ব্রেক্সিটের শেষ ঘণ্টা
![](http://www.surmanews.com/wp-content/uploads/2020/01/Samad-art-1.jpg)
।। ইউকের প্রতি ইইউ পার্লামেন্টের আশীর্বাদ
।। উদযাপনে আনন্দ বিষাদের ছায়া
সুরমা প্রতিবেদন
লণ্ডন, ৩০ জানুয়ারী – অবশেষে বহুল আলোচিত ব্রেক্সিট কার্যক্রম হচ্ছে ৩১ জানুয়ারী, শুক্রবার রাত ১১টায় শেষ ঘন্টা বাজার মাধ্যমে ঘটছে দীর্ঘ প্রায় ৪৬ বছরের এই সম্পর্কের চিরবিচ্ছেদ।
ব্রাসেলস অনুমোদনের ফলে শুক্রবার বৃটেনের ইইউ ছাড়া পথ পরিষ্কার হয়েছ। ২৯ জানুয়ারী, বুধবার ইউরোপীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে অনুমোদনের মাধ্যমে ইইউ সাথে ইউকে বিচ্ছেদের সর্বশেষ রাজনৈতিক বাধাটি দূর হলো। ব্রাসেলসের ভোটের ফলে উভয় পক্ষের নাগরিক এবং ব্যবসায়ীদের তাৎক্ষণিক কিছু পরিণতিসহ শুক্রবার ব্রাসেলস সময় মধ্যরাতে বৃটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হলো। একই সাথে উভয় পক্ষের ভবিষ্যত সম্পর্কের বজায় রাখতে বৃটেন ১১ মাসের ট্রন্সিশন প্রিয়ট বা উত্তরণের সময়কালে প্রবেশ করবে।
এদিকে, ব্রেক্সিট উদযাপনের জন্য বৃটেন নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই উদযাপনে আনন্দ-বিষাদের ছায়া। কারণ ওই রাতে ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট চত্বরে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে। আর এমন উদ্যাপন প্রস্তুতিতে নাখোশ ব্রেক্সিট-বিরোধীরা। দীর্ঘ সম্পর্কের এই বিচ্ছেদে অনেককে আনন্দিত করলেও কেউ কেউ বিষাদে ভারাক্রান্ত যে হবেন তা নানা প্রতিক্রিয়ায় ফোটে ওঠেছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১০টায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের কালো দেয়ালে ভেসে উঠবে আলোর ঘড়ি। এই ঘড়িতেই শুরু হবে বিচ্ছেদের ক্ষণগণনা। বিকেল থেকেই হোয়াইট হল খ্যাত ওয়েস্টমিনস্টারের সরকারি ভবনগুলো সাজবে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। এতে জাতীয় পতাকার লাল, সাদা আর নীল রঙের আধিপত্যে তুলে ধরা হবে যুক্তরাজ্যের ঐক্য এবং আত“বিশ্বাস।
এদিন পার্লামেন্ট এলাকা এবং বাকিংহাম প্রাসাদের প্রবেশ পথে (দ্য মল) পতাকা উড়ানোর সবগুলো খুঁটিতে (ফ্ল্যাগ পোল) উড়বে জাতীয় পতাকা। ঘড়ির কাটা ১১টা ছোঁয়ার পর দেশবাসীর উদ্দেশে বিশেষ ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, আগামী শুক্রবার যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষণ হিসেবে চি?িত হতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে আপনি কীভাবে ভোট দিয়েছেন সেটি আর ব্যাপার নয়। এখন সময় হচ্ছে আত“বিশ্বাস নিয়ে সামনে তাকানো। আগামী ১০ বছরের মধ্যে আমরা বৈশ্বিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হব এবং অতীতের সকল ভেদাভেদ কাটিয়ে উঠব।
বিচ্ছেদের দিনে ৫০ পয়সার প্রায় ৩০ লাখ স্মারক মুদ্রা বাজারে ছাড়া হবে, যা ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। চ্যান্সেলর (অর্থমন্ত্রী) সাজিদ জাভিদ শনিবার প্রথমবারের মতো এই স্মারক মুদ্রার ছবি অবমুক্ত করেন। বিশেষ এই মুদ্রায় লেখা শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব (পিস, প্রোসপারিটি অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ উইথ অল ন্যাশান্স)। লেখা আছে বিচ্ছেদের তারিখ ূ৩১ জানুয়ারি ২০২০। প্রথম কোনো ব্যক্তি হিসেবে এই স্মারক মুদ্রা পাবেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। চলতি সপ্তাহে সাজিদ ৫০ পয়সার একটি মুদ্রা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন।
সাজিদ বলেন, ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে একটি মোড় ঘোরানো ক্ষণ। এই স্মারক মুদ্রা সেই নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
ব্রেক্সিটপন্থী সংগঠন ও ব্যক্তিরা নানাভাবে সময়টি উদ্যাপন করবে। শুক্রবার রাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে হাজার হাজার ব্রেক্সিটপন্থী জমায়েত হয়ে উল্লাস প্রকাশ করবেন। ইইউ বিরোধী কট্টর ডানপন্থী নেতা নাইজেল ফারাজ সেখানে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
ব্রেক্সিটপন্থীরা হাউস অব কমন্সের ঐতিহাসিক ঘড়ি বিগ বেন এর ঘণ্টি বাজিয়ে বিচ্ছেদের সময়টি উদ্যাপনের দাবি করেছিলেন। কিন্তু সংস্কার কাজের জন্য ঘড়ির ঘণ্টি খুলে রাখায় সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। হাউস অব কমন্স কমিশন জানায়, ঘণ্টা বাজানোর আয়োজন করতে গেলে প্রায় ৫ লাখ পাউন্ড (সাড়ে ৫ কোটি টাকা) ব্যয় হবে এবং সংস্কার কাজ বেশ বিলম্বিত হবে।
ব্রেক্সিটপন্থীরা জনগণের কাছ থেকে অনুদান তুলে সেই অর্থের জোগান দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পার্লামেন্টের কাজে অনুদানের অর্থ ব্যয় ঠিক হবে কি-না তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে হাউস অব কমন্স কমিশন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতা মার্ক ফাঁসোয়া ঘণ্টি বাজানোর খরচের হিসাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে ঘণ্টা বাজানো ঠেকাতে অস্বাভাবিক খরচের কথা হাজির করেছে পার্লামেন্ট কর্তৃপক্ষ।
বিচ্ছেদ উদ্যাপনের এমন আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ব্রেক্সিটবিরোধীরা। দেশটির সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যাসেলটাইন বলেন, ব্রেক্সিট হচ্ছে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বিভাজন সৃষ্টিকারী ঘটনা। আমরা যারা বিচ্ছেদের বিপক্ষে লড়াই করেছি, তাঁরা দেশ এবং দেশের নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সেটি করেছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলছেন আবার বিচ্ছেদ বিরোধীদের পরাজয় উদ্যাপন করছেন-এটা মূর্খতাপূর্ণ। লিবারেল ডেমোর্ক্যাট দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান এড ডেইভি বলেন, এসব পার্টি না করে ভালো কাজে অর্থ ব্যয় করা উচিত ছিল।
আর স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পাটির ওয়েস্টমিনস্টারের নেতা ইয়ান ব্ল্যাক ফোর্ড বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শান্তি প্রতিষ্ঠায় গঠিত সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক জোট ত্যাগের বিষয়টি উদ্যাপনের মতো কিছু নয়।