শ্যাডওয়েলে আগুনে পুড়ে প্রাণ গেল ১ বাংলাদেশীর

ওভারক্রাউডিং ও লোভী বাড়ীওয়ালাকে দায়ী করছেন বাসিন্দারা
এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস নির্বাহী মেয়রের
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১৬ মার্চ : লণ্ডনে আসার মাত্র তের দিনের মাথায় আগুনে পোড়ে প্রাণ হারালেন মিজানুর রহমান। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বিপুল বাংলাদেশী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের শ্যাডওয়েল এলাকায়। কাউন্সিলের একটি ফ্ল্যাটে গাদাগাদি করে থাকতে গিয়ে এই করুণ পরিণতির শিকার হলেন তিনি। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন। বাকীরা প্রাণে বাঁচলেও পরনের পরিধেয় ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ডক্যুমেন্টসহ সবকিছু পুড়ে গেছে আগুনে। আপাতত কাউন্সিলের সহযোগিতায় স্থান হয়েছে অস্থায়ী হোটেলে। ঘটনাটির ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন চলছে। মৃত মিজানুর রহমানের মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো ও সৎকারের দায়িত্ব নিয়েছে দাতব্য সংস্থা ইডেন কেয়ার। উক্ত সংস্থার একজন ভলান্টিয়ার সুরমাকে জানিয়েছেন হাসপাতালের মর্গ থেকে মিজানুর রহমানের মরদেহ কবে হস্তান্তর করা হবে, এখনো জানানো হয়নি।

আগুন পুড়ে প্রাণ হারান মিজান
ঘটনাটি ঘটেছে গত ৫ মার্চ, শনিবার রাতে শ্যাডওয়েলের ম্যাডকস হাউজে। দুই রুমের ফ্ল্যাটে প্রায় ১৮/২০ জনের সাথে একরকম গাদাগাদি অবস্থায় ঘুমে ছিলেন মিজানুর। রাত ১২টার দিকে বাসায় থাকা একটি মোটরচালিত সাইকেলের ব্যাটারি বিস্ফোরিত হয়। ব্যাটারির আগুন ছড়িয়ে বাসায় থাকা গ্যাস সিলিণ্ডারে লাগলে সেটিও বিস্ফোরণ হয়ে পুরো বাসায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় বাকীরা কোনো রকমে বের হতে পারলেও মিজানুর পারেননি। ফায়ার ব্রিগেইডকর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন এবং তাকে লণ্ডনের রয়্যাল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ৯ মার্চ, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রয়েল লণ্ডনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিজানুর।
এদিকে, ঘটনার পরপর মুখ খুলতে শুরু করেছেন ওই বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাসহ স্থানীয়রা। তারা বিভিন্ন মিডিয়ার সাথে আলাপকালে এজন্য ওভারক্রাউডিং বা ঘনবসতিজনিত সমস্যা দূর করতে কাউন্সিলের চরম অবহেলা এবং ল্যাণ্ডলর্ড বা বাড়ীওয়ালার অত্যধিক লোভী মানসিকতাকে দায়ী করেছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারা বারবার কাউন্সিলের বরাবরে ওভারক্রাউডের বিষয়টি তুলে ধরার পরও তা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার কারণে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে তারা মনে করছেন। আর দুই বেডরুমের ঘরে হেলথ সেইফটির কোনো তোয়াক্কা না করে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে লোকদের এভাবে থাকতে দেওয়ার জন্য বাড়ীওয়ালার লোভী মানসিকতাকে দায়ী করেন তারা। তবে ঘটনার পরপর ভুক্তভোগীদের সবধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে কাউন্সিল।
একজন প্রতিবেশী গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ২০২১ সালের শেষের দিকে হ্যামলেটস হোমসের কাছে ওভারক্রাউডিংয়ে সৃষ্ট সমস্যা বিষয়ে তারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন। ল্যাণ্ডলর্ড কতৃর্পক্ষের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে ২০২২ সালের এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বরে আবার অভিযোগ করতে বাধ্য হন। গার্ডিয়ানকে দেওয়া বক্তব্যে টাওয়ার হ্যামলেটসের হাউসিং কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে যে, তাদের কাছে ওভারক্রাউডের কয়েকটি অভিযোগ এসেছিলো এবং তারা সেই আলোকে কাজ করছিলো।
টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানও ওভারক্রাউডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে ভবিষ্যতে এধরণের ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেটি নিশ্চিতে তিনি প্রয়োজনীয় সবধরণের পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন। মিজানুর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রদত্ত বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ্য করেন, শ্যাডওয়েলে আগুনে পোড়ে মিজানুর রহমানের প্রাণ হারানোর পেছনে ওভারক্রাইডিং একটি বড় বড় কারণ। প্রকৃত সংখ্যা না বলতে পারলেও দুই বেডরুমের এই ফ্ল্যাটে অন্তত ১৮ জন লোক যে বাস করতেন সেটি পরিষ্কার এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলেও তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ্য করেন।
উল্লেখ্য, ৪১ বছর বয়সী মিজানুর রহমান মাত্র তের দিন আগে বৃটেনে এসেছিলেন। তিনি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের আবদুর রবের ছেলে। বিভিন্ন মিডিয়া মারফত পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে দেশে যান তিনি। এর পর থেকে বাড়িতেই ছিলেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী লণ্ডনে এসেছিলেন মিজানুর।