অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রতিবাদে উত্তাল ফ্রান্স : ধর্মঘটে বাতিল হয়েছে লন্ডন-প্যারিস ট্রেন
শামসুল ইসলাম।। অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রতিবাদে ফ্রান্স জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্যারিসসহ বড় বড় শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে ম্যাক্রো সরকারের প্রস্তাবিত অবসর নীতিমালার প্রতিবাদে। সম্প্রতি ম্যাক্রোঁ সরকার অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৬৪ বছর করার প্রস্তাব করেছে। ফ্রান্সে বর্তমানে অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর।
গতকাল মঙ্গলবার গোটা ফ্রান্স প্রায় অচল হয়ে পড়ে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা প্রতিবাদ বিক্ষোভে। বিক্ষোভকারীরা একে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন। গত জানুয়ারি থেকে নতুন করে শুরু হওয়া বিক্ষোভের এটি ছিল ষষ্ঠ দিন। ফ্রান্স স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী মঙ্গলবার ১.২৮ মিলিয়ন মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। গত এক দশকের মধ্যে এটিই সর্ব বৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশ বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর প্রত্যাশা ছিল আরো বেশি।
এদিন ধর্মঘটে যোগ দেন প্যারিস পাতাল রেল ও অন্যান্য রেল কর্মী, স্কুল কর্মকর্তা, জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট কর্মী ও পেট্রোল পাম্প কর্মীরা। ফলে প্যারিস ম্যাট্রো, স্কুল-কলেজ, বিমান বন্দর, স্থল বন্দর, পেট্রোল পাম্পগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়ে। অবশ্য এতে ধর্মঘটীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুরো ফ্রান্স স্থবির হয়নি। ব্যবসা প্রতিষ্টান, অফিস-আদালত ও বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্টান খোলা ছিল। আবার বেশ কিছু মানুষ বাড়ি থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে ধর্মঘটের কারনে প্যারিসের সবচেয়ে বড় বিমান বন্দর শার্ল দ্য গলের ২০ শতাংশের উপরে ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে আগামী কয়েকদিন। এছাড়া অন্যান্য বড় বড় এয়ারপোর্ট যেমন, প্যারিস অর্লি, ব্যুভে, বখদ্যো, লিল, লিয়ন,মার্সেই, মনপলিয়ে,নন্ত, নিস ও তুলুসের ৩০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
এর বাইরে লন্ডন ও প্যারিস রোটে চলা ইউরোস্টার ট্রেনের অনেকগুলো পূর্বনির্ধারিত ট্রেন বাতিল করেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার লন্ডন-প্যারিসের চারটি ও প্যারিস-লন্ডনের ছয়টি ট্র্বেন বাতিল করেছে।
অন্যদিকে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন সিজিটি ঘোষণা দিয়েছে মঙ্গলবারের বিক্ষোভের পরও দাবি আদায় না হলে তারা আরো কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আসবে। তারা হুমকি দিয়েছে ২০২২ সালের মত গ্যস, পেট্রোল, ডিজেল সর্বরাহ বন্ধ করে দিবে।
প্রসংগত ফ্রান্স সরকার জনগণের অবসরের বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বছরে নিতে চায়। ফ্রান্স কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মতে নতুন আইনের ফলে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১৮ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয় হবে। অবশ্য শ্রমিক ইউনিয়নগুলো তা প্রত্যাখ্যান করেছে।