কমিউনিটি নিউজ

টিউলিপকে ইআরআইয়ের ৭ দিনের আল্টিমেটাম

  • আয়নাঘর ও গণহত্যা বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের অবস্থান পরিস্কার করার দাবি

লণ্ডন, ১৪ আগস্ট- আয়নাঘর ও গণহত্যা বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের অবস্থান পরিস্কার করার দাবিতে গত ১৩ আগস্ট, মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধীকার সংগঠন ইকুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল (ইআরআই) পূর্ব লণ্ডনে এক সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সন্মেলনে ‘ইআরআই’ এর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মাহবুব আলী খানশূর। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমাদের চারজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি‘র মধ্যে তিনজন শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের অপশাসন ও দু:শাসনে সবসময় উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁরা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের অনির্বাচিত ও সম্প্রতি গণপ্রতিরোধের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে তাঁর খালার দু:শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। টিউলিপ সিদ্দিক টানা চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে এবার ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে কাজ করছেন। সরকারের একজন স্টেকহোল্ডার হিসেবে তিনি খুব ভাল করেই জানেন, বাংলাদেশে তাঁর খালা কী ধরনের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। অথচ গত ১৫ বছরে তিনি বাংলাদেশের কোন অনিয়ম – দুর্নীতি ও গুম-খুন নিয়ে কোন কথা বলেনি। বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো তাঁর খালা শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে অভিহিত করলেও টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর কোন সমালোচনা করেননি। বাংলাদেশের মানুষ গত ১৫ বছর স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি, কেউ কেউ সরকারের সমালোচনা করলেও তারা সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে গুম হয়েছেন অথবা চিরজীবনের জন্য হারিয়ে গেছেন। ইলেক্ট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়া যে‘ই সরকারের সমালোচনা করেছে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের উপর সরকারী বাহিনীর জুলুম নির্যাতন তো নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এসব বিষয়ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়। দেশের প্রখ্যাত দুইটি জনপ্রিয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকার দুইজন প্রবীন সম্পাদককে তাদের পেটোয়া বাহিনী নির্দয়ভাবে মেরেছে, আবার তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সে বিষয়েও কোন কথা বলেননি টিউলিপ সিদ্দিক’।

সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, ‘২০১৯ সালে চ্যানেল ফোর-এর এক অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, টিউলিপ সিদ্দিকের পুনঃনির্বাচনকে সমর্থন করার জন্য আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা একটি প্রচারণা চালাচ্ছে। অনুসন্ধানকারীরা দুইবার যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হতে টিউলিপকে সাহায্যের জন্য তার আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভিডিও প্রমাণ পেয়েছে। গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, নিজের বাসা ভাড়া দিয়ে তার খালা শেখ হাসিনার বিশেষ বন্ধু আবদুল করিমের দুই মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিলাসবহুল বাসায় বর্তমানে অবস্থান করছেন টিউলিপ। ওই প্রতিবেদনে জানা যায়, শেখ হাসিনা আবদুল করিম নামের এই ব্রিটিশ বাংলাদেশিকে বিশেষ মর্যাদায় সিআইপি উপাধি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পদটিও পেতে সাহায্য করেছিলেন। আর খালা শেখ হাসিনার বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট ওই ব্যক্তির নিকট থেকে অন্যায় সুবিধা আদায় করেছেন টিউলিপ। ওই পাঁচ বেডের বিলাসবহুল বাসা ভাড়ার তথ্যও লুকিয়েছেন তিনি। ডেইলি মেইলের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ব্যবসায়ী করিমকে কত ভাড়া দেওয়া হচ্ছে তা বলতে অস্বীকার করেছেন টিউলিপ। ওই ব্যবসায়ী টিউলিপকে তার বাড়িতে বসবাসের অনুমতি দিয়ে লাভবান হয়েছেন কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে। কারণ, গত দুই বছরে টিউলিপ তার পারিবারিক বাড়ি ভাড়া দিয়ে হাজার হাজার পাউন্ড আয় করেছেন। যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী যদি কোনো এমপি কম ভাড়া দিয়ে কোনো আবাসনে বসবাস করেন, তাহলে তা সরকারকে অবহিত করা বাধ্যতামূলক। তা না হলে দেশটির আইনে এটি একটি বড় অন্যায় হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশের আওয়ামী সরকারের সাথে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ব্রিটেন সরকারের টেক্স পেয়ার হিসেবে আমরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, টিউলিপ যেনো অতি সত্বর তার বাড়ির এবং বাংলাদেশ বিষয়ে তার অবস্থান পরিস্কার করেন। সরকার যেনো তাঁর অবস্থান পরিস্কার করার জন্য তাতে চাপ দেন’।

সংবাদ সন্মেলনে আরও বলা হয়, ‘বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। এ ব্যাপারেও টিউলিপ সিদ্দিক কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বা তার খালার পরিস্থিতি সম্পর্কেও প্রকাশ্যে কখনো মন্তব্য করেননি। অথচ আমরা জানি তিনি এই সরকারের স্টেকহোল্ডার ছিলেন। কারন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৩ সালের রাশিয়া সফর ও ১০০ কোটি পাউন্ডের অস্ত্র ক্রয় চুক্তির সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এতে দেশের মানুষের কাছে পরিস্কার তিনি সরকারের অংশীদার ছিলেন। এই কারণে বিগত ১৫ বছরের অপশাসনে যত অবৈধ চুক্তি এবং দেশের টাকা পাচার, নৈশভোট, লুটপাট এবং গুম-খুনসহ আয়নাঘর ও গণহত্যা বিষয়ে তার অবস্থান পরিস্কার করার জোর দাবী জানাই। তিনি যদি মনে করেন তাঁর খালা অপরাধী, তার বিচার হওয়া দরকার তবে জনসম্মুখে তিনি তার খালার বিচার দাবি করবেন অথবা বিবৃতির মাধ্যমে তার মতামত জানিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করবেন। তবে তিনি যদি তার খালাকে নিরপরাধ বলে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেন, তাহলে তিনি নিজেও অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবেন। আমরা শেখ হাসিনার মতো তাকেও অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করবো। আর এই অপরাধের কারণে আমরা এই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার সংসদ সদস্য পদ রহিত করার দাবী জানাবো’।

৭ দিনের ভেতর আয়নাঘর ও গণহত্যা বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের অবস্থান পরিস্কার করার দাবি জানিয়ে বলা হয়, ‘টিউলিপ সিদ্দিক যদি অতি সত্বর উপরোক্ত বিষয়ে অবিলস্বে তার অবস্থান পরিস্কার না করেন তবে আমরা ধরে নিবো তিনি ওই অপরাধগুলো সমর্থন করছেন এবং ওই একই অপরাধে সংশ্লিষ্ঠ থাকায় তিনি নিজেও অপরাধী। আমরা ইকুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিলাম। এই সময়ের মধ্যে তিনি যদি তার অবস্থান পরিস্কার না করেন তবে তাকে পার্টি থেকে বহিস্কার করে সংসদ সদস্য পদ রহিত করার দাবি জানাবো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাবো এবং তার বিচার দাবি করবো’।

সংবাদ সন্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা শামসুল আলম লিটন, হাসনাত আরিয়ান খান, হাসান আল জাবেদ ও ইআরআইয়ের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এ সময় সংগঠনের সহ-সভাপতি ওসমান গনি, জয়েন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ ফাহিদুল আলম, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোরশেদ আহমেদ খান, মাইনোরিটি রাইটস সম্পাদক তাহমিনা আক্তার, ক্যাম্পেইন সেক্রেটারি আবু জেহাদ, মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ রনি, ক্যাম্পেইন সেক্রেটারি শাহিন আহমেদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্গানাইজিং সেক্রেটারি তাহিন ইসলাম, ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি সেক্রেটারি ইমদাদুর রহমান ফাহিম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close