সাকিব আল হাসানের কাছে খোলা চিঠি

মন্তব্যকথা:

।। শামসুল আলম লিটন ।।
সাকিব আল হাসান। বিশ্ব পরিসরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেলিব্রেটি। আর সকল বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও এ সম্পর্কে কোন বিতর্ক থাকার আপাতত কোনো সুযোগ নেই। আইসিসির সর্বশেষ ডিসিপ্লিনারি ব্যবস্থার পরেও তার জনপ্রিয়তায় এতটুকু দাগ কাটেনি, বরং সহানুভূতি আরো বেড়েছে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি। সেই বিশ্ব বাঙালি সেলিব্রেটি সাকিবের বাসায় নিজ হাতে রান্না করা খাবার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা চলতি সপ্তাহের টক অব দ্য কান্ট্রি। এখবর নানা আঙ্গিকে গুরুত্বপূর্ণ। খবরটি জন্ম দিয়েছে অনেক আলোচনা এবং সমালোচনার। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা বলে অনেক কিছুই করতে পারেন। কিন্তু জনপ্রিয় সেলিব্রেটি ক্রীড়াবিদ সাকিব দল-মত-নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে বিপুলভাবে জনপ্রিয়। সমগ্র জাতির নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও জনপ্রিয়তার দায়বদ্ধতা এড়িয়ে এড়িয়ে কিছু প্রশ্ন কে পাস করতে পারেন না। সে সব প্রশ্ন নিয়েই আমার এই কলাম।
প্রধানমন্ত্রী মিডিয়াতে বলেছেন, তাঁর গণভবনে পেঁয়াজ দিয়ে রান্না হয় না, তাঁর বাবুর্চিকে পেঁয়াজ বাদ দিতে বলেছেন। কথাটা বাংলায় বলেননি, বিজাতীয় ভাষা উর্দু কাছাকাছি হিন্দিতে বলেছেন।
তোমাকে তিনি নিজ হাতে যে রান্না পাঠিয়েছেন তাতে তো গোশতের পাত্রে প্রচুর ভুনা পেঁয়াজ দেখলাম। এই রান্না খেয়ে এবং দেখে অভিভূত হবার সময় এদেশের না খাওয়া ভুখা আমজনতার কথা কি তোমার একবারও মনে পড়েনি?
তোমার দেয়া ছবিতে প্রচুর মিষ্টান্ন দ্রব্য দেখলাম। তুমি দাবি করেছো, এগুলো প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে রান্না (তৈরি) করেছেন। যে কেউ বলবে এই মিষ্টান্ন দ্রব্যগুলো প্রফেশনাল কারিগরদের হাতের বানানো। ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে জোর করে ক্ষমতার চেয়ার আঁকড়ে থাকা অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সাধ্য নেই এরকম উন্নত মানের মিষ্টি তৈরি করা। তাহলে কেন এই মিথ্যাচার?
তুমি কি বুঝতে পারছো না, তোমার অপরিসীম জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে তিনি তরুণ সমাজের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন, যারা তোমাকে আইডল মানে। কয়েকটা মিষ্টি আর ২ কেজি ভুনা মাংসের লোভে তুমি একটা ক্ষমতালোভী স্বৈরাচারিনীকে প্রমোট করে যাবে? এই দেশের প্রতি কি তোমার কোনো দায় নেই?
চোখ খুলে দেখো দু’বছর আগেও মাশরাফিকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের এক নম্বর আইডল মানত। তোমার অবস্থান ছিল ঠিক তারপরে। কিন্তু মাশরাফি বিনা ভোটে এমপি হবার পরে তার খেলাও গেছে, জনপ্রিয়তাও গেছে। জনগণের অভিশাপে অভিশপ্ত মাশরাফি এখন এক সমালোচিত নাম। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ তাকে এখন আওয়ামী লীগের একজন নিম্নমানের দালাল ছাড়া আর কিছু মনে করে না। তুমিও কি জেনে শুনে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চাও?
মনে রেখো, এই স্বৈরাচারী নিয়ে তাবেদার র্যাব-পুলিশ রাক্ষসেরা যাদেরকে রাতের আঁধারে নিয়ে মেরে ফেলে তারা মৃত্যুর আগ মুহূর্তে আল্লাহর কাছে এদের উপর অভিশাপ দিয়ে যায় আর ধ্বংস কামনা করে। এই অভিশাপ আর বদদোয়ার ভাগীদার হবার তোমার কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে? তোমার কি নেই? টাকা-পয়সা সম্মান, সুন্দর পরিবার, গাড়ি বাড়ি, দুনিয়া ব্যাপী পরিচিতি? তাহলে কিসের আশায় তুমি একজন স্বৈরাচারী একনায়ককে, অনেকে আজকাল যাকে ফ্যাসিবাদ বলেও সঙ্ঘায়িত করছে; প্রমোট করে যাচ্ছ? তুমি নিশ্চয়ই চাও না, তোমার পরিবার পরিজন বিশেষ করে প্রিয়তমা স্ত্রী শিশির আর আদরের কন্যা আলাইনার বর্তমান ও ভবিষ্যত কোনভাবেই নির্যাতিত নিপীড়িত ও সংক্ষুব্ধ মানুষের দীর্ঘশ্বাস আর অভিশাপ স্পর্শ করুক?
তোমার বয়সী আরেক জন তরুণের কাণ্ড দেখো। তার নাম নুরুল হক নুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু’র ভিপি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ খ্যাত ডাকসু দেশের অন্যতম প্রধান মর্যাদার প্রতিষ্ঠান। সংসদের পরেই নির্বাচিত সকল পদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানিত এই পদ, যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। সে কিন্তু তোমার মত সরকারের দালালি করছে না, অথচ তোমার ধন সম্পদ এর লক্ষ ভাগের এক ভাগও তার নেই। তার কোন চাকরি নেই, ঢাকায় কোনো বাড়ি নেই, কোনো গাড়ি নেই, কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। কোনো রাজনৈতিক মুরুব্বীও নেই। বাসায় একটা বুয়া রাখার সামর্থ্য নেই। সারাদিন আন্দোলন করে রাত দুপুরে একা একা নিজে রান্না করে খায়।
অথচ দেখো তার মনোবল, দেখো তার সাহস — সে আপন বিবেককে ছাড়া করেনা কাহারে কুর্ণিশ। তার চির উন্নত মম শির। তাকে দেখো আর নিজেকে দেখো। নুরুল হক নুর কোথায়, আর তুমি কোথায়?
কি করে তুমি ভুলে গেলে তোমার স্ত্রী শিশিরকে গ্যালারিতে এক আওয়ামী এমপির ছেলে গায়ে হাত তুলে অপমান করেছিল? আওয়ামী এমপি পাপন তোমাকে নির্দয়ভাবে অপমান করেছিল? জাতীয় দল থেকে বের করে দিয়েছিল? তুমি নিজের পারফরম্যান্স দ্বারাই বিশ্বব্যাপী সম্মানিত হয়েছো, আওয়ামী লীগের কাছে তোমার কি সম্মান দরকার?
মনে রেখো আওয়ামী লীগ কোনদিন কাউকে সম্মানিত করতে জানেনা। শুধু ব্যবহার করতে জানে। তারপর স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে ব্যবহৃত জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মতো ছুড়ে ফেলে দেয়।
এই দেশের কোনো সম্মানিত লোককে আওয়ামী লীগ অপমান করে নাই? সেই তাজউদ্দীন থেকে ড. কামাল, ড. কামাল থেকে সুলতান মনসুর – তাদের নিজেদের লোকদেরকেই তো তারা সময় অসময় অপমান করে। শান্তিতে নোবেলজয়ী ডক্টর ইউনুসকে চরমভাবে লাঞ্চিত করে উপভোগ করেছে বিকৃত আনন্দ। তুমি কি তাদের হাতে চরমভাবে অপমানিত হবার জন্য অপেক্ষা করছো?