আসাম এনআরসি: বাংলাদেশ বিরোধী হিন্দুত্ববাদী প্রপাগাণ্ডার মুখে চপেটাঘাত

মুক্তকথা: নুরুন নবী
বাংলাদেশ থেইকা আসামে মুসলমানদের পাঠিয়ে আসামকে মুসলিম মেজরিটি রাজ্য বানানোর কাজ চলতেছে। হিন্দুত্ববাদীরা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা আসামকে দ্বিতীয় কাশ্মীরও বলে থাকে। তাদের ভাষ্যমতে ১ কোটি অবৈধ বাংলাদেশী মুসলিম আছে আসামে। অন্যদিকে ট্রাইবালদের প্রচারণা ছিল আসামকে বাঙ্গালী মেজরিটি রাজ্য বানানোর কাজ চলতেছে। তারপর NRC করা হলো। খসড়া তালিকা করে বলা হলো ৪০ লাখ অবৈধ লোক আছে আসামে আর অবৈধ মানেই বাংলাদেশী। ১ কোটি থেকে অবৈধের সংখ্যা ৪০ লাখে নেমে আসলো। তারপর চুড়ান্ত তালিকায় বলা হচ্ছে অবৈধ আসলে ৪০ লাখ না, সংখ্যাটা আসলে ১৯ লাখ। এখন দেখা যাচ্ছে ১৯ লাখের মধ্যে ৪ লাখ লোক আপীল করেনি; অর্থ্যাৎ এই ৪ লাখ লোক পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গ-বিহার-ত্রিপুরা এসব এলাকার লোক, NRC তে নাম না আসাতে তারা আর আপীলের ঝামেলায় যেতে রাজী নয়, তারা নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে যাবে। তাহলে বিষয়টা হচ্ছে সংখ্যাটা মুলত ১৫ লাখ।
এই ১৫ লাখের লোকের মধ্যে ৫-৬ লাখ বাঙ্গালী হিন্দু আছে এমন যাদের কাছে শরনার্থী সার্টিফিকেট থাকার পরও এনআরসি কতৃপক্ষ সেটা গ্রহন করেনি কিন্তু আপীল করলে শরনার্থী সার্টিফিকেট গ্রহন করা হবে বলে আসামের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন।
আর বাকী থাকতেছে ৯/১০ লাখ লোক। এর মধ্যে ৫/৬ লাখ
বাঙ্গালী মুসলমান। মুসলমানরা ইন্টারনাল জরিপ করে নিশ্চিত হয়েছেন যে তাদের
মধ্যে একজনও বহিরাগত মুসলমান নাই, তবে বন্যদুর্গত এলাকার বাসিন্দা, নদী
ভাঙ্গনের কবলে পরা বাসিন্দাসহ অনেক দরিদ্র এবং পড়াশুনা না জানা মুসলমান
আছেন যাদের ডকুমেন্ট হারিয়ে গেছে কিংবা ভুল ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন, এসব লোক
একটু সাপোর্ট পেলে তারা নিজেদেরকে
বহিরাগত তকমা থেকে উদ্ধার করতে পারবেন।
আর বাকী থাকতেছে ৩/৪ লাখ লোক। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ হইতেছে এমন যাদের পরিবারের অন্য কোন সদস্যের নাম NRC তে এসেছে। এখন পরিবারের অন্য কোন সদস্য যদি আসামের স্থানীয় প্রমানিত হন তাহলে তিনিও আসামের স্থানীয় বাসিন্দা। তাহলে ফলাফলটা কি দাড়াইল? শুধুই বাংলাদেশ বিদ্বেষ! বিদ্বেষ থেকে নানা মিথ্যা প্রচারনা। মিথ্যা প্রচারনা থেকে নানা মিথের জন্ম। মিথ থেকে আতংকের তৈরি-আতংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এনআরসি। এনআরসি থেকে হিন্দুত্বের মুখে বিশাল এক চপেটাঘাত!
(মূলধারার সৌজনে্য ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯)