কাবুলে ন্যাটোর পরাজয়, দ্বিতীয় ভিয়েতনাম ও যুদ্ধাপরাধের দায়

এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২২১৬
বিশ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী পরাজয় ‘স্বীকার’ না করেই কাবুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির সারমর্ম পরিস্কার। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পূনরাবৃত্তি হলো আফগানিস্তানে। গত কয়েকদিনে সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর সামরিক জোট ন্যাটোর নির্মম পরাজয় দেখলো। কাবুল বিশ্বের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করলো।
আফগানিস্তানের তোরাবোরা পাহাড়ে সাবেক এক মিত্রকে খুঁজতে গিয়ে একটি সুন্দর দেশকে তছনছ করে দিলো। দেড় লাখ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হলো আফগানিস্তানের প্রতিটি জনপদ। ভয়ঙ্কর ক্লাষ্টার বোমা আর মিলিয়ন মিলিয়ন রাউন্ড গুলিতে আফগান শিশু কিশোর বৃদ্ধ আর নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকের বুক, মাথা আর পিঠ ঝাঁঝরা করেছে। একজন মানুষের (তাও আবার নিজের হাতে গড়া মিত্র) জন্য লাখো নিরীহ মানুষের প্রাণহানি, বিশ বছরের বেআইনি দখলদারিত্ব আর জাতি হিসেবে আফগানদের দীর্ঘমেয়াদে পঙ্গুত্বের দায় ন্যাটো তথা যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে এড়িয়ে যাবে? যুদ্ধ আর যুদ্ধাপরাধ বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধ।বিশ বছরের দেড় লাখ আফগান নাগরিক ও যোদ্ধার প্রাণহানি, যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই হাজার, যুক্তরাজ্যের ৪৫৭ সহ ন্যাটোর ৩,৫০০ সৈন্যের মৃত্যু ও ৪০ হাজারের বেশী হতাহত এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ৬৯০০০ সদস্যের রক্ত ওই জনপদকে নৃশংসতা আর রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে। প্রতিটি জীবন আর প্রতি ফোঁটা রক্তের দায় যারা এই অন্যয় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে তাদেরই নিতে হবে। কারণ, এই বিশ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ৯/১১-র মর্মান্তিক ঘটনার আফগান জনগণ ও তত্কালীন সরকারের সংশ্লিষ্টতার কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ বিশ্বের সামনে হাজির করতে পারেনি। শুধু বুশ- ব্লেয়ারের একগুঁয়েমি আর মিথ্যাচার, জাতিসংঘকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আফগানিস্তান ও ইরাকে দুই দুইটি বেআইনি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। যার পরিমাণ আজকের কাবুল আর রক্তাক্ত বাগদাদ। সময়ের পরিক্রমায় বাগদাদেও একি পরিণতি শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
যুদ্বে বিজয়ী শক্তি ইতিহাস রচনা করে আর পরাজিত শক্তি পরিশোধ করে যুদ্ধ আর যুদ্ধাপরাধের দায়। কূটনৈতিক ভাষা আর শক্তির বলে যাহাই বলা হোক না কেনো, একবিংশ শতাব্দীতে চাপিয়ে দেয়া এই বেআইনি যুদ্ধগুলোর দায় যুদ্ধবাজ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কিভাবে পরিশোধ করে, সেটা দেখার জন্য বিশ্বকে আগামী দিনগুলোতে সচেতনভাবে অপেক্ষা করতে হবে। অন্যথায় কাবুলে ন্যাটোর পরাজয়ের জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন পরাশক্তির উত্থান ও নতুন স্নায়যুদ্বের পথে এগুতে পারে বিশ্ব। সেদিক থেকে কাবুলে ন্যাটোর পরাজয় হবে নয়া বিশ্বের টার্নিং পয়েন্ট।