ করে। ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বামীর জন্য রক্ত নিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন আরেক নারী। গাইবন্ধায় তরুণী ও নারায়নগঞ্জে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া, ইদানিং সিলেটে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, একই জেলা সদরের শামীমাবাদ এলাকায় বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে তরুণীকে ধর্ষণ ও পিটিয়ে জখম, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ, গাজীপুরের শ্রীপুরে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ধর্ষণ এবং কুষ্টিয়ায় মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগের সংবাদ বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close