লকডাউন প্রত্যাহার: ৪ সপ্তাহ পেছালো
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১৮ জুন : বহুল প্রত্যাশিত লকডাউন থেকে পুরোপুরি মুক্তি হচ্ছে না পূর্ব-নির্ধারিত তারিখ ২১ জুন। ওইদিন ইংল্যা-ের ‘লকডাউন’ পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের হুশিয়ারিতে নির্ধারিত সেই দিনটিতে লকডাউন প্রত্যাহার সম্ভব হচ্ছে না। আরও চার সপ্তাহ তথা ১৯ জুলাই পর্যন্ত পেছানো হয়েছে লকডাউনের সময় সীমা। বুধবার প্রধানমন্ত্রী বুরিস জনসন পার্লামেন্টে বিষয়টি উত্থাপনের পর এমপিদের ভোটে অনুমোদন লাভের অপেক্ষায় রয়েছে। ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য আরো সময় পাওয়ার জন্য এই চার সপ্তাহ পিছানো হয়েছে বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে। বৃটেনে করোনার ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যে ৯ হাজারেরও বেশী লোক নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ২৪ ঘন্টায় আরো ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পাবলিক হেলথ ইংল্যা- থেকে সতর্কতা জারি করা হয়। তাই পরিস্থিতি আরও পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতেই সরকার লকডাউন তুলে নেয়ার সময় পুনর্বিবেচনা করেছে। ইংল্যা-ের পাশাপাশি স্কটল্যাণ্ডে পূর্বনির্ধারিত ২৮ জুন থেকে আরো ৩ সপ্তাহ পিছিয়ে তা জুলাইয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ৮ মার্চ থেকে সরকার ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে নেয়ার রূপরেখা ঘোষণা করে। সেই রূপরেখা অনুযায়ী ইতিমধ্যে চার দফায় মানুষের চলাচল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর থেকে বেশকিছু বিধি-নিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। মানুষ এখন ঘর থেকে বাইওে যেতে পারছে। সিনেমা হল, জিমসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র খুলেছে।
চালু হয়েছে রেস্তোরায় বসে খাওয়াও। কিন্তু বলবত রয়েছে লোক সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে ৩০ জনের বেশী জড়োর হওয়ার নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়েছে। ২১ জুন শেষ ধাপে সকল বাধা-নিষেধ তুলে নেয়ার কথা ছিলো। যে কারণে দিনটিকে ইংল্যা-বাসী মুক্তির দিন হিসেবে বিবেচনা করছিলো। এখন করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকার কারণে সেই মুক্তির দিন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
বৃটেনে গত বেশ কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েকদিন ধরে এ সংখ্যা ৭ হাজরের ওপরে। অল্প অল্প করে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। প্রতিদিন ডজন ডজন প্রাণহানি ঘটছে। বিশেষ করে ভারত থেকে প্রবেশ করা করোনার নতুন ধরণ ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরই বেশিরভাগই এ ধরণে আক্রান্ত। প্রতি সপ্তাহে ভারতীয় ধরণে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ছে। এটিকে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সূচনা বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, লকডাউন আরও চার সপ্তাহের জন্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে এমপিদের অনুমোদন নিতে চলতি সপ্তাহেই পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। কনজারভেটিভ দলের অনেক এমপি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।
তবে সরকার বলছে, লকডাউন আরও চার সপ্তাহ পিছিয়ে এ সময়ের মধ্যে আরও বেশীসংখ্যক মানুষকে দ্রুত করোনার টিকা দেয়া শেষ করাটাই হবে উত্তম। এ সময়ে টিকার কার্যকারিতা নিয়েও আরও ধারণা লাভের সুযোগ হবে।
লকডাউনের সময় বাড়ানোর মানে হবে রেস্তোরা, স্টেডিয়ামসহ যে কোনো ভেন্যুতে লোক সমাগমের সীমা বলবৎ থাকবে। আরও পুরোপুরি বন্ধ থাকবে নাইট ক্লাবগুলো। সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়বে বিয়ের আয়োজনগুলো। কেননা, গত প্রায় দেড় বছরের বেশী সময় ধরে করোনা মহামারীর কারণে বিয়ের বড় কোনো আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না। বিয়ের আয়োজনে বর্তমানে ২৮ জন অতিথি উপস্থিত থাকার নিয়ম আছে। আশা করা হচ্ছিলো ২১ জুন এই বিধি-নিষেধ উঠে যাবে। যে কারণে ২১ জুনের পরবর্তী কয়েক মাসে দেশব্যাপী হাজার হাজার বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এ জন্য আয়োজকরা ভেন্যু বুকিংসহ আয়োজনের যাবতীয় কাজ সেরে রেখেছেন। বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, লকডাউন প্রত্যাহারের সময় পেছানো হলে প্রতি সপ্তাহে ওয়েডিং ইণ্ডাস্ট্রির ক্ষতি হবে প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন পাউণ্ড।
বিয়ের আয়োজক এবং ভেন্যুর মালিকসহ ওয়েডিং ই-াস্ট্রির সংশ্লিষ্টরা দাবী জানিয়েছেন, লকডাউন পেছানো হলেও যেন বিয়ের অতিথি সমাগমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সময় পিছিয়ে দেয়ার জন্য বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর উপর গত কয়েকদিন ধরেই চাপ বাড়ছে।
সরকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পর এবার ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) থেকেও সময় পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এনএইচএস এর সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম করোনা সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর মধ্যকার সংযোগকে ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। অফিস ফর দ্যা ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক (ওএনএস) বুধবার জানিয়েছে, ইংল্যা-ের প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ৮ জনেরই কোভিড-১৯ পজিটিভ এন্টিবডি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর অর্থ হলো হলো- তাঁরা অতীতে সংক্রমিত হয়েছেন অথবা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।
এনএইচএস এর প্রধান নির্বাহী ক্রিস হপসন বলেছেন, যদি লকডাউন বাধানিষেধ তুলে নেয়া হয় এবং সংক্রমণের নতুন ঢেউ শুরু হয়, তাহলে কোভিড ছাড়া অন্য রোগের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। টাইমস রেডিওকে তিনি বলেন, এমন কী কোভিড সংক্রমণের হার সামান্যতম বৃদ্ধিও কোভিড এবং নন-কোভিড চিকিৎসার মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য তৈরী করবে। তিনি বলেন, আমরা জানি যে আমাদের আরো উন্মুক্ত হতে হবে এবং এর ফলে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর উচ্চহারের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা কী এই ঝুঁকিকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, দেশের হাসপাতালগুলো এই মূহূর্তে অনেক অনেক ব্যস্ত, অকল্পনীয়ভাবে ব্যস্ত এবং উদ্বেগজনকভাবেও ব্যস্ত। আর এ কারণেই কোভিড রোগীদের সংখ্যা সামান্যতম বাড়লে আমাদেরকে বিপাকে পড়তে হবে।