
|| আতাউর রহমান মিলাদ ||
লেখক: কবি ও গল্পকার। বিলেত প্রবাসী।

ফারুক আহমদ, একজন শিকড় সন্ধানী গবেষক। দীর্ঘদিন থেকে বিলাতে বসবাস করছেন। প্রায় তিন দশক থেকে বিলাতের বাঙালিদের নিয়ে গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সম্প্রতি ইউপিএল থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার দীর্ঘদিনের গবেষণালব্ধ গ্রন্থ ‘বিলাতে বাঙালি অভিবাসন।’ এ গ্রন্থে প্রায় চারশত বছরের বাঙালি অভিবাসনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে। গ্রন্থটি পাঠ করে একজন বিলাতের অভিবাসী হিসেবে নিজের শিকড়ের অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি।এ গ্রন্থ নিঃসন্দেহে বিলাতে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে তাদের পূর্বসুরীদের ইতিহাস জানতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।এ গ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশ করা জরুরী বলে মনে করি।
এ গ্রন্থে অনেক আলোচিত/অনালোচিত অধ্যায় নতুন তথ্য সংযোজনে যেমনি সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনি হারিয়ে যাওয়া বিস্মৃত নানা অধ্যায়কে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করেছেন।লেখার সাবলীল গতিময়তা, প্রাণঞ্জল ভাষা ও বিষয়ের ধারাবাহিকতা যে কোনো পাঠককে ধরে রাখতে সক্ষম হবে।এ গ্রন্থটি বিলাতের অভিবাসিদের ‘তথ্যকোষ’ বলা যায়।
উল্লেখ্য ইত:পূর্ব গবেষক ফারুক আহমদের লেখা আরও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবং সুধীমহলের নজর কেড়েছে।যেমন ‘বিলাতে বাংলা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা’ ‘বিলাতে বাংলার রাজনীতি’ ‘সাপ্তাহিক জনমত:মুক্তিযদ্ধের অনন্য দলিল’ ‘বিলাতে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা’ সহ আরো অনেক গ্রন্থ।
৩৯০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থ বিলাতে বাঙালি অভিবাসনের এক অসামান্য দলিল। গ্রন্থের শুরু হয়েছে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী’ ও লস্করদের বা ‘জাহাজি’দের বিলাত আগমন এর জীবনসংগ্রামের কাহিনী দিয়ে।একে একে ধারাবাহিকভাবে বাঙালি অভিবাসন পটভূমি, উৎসের স্বরূপ সন্ধান, বাঙালির উত্তানপর্ব, জীবন ও জীবিকার চিত্র নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে।
পূর্ব লন্ডন, বাঙালি অধ্যুষিত একটি এলাকা যা এখন বাঙালি পাড়া বলে খ্যাত। এখানে বসতি স্থাপনের পথ সহজ ছিলোনা, নানা ঘাত প্রতিঘাত, বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে।বর্তমান প্রজন্ম অনেকেই এসব জানেনা।
জনাব ফারুক আহমদ বহুজাতিক বিলাতের পূর্ব লন্ডনে বাঙালিদের বসতি স্থাপনে তাদের ত্যাগ, প্রতিবন্ধকতা, বর্ণবাদী ন্যাশনাল ফ্রন্টের আক্রমণ-মোকাবেলা, আলতাব আলীর আত্মত্যাগ-সবমিলিয়ে আজকের বাংলা পাড়া গড়ে উঠার ইতিহাস পুনর্লিখন করেছেন সুনিপুণভাবে।
এছাড়াও গ্রন্থে আদম ব্যবসা থেকে শুরু করে বিলাতে বাংলার রাজনীতি, সাংগঠনিক কার্যক্রম, ধর্মচর্চা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সুদীর্ঘ ইতিহাস, বাংলা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা, বাঙালির অর্জন ও অবদানসহ আরো অসংখ্য বিষয়ের সন্নিবেশ ঘটেছে। গ্রন্থটি পুরো পাঠ না করলে এর ভেতরের গভীরতা উপলব্ধি করা কঠিন।
পাঠের সুবিদার্থে গ্রন্থটিকে বিভিন্ন পরিচ্ছদে বিন্যাস করা হয়েছে। অত্যন্ত গোছালো ও ক্রমানুক্রমিক সূচিপত্র সংযোজিত হয়েছে, যেখানে চোখ বুলালে গ্রন্থের গুরুত্ব অনুধাবন করা সহজ। লেখক চার পৃষ্ঠার একটি ভূমিকা লিখেছেন শুরুতে যা পুরো গ্রন্থের সারমর্ম বলা যায়। ভূমিকা পাঠ করলে পাঠক মোটামুটি গ্রন্থ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ছবি ও ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবির সংযুক্তি গ্রন্থের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
অত্যন্ত চমৎকার দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী কাজী যুবাইর মাহমুদ।
গবেষক ফারুক আহমদ এর ‘বিলাতের বাঙালি অভিবাসন’ গ্রন্থের বহুল প্রচার প্রসার কামনা করি।গ্রন্থটি একুশে’র বইমেলা পাওয়া যাবে ‘ইউ পি এল’ এর স্টলে। এছাড়া, আগামী ২৩ ও ২৪ জুলাই ২০২২, লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাজ্য-এর দশম বাংলাদেশ বইমেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবেও বইটি পাওয়া যাবে।