জাসাসের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: আলোচনা ও ভার্চুয়াল সেমিনার

সংস্কৃতি ও কৃষ্টি বাঁচাতে হলে জনগণের শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে
– ড. আব্দুল মঈন খান

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৩১ ডিসেম্বর – বিএনপি স্থায়ী কমিটি’র সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি বাঁচাতে হলে জনগণের শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে । যুক্তরাজ্য জাসাসের উদ্যোগে ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার “বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন: নাগরিকদের করণীয়” আলোচনা ও ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।
“বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন: নাগরিকদের করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বক্তা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জাসাসের উপদেষ্টা আব্দুল হাই শিকদার বলেন, ভারত সিকিম দখলের আগে সেখানে মানুষের মন ও মগজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলো, সিকিমের লোকদের বুঝাতে পেরেছিলো ভারতের সংস্কৃতি সিকিমের চেয়ে উন্নত এবং ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিরোধ করার কিছু নেই । হায়দারাবাদ দখলে নিতেও ভারত একই কাজ করেছিল। এক শ্রেণীর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সেখানে প্রচার চালায় ভারতের মধ্যে তারা বৃহৎ পরিচিতি আর সংস্কৃতি নিয়ে উন্নীত হবে । সেই ফাঁদে পাঁ দিয়ে হায়দারাবাদ, সিকিম সবাই তাদের স্বাধীনতা হারায়। তেমনিভাবে আজকের বাংলাদেশেও কালো টাকার মালিক, ভূমিদস্যু আর দেশ বিরোধী বিভিন্ন ব্যক্তি -গোষ্ঠী ও তাদের পুঁজি আর মিডিয়াগুলো ভারতীয় সংস্কৃতির পৃষ্টপোষকতা করেন। তারা বোঝাতে চান, ভবিষতে দেশটাতো ভারত হবেই, সুতরাং আগেভাগে লাইন ঠিক করা দরকার। তাহলে তাদের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ দুই কুল রক্ষা পাবে। এছাড়া এদেশে বুদ্ধিজীবী নামধারী কিছু প্রাণী ভারতের কাছে আত্মা বিক্রি করেছে। এইসব প্রাণীগুলোকে দেশের পথে আনার দায়িত্ব দেশপ্রেমিক সাংস্কৃতিক কর্মীদের, আর বৃহত্তর অর্থে জাসাসের। তিনি যেকোনো অবস্থায় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামকে বেগবান করার জন্য দেশে বিদেশে সকল সাংস্কৃতিক কর্মী সংগঠক শিল্পী সাহিত্যিক ও দেশপ্রেমিক চিন্তাবিদদের প্রতি আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্য জাসাসের সভাপতি এমাদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক তাসবীর চৌধুরী শিমুল ও যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মোতালিব লিটনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ থেকে জাসাস কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রফেসর ড.মামুন আহমেদ, জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদদৌলা চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালিক, ফ্রান্স বিএনপি’র সভাপতি এম এ তাহের। সেমিনারের মূল বক্তব্যের উপর আলোচনায় অংশ নেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সাবেক উপ প্রেস সচিব -সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, কবি ও সাপ্তাহিক সুরমা’র নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ ময়েজ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জাসাস কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, ও ইকবাল হোসেন, যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মহিলা সংগঠক ও মহিলা দল সভাপতি ফেরদৌস রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন, যুক্তরাজ্য বি এন পির সহ সভাপতি গোলাম রব্বানী সোহেল , আবেদ রেজা, যুক্তরাজ্য যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক অন্জনা আলম ,যুক্তরাজ্য জাসাসের যুগ্ম সম্পাদক: হাবিবুর রহমান বাবলু ,যুগ্ম সম্পাদক কবির আহমদ বাহার, আরিফ রহমান, এস এম রফিক, সা;গাঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান রোকন ।
ড. আব্দুল মঈন খান প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আরো বলেন, সংস্কৃতি আর জাতীয় পরিচয় নিয়ে সংকটের সমাধান শহীদ জিয়া দিয়ে গিয়েছিলেন। খুব অল্প সময়ে তিনি জাতীয় জীবনের সকল অংশ আর দিককে সমাধান করে গেছেন। যাতে জাতীয় জীবনে পরিচয়ের সংকট না থাকে। একটা জাতিকে শত সহস্র বছর টিকে থাকতে হলে তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা সবচেয়ে জরুরী। সেই পরিচয় আর আমাদের সার্বভৌমত্বকে টিকিয়ে রাখতে আবার আমাদের নিজস্ব পরিচয় ফিরিয়ে আনতে হবে । শহীদ জিয়া’র নতুন কুড়ি’র মাধ্যমে যে শিল্পী আর প্রতিভা বেরিয়ে এসেছে তারা শুধু বিএনপি’র জন্য নয়, সকল জাতীয় প্রতিষ্ঠানেই তারা ভূমিকা রাখছেন। এটাই ছিল শহীদ জিয়ার ভাবনা, আর আজকে শুধু একজন, একদল আর এক আর এক । স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক ইত্যাদি প্রবর্তনের মাধ্যমে শহীদ জিয়া বাংলাদেশকে ও মানুষকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন । সেটাই ফিরিয়ে আনতে হবে আগ্রাসন মোকাবেলার সংগ্রামকে সফল করে।
জাসাস কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রফেসর ড.মামুন
আহমেদ বলেন, আমরা একটা দুঃসময় অতিক্রম করছি। এই দুঃসময় কবে কাটবে আমরা
জানিনা, তবে এই সংগ্রাম সফল না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সকল
পর্যায়ে আমরা আজ আগ্রাসনের মুখোমুখি। সংস্কৃতি ধ্বংস হলে আমাদের পরিচয়
সংকট অনিবার্য। তাই সময় থাকতে সকলকে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য
তিনি আহ্বান জানান।
জাসাসের সাবেক
সভাপতি রেজাবুদদৌলা চৌধুরী বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ একটি খণ্ডিত
পরিচয়। শহীদ জিয়া আমাদের স্বাধীনতা ও সংস্কৃতির এই সংকট বুঝেছিলেন বলেই
জাতীয় পরিচয় হিসেবে বাংলাদেশী জাতীয়তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় পরিচয় ও
সংস্কৃতিকে চর্চার জন্যই তিনি জাসাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটা শুধু
সাংস্কৃতিক নয় বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আজ বেগম জিয়া ও জনগণের
অবিসংবাদিত নেতা তারেক রহমানের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ণের কারণ তাঁরা এজাতির
স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনো আপোষ করেনি। নির্বাসিত নেতা তারেক
রহমানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ’ একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেদিন তিনি আসবেন
জনতার বাঁধ ভাঙা জোয়ার সেদিন তাঁকে স্বাগত জানবে আর ফ্যাসিবাদের কবর ও হবে
সেদিন।
যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালিক
বাংলাদেশের সংস্কৃতি আর রাজনীতিকে ভারতীয় আগ্রাসনের কবল থেকে রক্ষার
সর্বাত্মক সংগ্রামে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান। ভারতীয় সংস্কৃতির
আগ্রাসন আর তার দোসরদের অপকর্ম আমাদের ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের
শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি ছাড়া আর কিছু নয়
।
ফ্রান্স বিএনপি’র সভাপতি এম এ তাহের বলেন,
১/১১ থেকেই আবারো বাংলাদেশকে দিল্লির পদতলে ভুলুন্ঠিত করার ষড়যন্ত্র শুরু
হয়, তা আজ অব্যাহত আছে. তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতি গ্রাস করা হলে
স্বাধীনতা এমনিতেই বিপন্ন হবে
।
মূল বক্তব্যের উপর আলোচনায় শামসুল আলম লিটন
বলেন, ফ্যাসিবাদ শুধু সংস্কৃতি নয়, সকল জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে একে একে ধ্বংস
করছে তাদের এজেন্ডার অংশ হিসেবে। বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমান
১২ বছর ধরে নির্বাসিত। ব্রিটিশ আমল থেকে এপর্যন্ত উপমহাদেশে আর কোনো
রাজনৈতিক নেতাকে এতো দীর্ঘ সময় নির্বাসনে থাকতে হয়নি। এখন থেকেই
ফ্যাসিবাদের দীর্ঘমেয়াদি এজেন্ডা পরিষ্কার হয়ে গেছে।সম্প্রতি ভাস্কর্য
ইস্যুতে কুষ্টিয়ার এসপি’র উস্কানিমূলক ও সন্ত্রাসী বক্তব্যকে সমর্থন করে
সাংস্কৃতিক জোটের ১১ জন নেতার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন. তিনি বলেন,
এটা জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস। বর্তমান
ফ্যাসিবাদী সরকার ও তাদের রক্ষাকারী দেশ ভারতীয় সরকারকে এই পরজীবী গোষ্ঠী
এভাবেই সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর.
।
তিনি ভারতীয় হাই কমিশনারের আওয়ামী লীগ অফিস পরিদর্শনকালে দেয়া বক্তব্যের
তীব্র সমালোচনা করে বলেন, কূটনীতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্যের জন্য হাই
কমিশনারের ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, শুধু জন সমর্থন দিয়ে জনগণ
ফ্যাসিবাদের কবলমুক্ত হতে পারেনা। ১%জনসমর্থন নিয়েও বহু দেশে ফ্যাসিবাদ
দশকের পর দশক জনগণকে শাসন- শোষণ করেছে। ফ্যাসিবাদের পতনে জনসমর্থনের
পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশল আর জন সম্পৃক্ত সাংস্কৃতিক ও বৃহত্তর গণ সংগ্রামের
কোনো বিকল্প নেই
। ২০০২ সালে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার
মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা
জিয়া ও ড. আব্দুল মঈন খানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সব ইতিহাসই এখন
বিকৃত। অথচ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিং পাওয়েল বাংলাদেশ ঘুরে এসে কাতারে
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বক্তৃতায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন কিভাবে
কম্পিউটার ওঅন্যান্য তথ্য প্রযুক্তি বাংলাদেশে শিক্ষা ও দারিদ্র্য
বিমোচনের কাজে ভূমিকা রাখছে।