সম্পাদকীয়

ফাহাম জিয়া ও তৈয়বের বই নিষিদ্ধ: একুশের বইমেলায় ফ্যাসিবাদের কালো থাবা

এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২২৮৪
সম্প্রতি বাংলা একাডেমী একুশের বইমেলায়যে তিনটি বই নিষিদ্ধ করে বইমেলাকে কলঙ্কিত করলো, সে বইগুলো হলো অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’, জার্মান প্রবাসী জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ এবং নেদারল্যান্ডস প্রবাসী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব’র ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’। শুধু একুশের বইমেলায় নয় কলকাতা বইমেলায়ও যাতে প্রকাশক এই বই বিক্রি করতে না পারে তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যুক্তি হারিয়ে খড়গ নিয়ে বইমেলায় নেমেছে মাফিয়ারা। যেমনি ভাবে হাতুড়ি চাপাতি আর খুন গুমের মাধ্যমে আতঙ্কের সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিণত করেছে শান্তির ব-দ্বীপ বাংলাদেশকে। 
বাংলাদেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মত বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমীর মতো জাতীয় সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একইভাবে ফ্যাসিবাদের নখরে জর্জরিত হয়ে আছে। গত একযুগ ধরে এক ব্যক্তি ও তার পরিবারের বন্ধনায় ব্যস্ত রাখা হয়েছে এসব জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ওই পরিবারের বন্ধনায় শত শত, হাজার হাজার বই প্রকাশ আর সাস্কৃতিক কার্যক্রম চলছে। রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে একটি পরিবারের কালো ইতিহাসকে সাদা চাদরে ঢেকে দিতে। 

একবিংশ শতাব্দীতে ফ্যাসিবাদের নতুন রূপ বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার। এই সরকার কোন কিছু নিষিদ্ধ করে না। আন্তর্জাতিক রেফারেন্স তৈরি তৈরি হবার ভয়ে সেই পথ এড়িয়ে চলে। কিন্তু প্রজ্ঞাপন না দিয়ে নিষিদ্ধকরণ কত প্রকার ও কি কি তা এই ১৫ বছরে তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার ফলে জনতার মুখপত্র ও জনপ্রিয় গণমাধ্যম দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা, দৈনিক দিনকাল, টিভি ওয়ান, ইসলামিক টিভি ও দিগন্ত টিভি নানা কৌশলে বন্ধ করেছে। একইভাবে বইয়ের উপর তাদের কালো থাবা বিস্তার করেছে নানা কায়দায়।  প্রকাশককে দিয়ে অথবা সম্ভব না হলে পুস্তক প্রকাশক সমিতিকে এসব অপকর্ম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বাংলা বইয়ের বাজারে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ও বহুল আলোচিত গ্রন্থ পিনাকী ভট্টাচার্যের “স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ” দিয়েই তাদের এই কালো থাবা বিস্তার শুরু হয়েছিল। বইটির প্রকাশককে বাধ্য করা হয়েছিল দেশ থেকে প্রকাশ না করতে। রকমারিকে বাধ্য করা হয়েছে পিনাকীর সব বই নামিয়ে ফেলতে। দেশের কোন বইয়ের দোকানে যাতে এই বই বিক্রি না হয় তার অঘোষিত নির্দেশ জারি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই বইটি ইউরোপ থেকে প্রকাশিত হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের জানামতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বিক্রিত এই বই ইতিমধ্যে দেশে ও বিদেশে ৮০ হাজারেরও বেশি কপি পাঠকের হাতে চলে গেছে। বহু চেষ্টা তদবির করেও বইটি নিষিদ্ধ করার মত একটি লাইনও খুঁজে পায়নি সরকারের ভাড়াটিয়া লেখক গবেষকগণ। এর আগে বইমেলায় গার্ডিয়ান পাবলিকেশন সহ অনেক প্রকাশককেই ইসলামী বই প্রকাশের দায়ে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অথচ তাদের বই বাংলাদেশের সর্বাধিক পাঠকপ্রিয়।
ফ্যাসিবাদ তার অস্তিত্ব রক্ষায় চিন্তাশীল স্বাধীনচেতা ও দেশপ্রেমিক মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য বাংলাদেশকে পরিণত করা হয়েছে এক কুরুক্ষেত্রে। একুশ মানে মাথানত না করা; আর স্বাধীনতা মানে শৃংখল মুক্ত আধিপত্যবাদের কবলমুক্ত এক নির্ভীক মুক্ত জাতি। একুশের বইমেলায় ফ্যাসিবাদের কালো থাবা শুধু বাংলাদেশ নয় সংস্কৃতির ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই অধ্যায়ের ভিলেন শেখ হাসিনা ও তার মাফিয়া সরকার। আর নায়ক পিনাকী ভট্টাচার্য, ফাহাম আব্দুস সালাম, জিয়া হাসান ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তাদের লেখনীর কাছে মাফিয়াদের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। ইতিহাসে এই কথাই স্পষ্ট অক্ষরে লেখা থাকবে।
দু:সময়ে বাংলাদেশের এই তিন সাহসী ও নির্ভীক লেখকের প্রতি নিপীড়িত বিবেকের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন। 

Sheikhsbay

সম্পরকিত প্রবন্ধ

Back to top button
Close
Close