মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শহীদ জিয়া উজ্জীবনী প্রেরণা


মুক্তচিন্তা:
।। ডক্টর এম মুজিবুর রহমান ।।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এক.
রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিতে শহীদ জিয়া বাংলাদেশের জনগনের সামনে তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যাদুকরী দর্শন। বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদের দর্শন দেশের ধর্ম-বর্ণ গোত্র-নৃ-গোষ্ঠী তথা আপামর সকল মানুষকে অভিন্ন প্লাটফরমে এনে দাঁড় করিয়েছিল। আমাদের জাতীয় জীবনে আত“পরিচয়ের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল- দেশটা কেন? কাদের জন্য? এদেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? গন্তব্য কী? স্বপ্ন কী? — এর সব কিছুর উত্তর ও সমাধান তিনি তাঁর রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদের মধ্যে সংস্থাপন করেন। ফলে বাংলাদেশ বিভেদ ও হানাহানির বাইরে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি তৈরির জন্য একটা সুনির্দিষ্ট পাটাতন লাভ করে। শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনেই আমাদের জাতিসত্ত্বার সঠিক স্বরূপটি আবিস্কৃত হয়, যা আমাদের ভৌগলিক জাতিসত্ত্বার সুনির্দিষ্ট পরিচয় দান করে। বিশ্ব মানচিত্রে আমাদের আতত্মপরিচয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদের দর্শন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখারও সাহসী অঙ্গীকার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়াউর রহমানের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী ১৯ জানুয়ারি । ১৯৩৬ সালের এই দিনে তিনি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের পিতার নাম মনসুর রহমান। তিনি পেশায় ছিলেন একজন রসায়নবিদ। একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও তাঁর জীবনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের সকল সঙ্কটে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বার বার অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করেছেন। অস্ত্র হাতে নিয়ে নিজে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে আবার পেশাদার সৈনিক জীবনে ফিরে গেছেন। জিয়াউর রহমান সময়ের প্রয়োজনেই চার দশক আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি। তাঁর গড়া সে রাজনৈতিক দল তার সহধর্মিণী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আজ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। আর বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতৃত্বে পরিণত হয়েছেন। বেগম জিয়ার সাময়িক অনুপস্থিতিতে বিএনপিকে আরো শাণিত ও সংগঠিত করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন শহীদ জিয়ার উত্তরাধিকার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের এ সময়ের অগ্রপথিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসীকতা, সততা-নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান দেশের জন্য অসামান্য। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সাথে তিনি যুদ্ধ করেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমাণ্ডার হিসেবে সম্মুখ সমরে সশস্র যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের বিশ্ব মানচিত্রে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে। জাতির মর্যাদাকেও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত করেছেন তাঁর শাসনামলে। জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে এখনো স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি সর্বজনবিদিত। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিক-নির্দেশনা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি দেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সর্বাধিক সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তাঁরই (শেখ মুজিব) সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান নেতৃত্বের হাল ধরেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার কার্যকরী উদ্যোগের পাশাপাশি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনেন শৃঙ্খলা ও ঐক্য। বিশ্ব মানচিত্রে একটি মর্যাদাবান জাতির উত্থানে গোটা জাতির মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছিলেন। তাঁর স্বত্তকালীন শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি যে গভীর দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। শুধু দেশে নয়, ইরাক-ইরান যুদ্ধসহ মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের নানা সঙ্কটে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এমনকি তার রাজনৈতিক বিরোধীরাও মৃত্যুর পর তাঁর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ কারণেই এ দেশের সর্বচ্চরের জনগণের অন্তরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।
দুই.
বিএনপি’র জনসমর্থন নিয়ে তার নিন্দুকেরাও দ্বিমত পোষণ করবে না। শহীদ জিয়ার জনপ্রিয়তা, মিলিটারি ও সিভিলিয়ানসহ প্রতিটি সেক্টরে তাঁর দূরদর্শী চিন্তা-চেতনা সর্বোপরি তাঁর বিচক্ষণ রাজনীতি চার দশক পরে এসে আরো শাণিত ও যুগোপযোগী হিসেবে সকলের কাছে সমাদৃত। শহীদ জিয়ার শাহাদাতের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া একমাত্র নেত্রী যিনি বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনে পাঁচটি করে আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিবারই নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি’র আদর্শ কালজয়ী আদর্শ ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তাই যদি না হতো, সেই ১৯৭৮ সাল থেকে আজ অবধি আপামর মানুষের সমর্থনে এতটুকু চিড় ধরেনি । দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যেও প্রতিটি নেতা কর্মী রয়েছেন অবিচল। তবে একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আগ্রাসী ও উগ্রবাদী শাসকদের মোকাবেলায় দলে মেধাবী, সাহসী ও চৌকস তরুণদের জায়গা করে দিতে হবে। মেধাহীন, বাকসর্বস্ব রাজনীতির বিপরীতে মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কার্যকরী উদ্যোগ ও পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দেশের জনগণের সামনে তুলে ধরা আজ সময়ের দাবি। একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে, গোটা বিশ্বের মধ্যে জনসমর্থনের দিক থেকে এগিয়ে থেকেও প্রগতিশীল মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে রয়েছে একটিমাত্র দল তার নাম বিএনপি। জনসমর্থনের বাইরের অন্যান্য কিছু সেক্টর বা ফ্যাক্টর যা রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে অথবা ঠিকে থাকতে সহায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে। সেদিকে বোধ করি বিএনপিকে আরো একটু নজর দেয়া জরুরি। দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি সেক্টরে বিএনপি’র অসংখ্য শুভাকাঙক্ষী, গুণগ্রাহীরা রয়েছেন কিন্তু কেন জানি সংগঠিত করার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যায়, খুব সুচতুরভাবে একটি মিথ সৃষ্টি করা হয়েছে যে, বিএনপি সব সময় এন্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্ট নিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে এবং রাজনীতিতে ঠিকে আছে। তবে আমরা অনেকেই ভুলে যাই যে, বিএনপি যদি শুধু এন্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্টের উপর ভর করে ঠিকে থাকতো তাহলে বিএনপিকে কপি করে গড়ে উঠা এরশাদ সাহেবের পার্টিও সেই জায়গা দখল করে নিতে পারতো। বিশ্ব রাজনীতি বিশেষ করে মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশসমূহের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে চার দশক পূর্বে ঘোষিত শহীদ জিয়ার রাজনীতি ছিল কতটা বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ।
ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর রাজনীতির ভিতকে শক্ত করে দাঁড় করিয়ে একটি আত“সম্মানবোধসম্পন্ন জাতি গঠনের রাজনীতির প্রবক্তা শহীদ জিয়া। শুধু নেগেটিভ ভোটের উপর দাঁড়িয়ে কোনো দল এতো জনসমর্থন ধরে রাখতে পারে না। তাই বিএনপি’র কালজয়ী আদর্শ বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও অতুলনীয়। তবে সময়ের সাথে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি পরিবর্তিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাজনীতির গতি প্রকৃতিকে পরিবর্তনের খাতিরে আপামর জনসাধারণের আকাঙক্ষার বিপরীতে রাজনীতির গতিকেও সমর্থন করবে না। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ উগ্রপন্থাকে কখনো সমর্থন করে নাই কিন্তু অধিকার আদায়ের আন্দোলনে কখনো পরাজিত হয় নাই। শুধু প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সংগঠিত করে আতত্মমর্যাদার লড়াইয়ে জাগ্রত করা। শহীদ জিয়ার জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকীতে শুধু তাঁর সততা, বিচক্ষণতা ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ শাসনের দূরদর্শিতা নিয়ে আলোচনা করলেই তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে না। এই আলোচনা তখনই সফল হবে যখন দলের নেতাকর্মীরা দেশপ্রেম ও আতত্মত্যাগের মহিমায় বলীয়ান হয়ে জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করবে। এই প্রত্যয় ছাড়া নিঃষ্ফল আলোচনা কোনো দেশ ও জাতিকে প্রেরণা জোগাতে পারে না।
শহীদ জিয়ার সেই আদর্শ রূপায়ণের পথে কতটুকু কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার আত“সমালোচনাও জরুরি। সুবিধাবাদী ও বাকসর্বস্ব রাজনীতিতে রাতারাতি সমর্থকদের ভিড় জমে। কারণ অনেকের কাছে রাজনীতি হয়ে গিয়েছে নাম ফাটানো আর ক্লাবভিত্তিক আড্ডা ও নিজেদের ফলোয়ার নিয়ে শোডাউনের হাতিয়ার। কেউ কেউ যেনতেন উপায়ে টুপাইস কমিয়ে … চলো এখন রাজনীতিতে গিয়ে দেশ ও জাতি উদ্ধারের নামে নিজের ঢোল পেঠাই। সুবিধাজনক স্থানে ক্লিক করে গেলে এখানেও টাকা কমানোর মেশিনের সন্ধান মেলে। সরকরি দল হলেতো আর কথাই নেই। বড় বিরোধী দলেও সাধারণ নেতাকর্মীদের দুর্দিনে কারো কারো পৌষ মাস চলে। এটার নাম রাজনীতি নয়, তাহলো সিম্পলি ধান্দাবাজি আর সাবেক প্রধান বচারপতি হাবিবুর রহমানের ভাষায় বাজিগরি (’বাজিগরদের কবলে আজ দেশ ও রাজনীতি’)।
শত শত সুবিধাবাদী বাজিকরদের চাইতে দশজন নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক কর্মী দলকে শতগুন এগিয়ে নিতে পারে। শহীদ জিয়া এ ধরণের লোকগুলোকে খোঁজে খোঁজে বের করতে পেরেছিলেন বলেই এই দলটি মহীরূপে এখনো টিকে আছে। দেশের কোটি কোটি লোক শহীদ জিয়াকে এখনও শ্রদ্ধার সাথে তাঁকে স্মরণ করছে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সামলাতে দলকে এ বিষয়ে আরো নজর দিতে হবে। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্বে লড়াই করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নিবেদিত ও নিষ্ঠাবান নেতা-কর্মীর বিকত্ত নেই। তবে মধ্যস্বত্বভোগী নামে একটা গোষ্ঠী যাতে দলে কখনোই মাথা ছাড়া দিতে না পারে তার দিকে খেয়াল রাখা উচিত। সুশীল, বুদ্বিভিত্তিক সর্বোপরি মিডিয়া জগতের সৃষ্টিশীল মানুষ যারা বিএনপি নামক বট গাছে মাঝে মধ্যে একটু পানি ঢালবেন তাদেরকে আস্থায় রেখে উৎসাহিত করতে আরো কিছুটা কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
একটি বৃহৎ দলে বিভিন্ন স্বার্থবাদী, মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্ঠা করতেই পারে। মেধাহীন, বাককসর্বস্ব ও বাগাড়ম্বর রাজনীতির বিপরীতে কর্মসূচিভিত্তিক, গণমূখী এবং মেধার রাজনীতির বিকাশ। দলীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রাতিষ্টানিকরণের মাধ্যমে এদের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। আর এতে করেই দখলদার স্বৈরাচার তথা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্বে সম্ভব সর্বাম্নক জাগরণী আন্দোলন গড়ে তোলা। তিন. সম্প্রতি বিশিষ্ট দার্শনিক, গবেষক ও সমাজ চিন্তক প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান একটি টকশোতে বলেন, আওয়ামী লীগকে জবাবদিহিতার আওতায় রাখার জন্য আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্বে শক্তিশালী বিরোধী পক্ষের রাজনীতি নাই। এটা আওয়ামী লীগের জন্যও সুখকর নয়। দেহের যদি একটি অঙ্গ অসুস্থ থাকে তখন আরেকটি অঙ্গ সুস্থ থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় এসেছিলো ১৯৭৫ সালে। সেই বিপর্যয় কি ভেতর থেকে এসেছিলো, নাকি বাইরে থেকে? বাইরের যতই ইন্দন থাকুক, ভেতরের সহায়তা ছাড়া এটি হয় নি। আওয়ামী লীগ আরেকবার সেই একই বিপদে পড়ুক আমরা কেউ যেহেতু সেটি চাই না, তাই মনে করি দেশে একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি, নিয়মতান্ত্রিক বিরোধী দল তথা বিরোধী পক্ষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আওয়ামী লীগের নিজের স্বার্থেই সুযোগ করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে তিনি বাংলাদেশের সিম্পটম উল্লেখ করে বলেন, নেতৃত্ব পরিবর্তনের ক্ষমতা নেতাকর্মীদের নেই। দেশের মানুষের ভোট দেয়ার ক্ষমতা নেই। দলের নেতাদের কাউন্সিলে ভোট দেয়ার ক্ষমতা নেই। এই যে, সাড়ে সাত হাজারের মতো কাউন্সিলার এসে একটা নির্বাচন করলেন, তারা কি সত্যিকারের কোনো নির্বাচন করলেন? নাকি তারা নির্বাচনের মধ্যে একটা রাবার স্ট্যাম্প দিলেন। আমরা যে, রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্টের কথা বলি, এটা হলো রাবার স্ট্যাম্প কাউন্সিল। এই সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ যদি মুক্তি না পায় তাহলে সিম্পটম থেকে মুক্তি পাবে না। এ জন্য বলি আওয়ামী লীগ হচ্ছে গোটা বাংলাদেশের অসুখের একটা লক্ষণ বা আলামত। তাই মাঝে মধ্যে আলামত দূর করার কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও আসল রোগ সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় আমাদের যে জাতীয় অঙ্গীকারগুলো ছিল তা আজ সুদূর পরাহত। আগে যারা আত“স্বার্থ ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থের জন্য লড়াই করেছেন, তাদের জায়গায় এখন আম্নস্বার্থ কায়েমকারীরা জায়গা করে নিয়েছে।
জাতীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলসমূহ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতা ফিরিয়ে আনতে হবে। রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন আওয়ামী লীগের উচিত হবে দেশের সিনিয়র সিটিজেন বয়োবৃদ্ব বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অনতিবিলম্বে তাঁর চিকিৎসার জন্য হলেও জামিনে মুক্তি দিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতির ইতি টানা। গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার বিপরীতে মুক্তিযুদ্বের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে প্রয়োজন জনগণের সরকার। এর মাধ্যমে আমরা পেতে পারি একটি মর্যাদাবান দেশের নাগরিকের সম্মান। তাই বাংলাদেশের মর্যাদাবান উত্থানে সকলকে স্ব স্ব স্থানে ভূমিকা রাখা জরুরি। মর্যাদাবান নাগরিকরা উচ্ছিষ্টভোগী হতে চান না, আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার ও সুযোগ চান।
শহীদ জিয়া তাঁর শাসনকালের স্বত্ততম সময়ে সেই শিক্ষায় দীক্ষিত করে গিয়েছেন। তাই বর্তমান বাস্তবতায় শুধু বক্তৃতা বিবৃতিতে শহীদ জিয়াকে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রয়োজন তার অনুস্মরণ। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে আসীন করুন, আমিন। ১৯ জানুয়ারী ২০২০, লণ্ডন।