দিনে ৩ বার ফেইসবুক টুইটার: তরুণদের কম ঘুম এবং বিষন্নতার কারণ
সুরমা রিপোর্ট
লণ্ডন ১৫ আগষ্ট ২০১৯; বিলাতের ১৩ হাজার কিশোরীর সাক্ষাতকার নিয়ে তৈরি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য সংগ্রহ করেছেন ১ হাজারের বেশি স্কুল থেকে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লণ্ডনের পক্ষ থেকে পরিচালিত এ গবেষণায় জানা গেছে, ২০১৩ সালে ৪৩ শতাংশ কিশোর ও ৫১ শতাংশ কিশোরী দিনে একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৬৯ ও ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অন্তত ৩ বার ব্যবহার করেন এমন কিশোরীদের ঘুম কম হয়, বিষন্নতায় ভোগে, শরীর চর্চা থেকে দূরে থাকে এবং সাইবার হুমকিতে আক্রান্ত হয়। এসব কারণেই তারা প্রচণ্ড মানসিক অশান্তিতে ভোগে। গবেষকরা বলছেন, ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা আদতে এধরনের মাধ্যমের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পরিণতিতে এসব তরুণ জীবনে স্বস্তি হারাতে থাকে। অন্তত ৬০ শতাংশ কিশোরী এসব বিষয় স্বীকার করেছে। তবে কিশোরদের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এধরনের সমস্যা তৈরি করে না এবং এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা সম্ভব হয়নি। সূত্র ডেইলি মেইল
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন এমন কিশোরীদের দুশ্চিন্তা যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে না তাদের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। তবে কিশোররাও ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে যেয়ে আক্রান্ত হয়। তবে কিশোরীদের মত অতটা নয়। গবেষকরা নিশ্চিত যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিশোরীদের জন্যে মানসিক অশান্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষক দলের প্রধান প্রফেসর রাসেল ভাইনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোনো ক্ষতির কারণ নয় বরং তা ব্যবহারের ধরন এধরনের ক্ষতির কারণ সৃষ্টি করে। গবেষকরা এও বলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘনঘন ব্যবহার করার পাশাপাশি তার ধরন অনেক সময় এমন এক প্রক্রিয়ায় মানুষকে ধাবিত করে যা তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বৃটেনের প্রখ্যাত মানসিক বিশেষজ্ঞ ডা: লিন্ডা প্যাপাডপোউলাস এর মতে, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বর্তমান সময়ে তরুণদের জীবনের অংশ হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর অতিরিক্তি ব্যবহার তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর প্রধান প্রধান বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন, অশান্তি, একাকীত্ব, ঘুম কমে যাওয়া, মানুষের সাথে ব্যবহারে ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশী অভিভাবক বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে ইমো, ফেইসবুক, টুইটার, ওয়াটসাপ, ইনস্টগ্রাম ব্যবহারের প্রবণতা বৃটেনে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশী তরুণদের মতোই। এর ফলে তাদের মানসিক যন্ত্রণা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং লেখাপড়া বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হওয়ার আগে এটা মা-বাবা বা অভিবাবকদের চোখে ধরা পড়েনা।
ওপর এক সমাজকর্মীর মতে, ছেলেমেয়ের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ব্যাপারে অভিভাবকরা সচেতন না হলে বাংলাদেশী তরুণ-তরূণীরা একসময় জনসংযোগকে ভীতির চোখে দেখবে যা তাদের ভবিষ্যত জীবনে উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।