মুক্তকথা

মুনতাসির মামুনের দাদরা তাল: একই সুরের ঘ্যানঘ্যানানি

|| আহমদ ময়েজ ||
কবি, সাবেক সম্পাদক: সাপ্তাহিক সুরমা

বিষয়টি অনেক পুরানো। কিন্তু বাজাতে যে কোনো আপত্তি নেই সে কথা কেউ বলেনি। সচল না অচল মাল তা নিয়ে কারোর যায় আসে না। আমাদের চিন্তার জগত অনেক স্থূল। সাংস্কৃতিক মানও ততোটাই নিম্নগামী। ‘মুনতাসিরের দাদরা দাদরা তাল: একই সুরের ঘ্যানঘ্যানানি?’ — না এসবে কোনো তাললয় লাগে না। উলঙ্গ হয়ে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হলে তখন ঢাকতে শরম লাগে। আবারও কাল্পনিক যে জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন — বলি, অভ্যাসটা ত্যাগ করুন দেখবেন ভয়টা কেটে গেছে। এই যে মুনতাসির মামুনরা এখনও ভাঙা রেকর্ড বাজান সেটা শুনে মানুষজন কী করে? হাসে না কাঁদে? আমার মনে হয় কোনোটাই করে না। মাটির ঢেলা হাতে নিয়ে বরং জঙ্গলে যায় ভারমুক্ত হতে।

এই যে মুনতাসির মামুন কিংবা মুরগি কবির বিগত ৫০ বছরে এদের কোনো পরিবর্তন হয়েছে? এরা কি কখনো জ্ঞাত হয়েছে মঙ্গলে ও অমঙ্গলের পার্থক্য কি? না হলে টানা ১৫ বছর একই যাতাকলে থেকে মানুষের যে নাভিশ্বাস উঠছে সেটা তারা টের পেতো। তাদের ভয়, কুমন্ত্রণার দায় নিয়ে তাদের একদিন দেশ ছেড়ে পালাতেই হবে। তারা জেনে গেছে তাদের ভষ্যিৎ। তাই আবারও পুরানো সেই ভাঙা কলের গান বাজিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। তবে এটির অন্য একটি কারণও রয়েছে। নিজেদের ভেতর ভয় বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। সেটা তাড়াবার এমনই একটি কসরৎ মাত্র।

কেন তাদের ভয়? গুমের চিত্রগুলো তো চোখ এড়ায় না। কিন্তু কোনো জবাব নেই। আয়না ঘরের দেয়ালচিত্র তারা ইতোমধ্যে পড়ে ফেলেছেন। এরও কোনো জবাব নেই। পাচারকৃত অর্থের জবাদিহিতা তো নেই বরং সেসবের হিস্যা যে তাদের ভাগে জোটেনি, আমরা কী করে বলবো? মুনতাসির মামুনরা দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে চাচ্ছেন সেসব পাচারকারী মাফিয়া চক্রকে রক্ষার জন্য। তাহলে দায় তো নিতেই হবে। সে জন্যই সরকার পরিবর্তনের কথা শুনলেই তাদের শঙ্কা তো বাড়বেই। তারা দেশ ছেড়ে পালাতে তো চাইবেনই। মুনতাসির মামুন কোনো ভুল তথ্য দেননি। আমরা তার সাথে একমত। ফ্যাসিবাদ যতোটা শক্তি প্রয়োগ করে ভেতরে ভেতরে ততোটাই খুকলা হতে থাকে। এর জন্য তারা নির্বাচন ভয় পান। গণতন্ত্রে তাদের অনিহা। বিভিন্ন বোল তৈরী করে বলেন, ওমুক-তমুকের ক্ষমতায় আসা চলবে না। ওমুক-তমুককে বাদ দিয়ে যদি গণতন্ত্র চর্চা করতে হয় তাহলে কোনো আপত্তি নেই তাদের। মানুষের ভাবনার চে’ তাদের আকাক্সক্ষা বড়। তাদের বিলাসিতা বড়। তাই গুমতন্ত্রের রাজনীতিই তাদের পছন্দের রাজনীতি। মুরগি সাপ্লাইকারীদের রাজনীতি কতোদিন বাংলায় টিকবে সেটা সময়ই বলে দিতে পারে। নতুন প্রজন্মের কাছে এদের কানাকড়িও দাম নেই সেটা তারা বুঝে গেছেন। আমরা আগামী সূর্যের দিকেই তাকিয়ে আছি। সেই দেয়ালচিত্রের কথা মনে আছে, একজন দেয়ালচিত্র অঙ্কণ করেছিলো? সুবোধ নিরন্তর পালাচ্ছে — খাঁচায়বন্দী ছিলো সেই চিরন্তর সূর্যের আলো। সময় এখন উল্টো দিকে বহমান। সময়ে সে ফিরে আসবে সময়ের তাপ নিয়ে — এমনি একটি দেয়াল চিত্র ঢাকায় ছেয়ে গিয়েছিলো একদিন। তারপর রাতারাতি সরকারী খরচায় তা মুছে ফেলাও হয়েছিল। কিন্তু মানুষের মগজ থেকে সেই চিত্রাঙ্কণ মুছে ফেলা যায়নি। মুনতাসির মামুনরা সুবোধের হাতে সেই সূর্যের চিত্রটাকেই ভয় পান।

অপেক্ষা করুন। এখন সুবোধরা পালাচ্ছে, সময় এলে ঘুরে দাঁড়াবে। এ পালানো কোনো পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে নয়, বরং রুখে দাড়াবার কসরৎ। অপেক্ষা করুন, আগামী সময় কথা বলবে। সময় সহায় হোক।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

Back to top button
Close
Close