প্রয়োজন আইনের শাসন
করোনাভাইরাসের এই নাকাল সময়ে আজও আমার দিনের শুরু হয়েছে খারাপ সংবাদ দিয়ে । ঘুম থেকে উটে শুনতে হয়েছে দুটি দুঃখজনক সংবাদ।একটি হচ্ছে নোয়াখালীর বেগমগন্জে একজন মহিলার উপর জন কয়েক দূর্বৃত্তের পৈচাসিক নির্যাতন এবং অন্যটি আমার জন্ম স্থান ফেঞ্চুগন্জে পুলিশ কর্তৃক জাতীয়তাবাদী যুবদলের কর্মীসভায় বাঁধা প্রদান। দেশে নারী ধর্ষন, নারী নির্যাতন যেভাবে নিত্য নৈমত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে তাতে দেশে কোন সরকার আছে বলে মনে হয়না। প্রায় প্রতি দিন ঘুম থেকে উটে শুনতে হয় কোথাও না কোথাও নারী নিগৃহের ঘটনা। বেশীর ভাগ ঘটনায় দেখা যায় সরকারী দলের নেতাকর্মীরা জড়িত । যাদের হাতে দেশ শাসনের ভার ন্যস্থ তাদের এসকল অন্যায় অপকর্মে পুরো দেশবাসীর জন্য কতটা দুঃখের বলার অপেক্ষা রাখে না । সিলেটের এমসি কলেজে সংগঠিত ঘৃনিত ঘটনার রেশ কাঠতে না কাঠতেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সংগঠিত মর্মান্তিক ঘটনা পুরো জাতিকে হতবাক ও স্থম্বিত করেছে।একজন নারীকে টেনে হেছড়ে বিবস্র করে হেন লজ্জাস্কর কোন অপকর্ম নেই যে তার উপর করা হয়নি । এই বোন বারবার লজ্জা ডাকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন । নরপশুরা শুধু নির্যাতন করেই বসে থাকেনি পুরো ঘটনা ক্যামেরায় রেকর্ড করে আইন শৃঙ্খলার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভাইরাল করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । যা দেখে পুরো দিন পুরো দেশবাসী কেঁদেছে। বর্বরোচিত এই ঘটনার যে নেতৃত্ব দিয়েছে তার নাম দেলওয়ার । সে যুবলীগ নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছের লোক ।
সুহৃদ পাঠক এই ঘটনাই যদি দেশের একমাত্র এবং শেষ ঘটনা হতো তাহলে না হয় একটু স্বস্থি পাওয়া যেত । প্রতি দিন প্রতি নিয়ত নারী ধর্ষন, নারী নির্যাতন, নারী হত্যা কেবল বেড়েই চলছে । পত্র পত্রিকায় যে সকল নিউজ আমরা দেখতে পাই তা নিতান্তই অল্প । জ্ঞাতে অজ্ঞাতে কেবল ঘটেই যাচ্ছে ধর্ষন। পুরো দেশটাই মনে হয় এখন ধর্ষকদের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ নামের সোনার ছেলেরা দিন হলে ব্যস্থ থাকে মন্ত্রী এমপিদের সাথে রাজনীতি নিয়ে আর রাত হলে ঝাপিয়ে পড়ে মহিলা ও শিশুদের উপর।চরি, ছিনতাই এই গুলোতো আছেই। মনে হয় পুলিশ, বিজেপিসহ পুরো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু দুর্বৃত্তদের নিকট পুরো দেশকে তোলে দিয়ে তারা দর্শকের ভুমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছে । দেশে মানসিক রোগে অসুস্থ নারী রাস্তায় ধর্ষিত হয়। চাকুরীর জন্য পরীক্ষা দিতে গিয়ে চাকুরী প্রার্থী ধর্ষিত হয় । স্কুলে যাওয়ার পথে অবুঝ শিশু জঙ্গলে ধর্ষিত হয়। স্বামীকে বেঁধে রেখে কিংবা কাঁচা ঘরের বেড়া কেঠে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। গৃহ শিক্ষকের নিকট শিশুরা ধর্ষিত হয়। এমনকি মসজিদে গিয়ে হুজুদের হাতে অবুঝ শিশু ধর্ষিত হয়। এক জরিপে দেখা গেছে চলতি বছরের সাড়ে তিন মাসে ৩৯৬ জন নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৩৯টি এবং হত্যা মামলা হয়েছে ৩৫১টি। একটি বেসরকারি সংগঠন পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে সারা দেশে ৪৭ শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৪৭ শিশুর মধ্যে ধর্ষিত হয়েছে ৩৯ জন। দেশে নারী সমাজের প্রতি চরিত্রহীন মানুষের বিকৃত মন মানসিকতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরাও। গত সপ্তাহে দেখলাম শিক্ষক নামের এক নর পশুর হাতে ধর্ষিত হয়ে ১১ বছরের শিশু এখন সন্তানের মা । অথচ সে এখন সন্তানের স্বীকৃতি দিতেও রাজী নয় । পুরো দেশে ঘরে-বাইরে সর্বত্র আজ শিশু ও নারীরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে । নিগৃহীত মা বোনদের দেখারও কেউ নেই । সম্প্রতি দেখলাম দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আইন শৃঙ্খলার এই নাজুক সময়ে এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ধর্ষন পৃথিবীর কোথায় না হয়?’ তার অর্থ হচ্ছে পৃথিবীর সর্বত্র মহিলারা ধর্ষিত হচ্ছে, এই দেশেও হবে । দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তির এমন দায়িত্বজ্ঞান বক্তব্যে সুযোগ সন্ধানী অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই ।
পুলিশের নাগের ডগায় পুরো বাংলাদেশ যখন হয়ে উটেছে অপরাধীদের অভারণ্য, তখন খারাপ লাগে যখন দেখি আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ চুর, ছিনতাই ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিযে বিরোধী দলের সভা সমাবেশে বাঁধা প্রদান করছে । এটা কখনো কোন গণতান্ত্রিক সরকারের চরিত্র হতে পারে না । গতকাল দেখলাম আমার উপজেলা ফেঞ্চুগন্জে পুলিশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কর্মীসভায় বাঁধা প্রদান করা হয়েছে । সভা সমাবেশ করা মানুষের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার ।সংবিধান মানুষকে এই অধিকার প্রদান করেছে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে পুলিশ চুরি, ছিনতাইকারী ও ধর্ষনকারীদের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত অভিযান পরিচালনায় ব্যর্থ হলেও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতনে বেশ সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে । একজন নাগরিক হিসাবে আমার যেটা খারাপ লেগেছে একটি যুব সংগঠন কর্মী সভার করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের অনুমতি নিয়ে ও সভা করতে পারে না । ঢাকা থেকে নেতৃবৃন্দ ফেঞ্চুগন্জ এসে কর্মী সভা না করেই ফেরত যান।দেশের নাগরিকদের প্রতি থানা পুলিশের এ কেমন নির্মমতা? সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলেও এমন রাজনীতি আমি দেখিনি । মাঝে মাঝে মনে হয় প্রতিহিংসার রাজনীতি আজ আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
শাসক যখন শোষক হয়ে যায় দূর্বৃত্তায়ন তখন মাথা চাড়া দিয়ে উটে । পুলিশকে ব্যস্থ রাখা হয়েছে শুধু বিএনপি দমনে। সাধারণ মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই, মহিলারা প্রতি নিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে -এগুলো দেখারও কেউ নেই । এক দুই সাইফুর কিংবা দেলোয়ারকে শাস্তি দিয়ে দেশেকে পরিশুদ্ধ করা যাবে না । প্রয়োজন আইনের শাসন এবং জনগনের সরকার ।