ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক শামসুল আলম চৌধুরী আর নেই
যুদ্ধের খবর প্রথম বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন আইটিভি’র সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে
।। শামসুল আলম লিটন ।।
লণ্ডন, ৩ সেপ্টম্বর – ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী ও বাংলাদেশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম চৌধুরীর আর আমাদের মাঝে নেই. তিনি ১ সেপ্টম্বর, শনিবার দিবাগত রাতে লণ্ডনে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে…. রাজেউন)। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শামসুল আলম চৌধুরী গত পাঁচ দশকে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ কমিউনিটিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তিনি বিলাতে আসেন ১৯৬৫ সালে। দেশে যুদ্ধের দামামা বাজার কঠিন দিনগুলিতে তিনি ঢাকায় ছিলেন। মার্চের শেষ দিনগুলিতে যুদ্ধ শুরুর পরপরই তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন এবং সরাসরি লন্ডনে এসে আই টিভি’তে প্রথম সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে যুদ্ধের খবর বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। মরহুম শামসুল আলম চৌধুরী দেশে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায়ও বঙ্গবন্ধুর সাহচর্য্য লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. কে এম আব্দুল মালিক বলেন, তিনি বিলাতে এসে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ১ অথবা ২ তারিখে আইটিভি ‘র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রথম তাঁর নিজ চোখে দেখা নিরস্র বাঙালির উপর পাকিস্তানী বাহিনীর হামলার বিবরণ তুলে ধরেন। সেটাই ছিলো কোনো প্রত্যক্ষদর্শী’র চোখে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দৃশ্যপট।
ইউরোপ আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ গনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতেশামসুল আলম চৌধুরীর অসামান্য অবদান অস্বীকার করা যাবে না। বিচারপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী’র পেমব্রিজ গার্ডেনের অফিসে শামসুল আলম চৌধুরী অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি ষাটের দশক থেকেই দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এম এ গনি বলেন, আমি ছিলাম তখন বার্মিংহাম অ্যাকশন কমিটির চেয়ার। যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধু লন্ডন এলে ক্লারিজ হোটেলে বাঙালিদের মধ্যে আমার সঙ্গে মাত্র ২/৩ জন বাঙালি ছিলেন। এরমধ্যে শামসুল আলম চৌধুরী ও মহিউদ্দিন চৌধুরী(পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা) ছিলেন।
বিলাতে বাঙালীর ইতিহাসে শামসুল আলম চৌধুরী এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের নাম। বাংলাদেশের রাজনীতি , স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে তিনি ছিলেন আমৃত্যু সোচ্চার। এছাড়া কমুনিটির উন্নয়ন ও সমাজ সেবার অঙ্গনে শামসুল আলম চৌধুরীর অসামান্য অবদানের কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সন্তান শামসুল আলম চৌধুরী ১৯৭১ সালে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ১৯৭১ স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্জবিশ্বব্যাপী জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঐসময় তিনি কভেন্ট্রিতে গঠিত ঐ কমিটির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব ছাড়াও স্টুডেন্ট একশন কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে অসামান্য অবদানের জন্য গত বছর লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব ও ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেন্টারের পক্ষ থেকে প্রয়াত শামসুল আলম চৌধুরীকে সম্মাননা জানানো হয়।
শামসুল আলম চৌধুরী শনিবার দিবাগত রাত ২টায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।